Advertisement
E-Paper

‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ হয়ে গুনাগার ৬৭ লক্ষ

কলকাতা পুলিশ প্রতারিতের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি। লালবাজার জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার কাছে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ‘ট্রাই’-এর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে প্রথমে ফোন আসে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩
Share
Save

বাড়ি থেকে বেরনো তো দূর, শৌচাগারে যেতে হলেও ক্যামেরা চালু রাখতে হবে। বাইরের কারও বাড়িতে আসা নিষিদ্ধ। দুধ দিতে বা খবরের কাগজ দিতে এলেও ফিরিয়ে দিতে হবে তৎক্ষণাৎ! টানা সাত ঘণ্টা এ ভাবেই নিজের বাড়িতে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ হয়েছিলেন কলকাতার এক প্রৌঢ়া। শেষ পর্যন্ত কয়েক দফায় তাঁকে ‘মুক্তিপণ’ হিসাবে দিতে হয়েছে প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা। পরে তিনি বুঝতে পারেন, গোটাটাই সাইবার প্রতারণার ফাঁদ। তখন পুলিশের দ্বারস্থ হন পঁয়ষট্টি বছরের ওই মহিলা। তদন্তে নেমে বুধবার সকালে মুম্বই থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দু’জনকে। এ দিনই ধৃতদের ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেখানে এ নিয়ে সচেতন করেছেন, পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যেখানে লাগাতার প্রচার চালিয়ে বলা হচ্ছে, আইনে এমন কোনও ডিজিটাল গ্রেফতারির নিদান নেই, সেখানে বার বার কেন এমন প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ? সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এই ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে পা দিয়ে গোটা দেশের সাধারণ মানুষজন খুইয়েছেন ১২০ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। ‘ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল’-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে গোটা দেশে পুলিশের কাছে ডিজিটাল গ্রেফতারি নিয়ে ১৫ লক্ষেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এই রাজ্যে যা এখনও পর্যন্ত ৬৫ হাজারের কাছাকাছি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সাইবার গবেষক সন্দীপ সেনগুপ্তের দাবি, মূলত প্রলোভন এবং ভয়কে হাতিয়ার করেই সাইবার প্রতারণার এই নতুন ফাঁদ পাতা হচ্ছে।

কলকাতা পুলিশ প্রতারিতের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি। লালবাজার জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার কাছে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ‘ট্রাই’-এর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে প্রথমে ফোন আসে। তাঁকে বলা হয়, তিনি যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করছেন, সেটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ এসেছে। তাই নম্বরটি বন্ধ করিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানান, জরুরি এই নম্বরের সঙ্গে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত সমস্ত কিছু যুক্ত। তখন তাঁকে বলা হয়, নম্বরটি চালু রাখতে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে হবে। সেই সূত্রেই এর পরে দিল্লি পুলিশের সাইবার শাখার আধিকারিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ভিডিয়ো কল করেন প্রৌঢ়াকে। প্রৌঢ়ার দাবি, পুলিশের পোশাকেই ছিলেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেছিলেন, ওই নম্বরের সঙ্গে যে সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত, সেগুলি আর্থিক তছরুপের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে তাঁকে ডিজিটাল গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাড়ির বাইরে বেরোনো যাবে না। কাউকে কিছু বলা যাবে না। সর্বক্ষণ ক্যামেরার নজরদারিতে থাকতে হবে!

বাড়িতে একা থাকা প্রৌঢ়া কাউকেই বিষয়টি জানাননি। এক সময়ে মুক্তি পেতে তাঁকে ৩০ হাজার টাকা অনলাইনে পাঠাতে বলা হয়। এর পরে দফায় দফায় তাঁকে ভয় দেখিয়ে একই দিনে মোট ৬৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে প্রতারিত হয়েছেন বুঝে প্রৌঢ়া চারুমার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এ দিন সকালে মুম্বই থেকে ধনজি জগন্নাথ শিন্দে এবং বিনোদ কোন্ডিবা পওয়ার নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। লালবাজার সূত্রে খবর, প্রৌঢ়ার থেকে হাতানো টাকা জগন্নাথের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। তার সঙ্গেই যুক্ত ছিল বিনোদ। প্রথমে জগন্নাথ এবং সেই সূত্রেই বিনোদকে গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে পুলিশ কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Financial Fraud Digital Frauds arrest police investigation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}