যেমন খুশি: মনের আনন্দে চলছে পড়ার সঙ্গে খেলা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ওরা কেউ থাকে জোড়াবাগান বস্তিতে, কেউ পোস্তা এলাকায়, কেউ বা ঢাকুরিয়া রেললাইন ধারের ঝুপড়িতে। অনেকেই আবার জানে না ওদের বাড়ি কোথায়! সে সবে অবশ্য এখন মন খারাপ হয় না ওদের। কারণ শ্যামবাজারের বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের কলিকাতা অনাথ আশ্রম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসই যে ওদের ঠিকানা দিয়েছে। নীরবে কাজ করে চলেছে এই ছাত্রাবাস। এর সঙ্গে রয়েছে একটি প্রাথমিক স্কুলও। এ বছর ১২৫-এ পড়ল সেই স্কুলটি।
অনাথ আশ্রম স্কুলটি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অধীন। ছাত্রাবাসটি চালায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর। পড়ুয়ারা স্কুলে ভর্তি হয় এই দফতরের মারফত। এই মুহূর্তে মোট ৫৪ জন কচিকাঁচা এখানে থেকে পড়াশোনা করছে।
স্কুলের ইতিহাস বলছে, স্কুল শুরুর চার বছর আগে শুরু হয় আশ্রমটি। সেটা ১৮৯২ সাল। কলকাতাস্থিত হাটখোলার দত্ত পরিবারের প্রাণকৃষ্ণ দত্ত নিঃসন্তান ছিলেন। স্ত্রী ক্ষান্তমণির সন্তানশোক ভোলাতে প্রাণকৃষ্ণ একটি অনাথ আশ্রম খোলেন। তিনটি বাচ্চা নিয়ে শুরু হয় আশ্রম। কিছু দিন
পরে প্রাণকৃষ্ণের মনে হয় শুধু পালন নয়, ওদের পড়াশোনাও শেখাতে হবে। সেই ভাবনা থেকে ১৮৯৬ সালে ২৯ জানুয়ারি অনাথ আশ্রমে স্কুলটি চালু হয়।
১৯৭৮ সালে স্কুলটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অধীনে আসে। বাড়তে থাকে ছাত্রও। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। এর পরে কাছের কোনও হাইস্কুলে ভর্তি
করে দেওয়া হয় ওদের। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই আশ্রমে থাকতে পারে পড়ুয়ারা।
পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এ ছাড়া গান, কবিতা, নাটকের পাঠ তো আছেই। সম্প্রতি মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জীবনাদর্শ নিয়ে নাটক করেছিল পড়ুয়ারা। খেলাধুলোতেও উৎসাহ দেওয়া হয় ওদের। অবসরে
কেউ খেলে ক্যারম, কেউ বা বোর্ড গেম, কারও আবার নেশা রয়েছে গল্পের বইয়ে।
প্রতি বছরের মতো এ বারেও স্কুল চত্বরে হয়েছে সরস্বতী পুজো। ওই দিন ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্কুল থেকে এক পদযাত্রা বেরোয়। যাতে পা মেলান প্রাক্তনীরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল মুখোপাধ্যায় জানান, এই আশ্রমে থেকে পড়াশোনা করে অনেক পড়ুয়াই সরকারি হাসপাতালের নার্স বা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত। এমনকি কম্পিউটার সায়েন্স
নিয়ে পড়ে ভাল চাকরিও করছেন কয়েক জন।
স্কুলের এক শিক্ষিকা নন্দা সিংহ জানান, এই পড়ুয়াদের কারও বাবা-মা নেই, কারও বাবা রিকশা চালান, কারও মা পরিচারিকার কাজ করেন। শিক্ষকদের মতে, সেই পড়ুয়ারাই যখন পড়াশোনায় ভাল ফল করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন, তখন তাঁদের পরিশ্রম সার্থক মনে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy