‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের কাজে যোগ দেবেন কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫০ জন শিক্ষক। ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য ওই কাজে তাঁরা নিযুক্ত থাকবেন। এ দিকে, ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা। এমনিতেই করোনার জন্য পঠনপাঠন বিঘ্নিত হওয়ায় প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যক্রমের অনেকটাই শেষ হয়নি। অভিযোগ, এই অবস্থায় শিক্ষকদের ওই প্রকল্পে সরানো হলে পুর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিপুল ক্ষতি হবে। ফলে প্রশ্নটা উঠেই আসছে, শিক্ষকের কাজ শিক্ষাদান কি তবে গৌণ হয়ে গেল?
‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের জন্য কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন বিভাগ থেকে অস্থায়ী ভাবে কর্মী নিয়োগ করে পার্সোনেল বিভাগ। পুর শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, পার্সোনেল বিভাগ সাড়ে তিনশো জন শিক্ষককে ওই কাজে লাগালে পঞ্চাশটির মতো পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। পুরসভা পরিচালিত ২৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ছ’শোর মতো।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেও পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষককে এই প্রকল্পে কাজে লাগানোয় পঠনপাঠন ও মিড-ডে মিল সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এ বছরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। দক্ষিণ কলকাতার এক শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা। ভেবেছিলাম, পুরো নভেম্বর ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করাব। কিন্তু প্রকল্পের কাজে শিক্ষকদের তুলে নেওয়া হলে পড়াবেন কে?’’
ডিসেম্বরেই পড়ুয়াদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। তখন শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের নিয়ে বিভিন্ন মাঠে প্রশিক্ষণ করান। সে কাজেও নজর দিতে পারবেন না শিক্ষকেরা। অভিযোগ, গত আড়াই বছর ধরে শিক্ষকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে কখনও সামাজিক ক্ষেত্রে, কখনও স্বাস্থ্য বিভাগে, আবার কখনও দুয়ারে সরকার প্রকল্পে কাজে লাগানোয় পুর বিদ্যালয়গুলির পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘কোভিডের সময় থেকে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ফলে পড়ুয়ারা পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়। কোভিড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তাই ধীরে ধীরে ওদের পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখার প্রক্রিয়ায় ফেরানো হচ্ছিল। কিন্তু ঘন ঘন বিভিন্ন প্রকল্পের ডাক আসায় শিক্ষাদানের কাজটাই হচ্ছে না।’’
কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘বর্তমান শাসকদলের শিক্ষার উন্নয়নে নজর নেই। পূর্বতন শিক্ষামন্ত্রী থেকে একাধিক শিক্ষাকর্তা জেলে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে পরিকাঠামোর অভাব শোচনীয়। এমনিতেই শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এই অবস্থায় পুর শিক্ষকদের যাতে দুয়ারে সরকার প্রকল্প থেকে বিরত রাখা যায়, সে বিষয়ে পুর শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকেরা মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহাকে জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্দীপন বলেন, ‘‘বিষয়টা শুনেছি। সমাধান ভাবা হচ্ছে।’’