পড়ে রয়েছে পুনর্বাসনের জন্য তৈরি হওয়া আবাসন। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্যই খরচ হয়ে গিয়েছে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা। যে তরুণ ব্যবসায়ীরা পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁরা সকলেই এখন পক্ককেশ বৃদ্ধ। কিন্তু তার পরেও উত্তর হাওড়ার জি টি রোডের উপরে সালকিয়া উড়ালপুল প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। প্রায় ৩৪ বছর আগে যে সমস্ত দোকান রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছিল, সেগুলি সময় মতো সংস্কার করতে না পারায় বর্তমানে জীর্ণ রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সালকিয়ার জি টি রোডের ধারে। আর যে সমস্ত বাসিন্দার পুনর্বাসনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে আবাসন তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’র সাক্ষী হয়ে।
উত্তর হাওড়ায় যানজট কমাতে ১৯৯০ সালে হাওড়া পুরসভা সালকিয়া উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। সেই কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন নিয়ে ২৪০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষের টালবাহানা শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। তাঁদের সংগঠন ‘সালকিয়া বিজ়নেসমেন’স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে জানা গিয়েছে, তাঁদের দাবি ছিল, এমন জায়গায় পুনর্বাসন দিতে হবে, যেখানে ব্যবসা চলবে। এর পরে হাওড়া পুরসভার হাত থেকে প্রকল্পের দায়িত্ব হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা বা এইচআইটি-র হাতে গেলেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, এইচআইটি ঢোলগোবিন্দ লেনে যে বিকল্প জমি দেখিয়েছিল, ব্যবসায়ীদের তা পছন্দ হয়নি। পুনর্বাসন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এইচআইটি-র মতপার্থক্য শুরু হওয়ায় শেষে ব্যবসায়ীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, ব্যবসায়ীদের সীতানাথ বসু লেন থেকে শ্রীরাম ঢ্যাং রোডের মধ্যে জি টি রোডের ধারেই পুনর্বাসন দিতে হবে।
ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বরুণ দে বলেন, ‘‘সেই রায়ের পরেই প্রকল্পটি ধামাচাপা পড়ে যায়। সীতানাথ বসু লেনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা ৬৪টি ফ্ল্যাট আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেএমডিএ যে সব দোকান অধিগ্রহণ করেছিল, সেগুলির মালিকানা বর্তমানে দোকান-মালিকদের হাতে নেই। তাই দোকানগুলির ভগ্নপ্রায় দশা দেখেও মেরামত করতে পারছেন না তাঁরা। যে কোনও দিন সেগুলি ভেঙে পড়ে অঘটন ঘটতে পারে।’’
কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪৯০ মিটার লম্বা, ৮.৪ মিটার চওড়া এবং ১৩.৭ মিটার উঁচু প্রস্তাবিত উড়ালপুল তৈরির জন্য প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল ৬৯ কোটি টাকা। সেই খরচ এখন বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। বাম জমানায় এই উড়ালপুলের কাজ থমকে গেলেও তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে উত্তর হাওড়ার তদানীন্তন বিধায়ক অশোক ঘোষের উদ্যোগে ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সালকিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে এসে এলাকার বাসিন্দা ও দোকানিদের পুনর্বাসন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু তার পরে নানা আইনি জটিলতায় তা আটকে যায়।
এ বিষয়ে উত্তর হাওড়ার বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা চাই, এই উড়ালপুল অবশ্যই তৈরি হোক। কিন্তু চার-পাঁচটি দোকান নিয়ে আইনি জটিলতায় তা আটকে আছে। এই উড়ালপুল তৈরি হলে উত্তর হাওড়ার মানুষের অনেক সুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy