প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আর এক জনের মৃত্যু হয়েছে জ্বরে। গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৬৬৮০ জন আক্রান্ত হওয়ায় রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৬,৭৪৩। যা ছাপিয়ে গেল ২০১৯-এর আক্রান্তের সংখ্যাকেও।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯-কে ‘আউটব্রেক’ বছর হিসাবে ধরা হত। কিন্তু শেষ কয়েক সপ্তাহে যে হারে সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তাতে আশঙ্কা ছিল যে, শীঘ্রই ২০১৯-কে টপকে যাবে চলতি বছর। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে সেটাই দেখা গেল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত চলতে থাকায় ডেঙ্গির মরসুম কবে শেষ হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, আগামী কয়েক দিনে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শহরের এক সংক্রামক রোগের চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি পুরো বন্ধ হয়ে ঠান্ডা না পড়লে সমস্যা কমবে না।’’ তাঁর মতে, ‘‘আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলেই সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা কমছে না। তাতেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।’’
গত ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ, বুধ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার এক জন করে রয়েছেন। প্রত্যেকেরই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি, উত্তর ২৪ পরগনার আরও এক জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে এনএস-১ পজ়িটিভের উল্লেখ রয়েছে।
বুধবার দুপুরে বরাহনগরের অক্ষয়কুমার মুখার্জি রোডের বাসিন্দা ডোরা মুখোপাধ্যায় (৬৪) বাড়িতেই মারা যান। তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। পরিজনেরা জানিয়েছেন, ওই প্রৌঢ়া দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ ও ডায়াবিটিসে শয্যাশায়ী ছিলেন। কয়েক দিন আগে তাঁর জ্বর হয়। এনএস-১ পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু তা করার আগেই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে শক-সহ বিভিন্ন পুরনো সমস্যা এবং এনএস-১ পজ়িটিভের কথা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহু জায়গায় আবর্জনা ও জল জমে থাকছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজেও খামতি রয়েছে। যদিও বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দিলীপনারায়ণ বসুর দাবি, ‘‘এনএস-১ পজ়িটিভ হলেই তা ডেঙ্গি বলা যায় না। ডেঙ্গির রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে।’’
১৬ অক্টোবর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নমিতা কর (৩৫)। হাসপাতালের এক কর্মীর আত্মীয়া ওই তরুণীর অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হতে থাকলেও মঙ্গলবার আচমকা অবনতি হয়। সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হলে বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। আইডি হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দিন বিকেলে ভাঙড়ের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান মোল্লা (৩৪) ডেঙ্গি নিয়ে সেখানে ভর্তি হন। অবস্থা সঙ্কটজনকই ছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই যুবক জন্ডিসেও আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ দিন ভোরে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান দেগঙ্গার রেহেনা বিবি (৩৪)। দেগঙ্গার ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই তরুণীর পরিজনেরা জানান, সোমবার তাঁর জ্বর আসে। সংজ্ঞা হারানোয় স্থানীয় বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডেঙ্গি ধরা পড়লে তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার সকালে অবস্থা সঙ্কটজনক হলে তরুণীকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পরিজনেরা তাঁকে বারাসতের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই মৃত্যু হয়।
গত এক সপ্তাহে রাজ্যে নতুন করে যত জন আক্রান্ত (৬৬৮০) হয়েছেন, সেটি তার আগের সপ্তাহের (৫৮৮০) থেকেও বেশ কিছুটা বেশি। গত এক সপ্তাহে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন উত্তর ২৪পরগনায় (১৬২৭ জন)। তার পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ (৮৩৩), হুগলি (৬৭৬), কলকাতা (৫৯৬), হাওড়া (৫৭২), দার্জিলিং (৩৪৪) ও জলপাইগুড়ি (৩২৯)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy