Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Crime

শাক ও কুমড়োর আড়ালে দেহ পাচারের চেষ্টা, গ্রেফতার তিন

ধৃতদের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।

ফন্দি: এ ভাবেই ট্যাক্সির ডিকিতে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল সুজামণি গায়েনের দেহ (ইনসেটে)। শুক্রবার, প্রগতি ময়দান এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

ফন্দি: এ ভাবেই ট্যাক্সির ডিকিতে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল সুজামণি গায়েনের দেহ (ইনসেটে)। শুক্রবার, প্রগতি ময়দান এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩৩
Share: Save:

শাক-কুমড়োয় ভর্তি বস্তা। আপাতদৃষ্টিতে দেখে সন্দেহ হওয়ার কিছুই ছিল না। কিন্তু সেই বস্তার ভিতরেই মিলল এক বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ। শুক্রবার ভোরে প্রগতি ময়দান থানা এলাকার পশ্চিম চৌবাগায় একটি হলুদ ট্যাক্সির ডিকি থেকে দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পালানোর চেষ্টা করেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তিন জন। তাদের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন পশ্চিম চৌবাগা এলাকায় নাকা তল্লাশি চলছিল। থানা সূত্রের খবর, কনস্টেবল

সুকোমল জানা এবং সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রং গাড়ি তল্লাশির কাজ করছিলেন। ভোর সওয়া চারটে নাগাদ তাঁরা একটি হলুদ ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে থামান। পুলিশ জানায়, ট্যাক্সিচালক গৌরীশঙ্কর সাউ জানায়, ট্যাক্সিতে আনাজ রয়েছে। চালক ছাড়াও ট্যাক্সিতে ছিল এক মহিলা ও এক ব্যক্তি। চালক পুলিশকে জানায়, তারা তিন জনই আড়ুপোতার বাসিন্দা।

প্রথমে সন্দেহ না হলেও ডিকির জিনিসপত্র দেখে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের মনে হয়েছিল, ভিতরে ভারী কিছু রয়েছে। তাই তাঁরা চালককে ডিকি খুলতে বলেন। এর পরে ডিকি খুলতেই দেখা যায়, সাদা বস্তায় শাক-জাতীয় লতাপাতা ও কুমড়ো রয়েছে। কিন্তু সেই বস্তার ওজন দেখে সন্দেহ হওয়ায় ট্যাক্সিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। তখনই ট্যাক্সির পুরুষ যাত্রী নেমে পালানোর চেষ্টা করে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে ফেলে ডিকির বস্তা সরাতেই বেরিয়ে পড়ে এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ।

এর পরে তিন জনকেই আটক করে প্রগতি ময়দান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা জানায়, ট্যাক্সির দুই যাত্রীর নাম মলিনা মণ্ডল এবং অজয় রং। অজয় মলিনার ভাই। মৃতার নাম সুজামণি গায়েন (৬০)। তিনি সম্পর্কে মলিনার বড় মেয়ের শাশুড়ি। পুলিশি জেরার মুখে জানা যায়, দু’জনে সুজামণিকে খুন করেছে।

তদন্তকারীরা জানান, সুজামণি হরিদেবপুর থানার কবরডাঙা-কালীতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। কালীঘাটে ফুল বিক্রি করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মলিনা এবং অজয় কালীঘাট থেকে সুজামণিকে তাদের আড়ুপোতার বাড়িতে নিয়ে যায়। অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে সেখানে তারা সুজামণিকে প্রথমে লাঠি দিয়ে মারে, তার পরে তাঁর গলা টিপে খুন করে। এর পরেই তারা ঠিক করে মাঝরাতে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে সুজামণির দেহ চৌবাগার কাছে লকগেটে ফেলে আসবে।

আরও পড়ুন: ফিরিয়ে দিল তিন হাসপাতাল, মৃত্যু

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, দেহ পাচারের জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করা হয়। কেনা হয় শাক এবং কুমড়ো। বস্তার মধ্যে সুজামণির দেহ পুরে সেটি শাক এবং কুমড়ো দিয়ে ঢেকে ডিকিতে তোলা হয়।

কী কারণে সুজামণি খুন হলেন? পুলিশ সূত্রের খবর, মলিনা জেরায় জানিেয়ছে, একটি জমি নিয়ে মেয়ের সঙ্গে শাশুড়ির বিবাদ চলছিল। তাই সে ও অজয় মিলে সুজামণিকে খুন করে।

ডিসি (ইস্ট) গৌরব লাল জানান, ওই ঘটনায় মলিনার স্বামী বাবু মণ্ডলকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। মলিনার বড় মেয়ে ও জামাই, অর্থাৎ সুজামণির বৌমা ও ছেলে খুনের সঙ্গে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওই কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ার বস্তা সরিয়ে না দেখলে এই খুনের কিনারা সম্ভব হত না বলেই মনে করছে পুলিশ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় ভোরে ও সন্ধ্যায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার ভোরের ঘটনা তারই সুফল বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Arrest Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy