আহত এক বালকের মাসি। নিজস্ব চিত্র।
প্রচণ্ড গতিতে থাকা মোটরবাইকের হ্যান্ডল ছেড়ে দিয়েছিলেন চালক। কিছুটা এঁকে-বেঁকে চলার পরে সেই বাইকই প্রায় পিষে দিল তিন বালককে!
মঙ্গলবার সরস্বতী পুজোর বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানাল ইস্ট রোডে। জয় পাগড়ে নামে বছর আটেকের এক বালকের বাঁ পায়ের ঊরু থেকে পাতা পর্যন্ত কেটে ফালা হয়ে গিয়েছে। ডান পা-ও ভেঙে দু’টুকরো। বছর দশেকের আকাশ মাজির কোমর এবং ডান পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। জিতু পাসোয়ান নামে বছর এগারোর আর এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তার মাথার পিছন থেকে ঘিলু বেরিয়ে এসেছিল।
স্থানীয়েরাই আহতদের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জয়কে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জিতুকে পাঠানো হয় মল্লিকবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার জিতুর অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না কাটলে কিছুই বলা সম্ভব নয়। এ দিকে, মোটরবাইকের চালক, গোপাল দাস নামে বছর চব্বিশের যুবকও এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। পিছনে থাকা অজয় ঘোষ নামে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বাইকটিকে। বাইকে আরও এক যুবক ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করলেও পুলিশ তাঁর হদিস পায়নি বলে জানিয়েছে।
খালপাড়ের ক্যানাল ইস্ট রোডের উল্টো দিকেই ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে রয়েছে মানিকতলা থানা। ক্যানাল ইস্ট রোডের একটি স্কুলের মাঠে সরস্বতী পুজোর দুপুরে খিচুড়ি খেতে গিয়েছিল খালপাড়ের ঝুপড়ির বালকেরা। খাওয়ার পরে জয়, আকাশ, জিতুরা ঝুপড়ির দিকেই ফিরছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাদের বন্ধু দীপ পাসোয়ান বলে, ‘‘রাস্তার একেবারে ধার দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা বাইক খুব জোরে আসছে। চালক হ্যান্ডল ছেড়ে হাত উপরের দিকে তুলে রেখেছেন। আমি সরে গেলেও বাইকটা সোজা জয়কে ধাক্কা মারে। এর পরে আকাশকে প্রায় পিষে সেটা জিতুর ঘাড়ের উপরে উঠে পড়ে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরেও ঘুরতে ঘুরতে বাইকের চাকা জিতুর মাথায় লাগে। এর পরে আমি সবাইকে ডাকতে ছুটি।’’
অমিত দাস নামে আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, বাইকের চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। বাইকের চালক এবং এক আরোহীকে ধরে স্থানীয়েরা মারধর করতে শুরু করেন। অন্য আরোহী অবশ্য পালিয়ে যান। মানিকতলা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাইকের চালককে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর হাতে চোট লেগেছে। পরে বাড়ির লোকজন তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে আহতদের পরিবারের জটলা। দুর্ঘটনাস্থলের রাস্তায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও হাম্প নেই। তবে ঘটনার পরেই গার্ডরেল বসিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘চালকের চিকিৎসা শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় পুর-প্রতিনিধিকে হাম্প বসানোর জন্য অনুরোধ করা হবে।’’ জিতুর মাসি সরস্বতী যাদব এ দিন বলেন, ‘‘জিতু আমার কাছেই মানুষ। লোকের বাড়ি কাজ করে ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কিছু চাই না, ছেলেটা শুধু ফিরে আসুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy