Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Park Circus

পার্ক সার্কাসে আঁকায় ব্যস্ত খুদেরা, বালক বোতল কুড়োতে

গত ৭ জানুয়ারি থেকে সিএএ-এনআরসি বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভ চলছে পার্ক সার্কাস ময়দানে। মাত্র ২৫ জনকে নিয়ে শুরু হয়েছিল যে আন্দোলন, সেখানে রবিবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেল ভিড়ের চাপে মাথা গোনা দায়।

পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদ চত্বরে সেই বালক। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদ চত্বরে সেই বালক। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

পিঠে থাকা সাদা বস্তাটির আকার তার চেহারার প্রায় দ্বিগুণ। পরনের পোশাক ছেঁড়া। পায়ে ঢলঢলে চটি। প্রবল ভিড়ের মধ্যে ওই বস্তাই কোনওমতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছে সে। কলকাতা পুরসভার একটি ডাস্টবিন থেকে বেছে বেছে প্লাস্টিকের বোতল তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে পরেরটায়।

এমনই একটি ডাস্টবিনের সামনে তাকে ধরে এক জন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘বয়স কত তোমার? প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বেড়াও?’’ প্রথমে কোনও উত্তর নেই বছর দশেকের ওই বালকের। ওই ব্যক্তি একই প্রশ্ন ফের করায় এর পরে সে বলে, ‘‘আমার মা এখানেই বসে আছে। মা তো খুব গরিব, তাই আমি বোতল কুড়াই। আমায় ধরে রাখবেন না।’’

গত ৭ জানুয়ারি থেকে সিএএ-এনআরসি বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভ চলছে পার্ক সার্কাস ময়দানে। মাত্র ২৫ জনকে নিয়ে শুরু হয়েছিল যে আন্দোলন, সেখানে রবিবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেল ভিড়ের চাপে মাথা গোনা দায়। রাত সাড়ে ন’টাতেও মিছিল করে ঢুকছেন অনেকে। রয়েছে প্রচুর খুদেও। যেমন ছিল মহম্মদ রহমত নামে ওই বালকও।

রহমতদের বাড়ি তপসিয়ায়। আগে তারা থাকত খিদিরপুরে। বছরখানেক আগে রহমতের বাবা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসেন রহমতের মা সাজিয়া। তপসিয়ার একটি মাদ্রাসায় ছেলেকে ভর্তি করান তিনি। কিন্তু মা-বাবার সংসারেও থাকা-খাওয়ার খরচ দিতে হয় তাঁদের। সাজিয়া নিজে একটি জুতোর কারখানায় কাজ নিলেও তাতে খরচ চলে না। তাই স্কুলে পড়া রহমতও বেরিয়ে পড়ে প্লাস্টিকের বোতল কুড়াতে।

তবে সেই রুটিনে এখন একটু বদল এসেছে। প্রতিবাদে যোগ দিতে হবে বলে কারখানা থেকে দুপুরের দিকে বেরিয়ে পড়েন সাজিয়া। ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন পার্ক সার্কাস ময়দানে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে থেকে ফের কারখানায় যান। রহমত সেই সময়ে বেরিয়ে পড়ে বস্তা নিয়ে প্লাস্টিকের বোতল কুড়োতে। সেই বোতল ভর্তি বস্তা রাতে ঠিকাদারের কাছে পৌঁছে দিলে মেলে দৈনিক ৬০ টাকা। সাজিয়া বললেন, ‘‘আগে রহমতকে নানা জায়গায় ঘুরতে হত। এখন এখানে প্রচুর বোতল পড়ে থাকে। সেগুলি কুড়োলেই চলে যাচ্ছে।’’

প্রথম দিন থেকে এই আন্দোলনে থাকা রহিমা বিবি বললেন, ‘‘ঘরে খাবার নেই। ছেলেকে বোতল কুড়োতে হয়। তবু ওই ছেলেটির মা-ও এই
প্রতিবাদে কেন এসে বসেছেন জানেন? ছেলের জন্যই। তাঁর জীবন কেটে গেলেও যে আজ বোতল কুড়োয়, তাকে তো বাঁচতে হবে!’’ সাজিয়া বলছিলেন, ‘‘দেড় সপ্তাহ আগে পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে এখানে এসেছিলাম। তার পর থেকে কী ভাবে যেন রয়ে গিয়েছি। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সকলে একসঙ্গে লড়ছি।’’

এ দিনই পার্ক সার্কাস ময়দানে খুদেদের ‘বসে আঁকো’র আয়োজন করেছিল একটি নাগরিক মঞ্চ। কারণ, মায়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদী অবস্থান জুড়ে আছে এলাকার শিশুরাও। তাদের অনেকেই প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত মাঠে বসছে, স্লোগান দিচ্ছে, আবার স্কুলেও যাচ্ছে। এ দিন তাদের কেউ এঁকেছে জাতীয় পতাকা। কেউ বা মন্দির, মসজিদ, গির্জার সহাবস্থান।

রহমত কি আঁকতে বসেছিল?

সাজিয়া বললেন, ‘‘দুপুর থেকেই আজ খুব ভিড় হয়েছে। প্রচুর বোতল পাবে ভেবে ও দুপুর থেকেই বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Park Circus CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy