এ ভাবেই ফাটল ধরে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে ১২ নম্বর মদন দত্ত লেনের বাড়িটি। নিজস্ব চিত্র।
কেউ পাঁচ দশক ধরে মদন দত্ত লেনের বাসিন্দা, কেউ সাত দশক ধরে রয়েছেন। কারও ব্যবসার প্রাণভোমরা রাখা আছে ফাটল ধরা বাড়িতেই। কেউ আবার অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে পড়েছেন অথৈ জলে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে বৌবাজারের কয়েকটি বাড়িতে আবার ফাটল দেখা দিতে একরাশ অনিশ্চয়তায় এলাকার মানুষ।
সঞ্জয় সাউ বিহার থেকে বৌবাজারে এসেছিলেন আটচল্লিশ বছর আগে। তার পর থেকেই মদন দত্ত লেনের বারো নম্বর বাড়ির বাসিন্দা তিনি। দোতলা বাড়িটায় কুড়ি জন ভাড়াটিয়ার সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে থাকা। তবু গত পাঁচ দশক ধরে দিন রাতের পরিশ্রমের পর এই বাড়ির ঘরখানাই ছিল তাঁর আশ্রয়স্থল। শুক্রবার ভোররাতে সেই বাড়ির ছাদে চওড়া ফাটল ধরেছে। সঞ্জয় এবং তাঁর মতো এই বাড়ির বাকি বাসিন্দারা জানতে চাইছেন, এ বার কোথায় যাবেন তাঁরা। তবে কি আটচল্লিশ বছরের পুরনো আশ্রয় ছেড়ে পথেই
বস্তার ব্যবসায়ী সঞ্জয়। দু’পুরুষ ধরে এই ব্যবসা করে আসছেন বিহারের এই বাসিন্দা। তাঁর বাবাও বৌবাজারে এই বারো নম্বর মদন দত্ত লেনের বাড়িতেই ছিলেন। এখানে থেকেই ব্যবসা সামলেছিলেন। শুক্রবারের ঘটনার পর সেই বাড়ি খালি করে দিতে বলা হয়েছে সঞ্জয় এবং তাঁর মতো বাড়ির অন্য বাসিন্দাদেরও। বাড়ির নীচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সঞ্জয়দের প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো নয় চলে যাব! কিন্তু ব্যবসার কী হবে? ব্যবসার জিনিসপত্র সরাব কী ভাবে? তবে কি দু’পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দেব?’’
কিছুটা একই রকম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন লোরেটো কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমন সিংহ। বাবা অসুস্থ। তাঁর ওষুধপত্র, প্রেসক্রিপশন সব বাড়িতে ছেড়ে আচমকাই চলে আসতে হয়েছে হোটেলে। এখানে আপাতত তাদের অস্থায়ী আস্তানা হলেও সুমনের মায়ের চিন্তা বাড়িটার কী হবে!
১০৭ নম্বর মদন দত্ত লেনের বাসিন্দা ছিলেন সুমনেরা। বাড়িতে রোজগেরে বলতে তেমন কেউ নেই। তাঁরা উত্তরপ্রদেশের মানুষ। সেখানে কিছু জমিজমা আছে। ছেড়ে আসা বাড়িতে ফেলে আসতে হয়েছে অনেক কিছুই। এমনকি সুমনের পড়াশোনার বইপত্রও। বাড়ি ভাঙা হলে কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে পরিবারটি।
শুক্রবার ভোররাতে বৌবাজারের মদন দত্ত লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দেয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছিল এলাকায়। এর আগে এই রাস্তার লাগোয়া বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনেও বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছিল। শুক্রবারের ঘটনার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তার পর মেট্রোর আধিকারিকরা এসে পৌঁছলে তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আক্রান্ত বাড়ির বাসিন্দাদের
কিন্তু মাথার উপর থেকে ছাদ সরে যাওয়ায় এখন সঞ্জয়দের প্রশ্ন, ‘‘মেট্রো এখন কোথায় নিয়ে যাবে জানা নেই। যদি বৌবাজার ছেড়ে অন্যত্র নিয়ে যায় তবে ব্যবসা চালাব কী করে?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তবে কি দু’পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে অস্থায়ী ঝাঁকা নিয়ে এ বার পথে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে হবে?’’ বাড়ি খালি করে দিতে বলেন। সঞ্জয়, সুমনদের বাড়িগুলিও ছিল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির মধ্যে। তড়িঘড়ি ঘর ছেড়ে পথে নামতে হয় তাঁদের। থাকতে হবে তাঁদের?
শুক্রবার মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা পরিদর্শন করে দেখে পরিস্থিতি বিচার করে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতটা তা-ও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘১০০ বর্গ ফুট পর্যন্ত ক্ষতিতে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ১০০ বর্গফুটের বেশি ক্ষতিতে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন দোকানের মালিক এবং বাড়ির মালিকেরা।’’ কোন কোন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে কলকাতা মেট্রোর ওই লিখিত বিবৃতিতে। তারা জানিয়েছে, মোট ১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাড়িগুলির বাসিন্দাদের একটি তালিকা এলাকার কাউন্সিলর এবং স্থানীয় পুলিশ দেবে। ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলেও জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy