রাহুলপ্রসাদ গন এবং কুণাল সাউ। —ফাইল চিত্র।
সন্তানের মঙ্গল কামনায় গঙ্গায় পুজো দেওয়ার নিয়ম। সেই পুজো দেওয়ার সময়েই সন্তানহারা হলেন দুই মা। আচমকা ধেয়ে আসা জোয়ারের জল দুই মায়ের কার্যত চোখের সামনে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তাঁদের সন্তানদের। শুক্রবার বিকেলে একবালপুরের বাসিন্দা দুই কিশোরের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্তব্ধ পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম কুণাল সাউ (১২) এবং রাহুলপ্রসাদ গন (১৫)। পরস্পরের প্রতিবেশী ওই দুই ছাত্র দু’টি আলাদা স্কুলে পড়ত। এ দিন মায়েরা যখন গঙ্গায় স্নান সেরে পুজো দিচ্ছেন, সেই সময়ে দুই কিশোর গঙ্গার ঘাটে স্নান করতে নেমেছিল। কোনও ভাবে পা পিছলে তারা গঙ্গার জলে তলিয়ে যায়। দু’জনের কেউই সাঁতার জানত না। কলকাতা পুলিশ ও তাদের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গঙ্গায় দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালায়। সন্ধ্যার পরে দুই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে তাদের নিয়ে গেলে দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এ দিন ওই পুজো উপলক্ষে গঙ্গার বহু ঘাটেই জনসমাগম হয়েছিল। পুলিশ ওই দুই কিশোরের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পা পিছলে যাওয়াকে কারণ বলে দাবি করলেও এ দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে জড়়ো হওয়া একবালপুরের বাসিন্দাদের দাবি, জোয়ারের জল টেনে নিয়ে যায় দু’জনকে। তাঁরা জানান, প্রথম জোয়ারেই দুই কিশোর ভেসে যায়। ওই সময়ে যে গঙ্গায় জোয়ার আসার কথা, তা স্থানীয় ভাবে প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়নি বলেই অভিযোগ দুই কিশোরের প্রতিবেশীদের। তাঁদের এমনও অভিযোগ, দুই কিশোর যখন তলিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের মায়েরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করে পুলিশের সাহায্য চান। কিন্তু সেই সময়ে গঙ্গায় থাকা পুলিশের একটি মাত্র নৌকা ওই দুই কিশোরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। পরে তারা ডুবে গেলে প্রশাসনের তরফে দু’জনকে উদ্ধারের তোড়জোড় শুরু হয় বলেই অভিযোগ এসএসকেএমে জড়ো হওয়া এলাকার লোকজনের।
এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় কুণালের মা শোভা ও রাহুলের মা পুতুল-সহ অনেককেই। দুই মাকে প্রথমে সন্তানদের মৃত্যুর খবর দেননি তাঁদের প্রতিবেশীরা। পরে অবশ্য দু’জনকেই বিষয়টি জানানো হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। অবশ্য প্রতিবেশীরাও মনে করছেন, ছেলেরা যাতে জলে না নামে, সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল পরিবারের লোকজনের। কান্নাকাটি করার মাঝেই পুতুলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সন্তানের মঙ্গলেই তো গঙ্গায় পুজো দিতে গিয়েছিলাম। কে জানত, এত বড় সর্বনাশ হবে।’’ দুই কিশোর ছিল একই পাড়ার বাসিন্দা। দু’জনেই বন্ধু। একসঙ্গে খেলাধুলোও করত। পরিবার দু’টির দাবি, পুজো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সকলে। সেই ফাঁকে দুই কিশোর ঘাটে নেমে পড়ে।
যদিও প্রশাসনের দাবি, গঙ্গায় জোয়ার এলে সব সময়ে সতর্ক করা হয়। অনেক সময়ে ভিড়ে লোকজন সেই সতর্কবার্তা শুনতে পান না। তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে লোকজন দল বেঁধে গঙ্গায় স্নান করতে আসেন। তাঁরা পুলিশের কথা শুনতেও চান না। শুক্রবার দুপুরে কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy