অনিকেত গোস্বামী।
মোটরবাইকের বেপরোয়া গতি আবার কেড়ে নিল দু’টি প্রাণ।
বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন রাজা ভট্টাচার্য (২৩) ও অনিকেত গোস্বামী (২০) নামে দুই তরুণ। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় প্রবল বেগে ছুটতে থাকা বাইকটি ধাক্কা মারে রাস্তার পাশের একটি গাছে। তাতেই মৃত্যু হয় দুই বন্ধুর।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে এ জে সি বসু রোডের হেস্টিংস মোড়ের কাছে, টার্ফ ভিউয়ের সামনে। রাজার বাড়ি খিদিরপুরের দুর্গাদাস লেনে। অনিকেত থাকতেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ সন্তোষপুরে। তিনি সফ্টওয়্যার নিয়ে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। রাজা তেমন কিছু করতেন না। মৃত দুই তরুণই তাঁদের বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান বলে পরিবার সূত্রের খবর।
রাজা ভট্টাচার্য।
পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইকটি ভবানীপুরের দিক থেকে হেস্টিংসের দিকে যাচ্ছিল। টার্ফ ভিউয়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি গাছে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। আরোহীদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। তার উপরে গতি খুব বেশি থাকায় ধাক্কার অভিঘাতে দু’জনেরই মুখ ও মাথা থেঁতলে যায়। পরে হেস্টিংস থানার পুলিশকর্মীরা তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা রাজা ও অনিকেতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নেয় ট্র্যাফিক পুলিশ। কিন্তু তাতেও যে অনেকের হুঁশ ফেরেনি, রাতের শহরে একের পর এক দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ। গত নভেম্বরে পার্ক সার্কাস এলাকায় গতির বলি হয়েছিলেন দুই যুবক। গত মাসে ইএম বাইপাসে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর ফলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। যার জেরে মৃত্যুও হয় একাধিক জনের।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে দুর্ঘটনায় পড়া মোটরবাইকটি রেসিং বাইক হিসেবে পরিচিত। সেটি চালাচ্ছিলেন রাজা। পিছনের আসনে ছিলেন অনিকেত। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পরে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে মোটরবাইকটির গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের আশপাশে ছিল। যার জেরে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা হলে ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
মঙ্গলবার থানার সামনে দাঁড়িয়ে অনিকেতের বাবা অশোক গোস্বামী বলেন, ‘‘ছেলে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। রাতে ফেরার কথা ছিল। ভোরের দিকে দুর্ঘটনার খবর আসে। এসে দেখি, সব শেষ।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ছেলেকে অনেক বার বলেছিলাম, বেশি রাত করে বাড়ি না ফিরতে। কিছুই শুনল না।’’ দুর্ঘটনার পরে পুলিশ যোগাযোগ করে ওই দু’জনের বন্ধু অভিষেক সামন্তের সঙ্গে। তিনি জানান, ভবানীপুরের একটি ধাবায় তাঁদের এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি ছিল। তাতে রাজা ও অনিকেত গিয়েছিলেন। কী কী খাওয়া হয়েছে, তা ফেসবুকেও দিয়েছিলেন অনিকেত। পুলিশ জেনেছে, পার্টির পরে রাজা অনিকেতকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে ঠিক ছিল।
এ দিন রাজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ঘিরে রয়েছেন তাঁকে। এক আত্মীয় জানান, বছর দেড়েক আগে রাজার বাবা মারা যান। স্বামীকে হারানোর পরে ছেলের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রাজার মা। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘পরপর দু’টি ধাক্কা। কী ভাবে ভদ্রমহিলা সামলাবেন, জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy