আবাসনের গেটের এই লোহার ফলার উপরেই এসে পড়েছিল আশুতোষ মণ্ডলের দেহ। রবিবার, বেলেঘাটায়। নিজস্ব চিত্র
মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন রহিমা বিবি। হাঁটতে হাঁটতে পিছনে আচমকাই ভারী কিছু পড়ার শব্দ কানে আসে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন, একটি বহুতল আবাসনের গেটের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন রক্তাক্ত এক যুবক। শরীরে বিঁধে রয়েছে গেটের উপরে বসানো লোহার ফলা! রবিবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটার খোদাগঞ্জ রোডে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম আশুতোষ মণ্ডল (১৮)। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই যুবক তাঁর পরিবারের সঙ্গে ওই আবাসনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। কী ভাবে তিনি পড়ে গেলেন, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটেনি।
রহিমা জানান, তাঁর বাড়ি ঘটকপুকুরে। মেয়ের বাড়ি থেকে এ দিন ঘটকপুকুরে ফেরার জন্য বেরিয়েছিলেন তিনি। পথে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেন। ওই আবাসনের পাশেই থাকেন তাপস মিত্র নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, আশুতোষদের আদি বাড়ি বীরভূমের মল্লারপুরে। মাস চারেক আগে তাঁরা বেলেঘাটার আবাসনে এসেছেন। তাঁর বাবা আধাসামরিক বাহিনীতে কর্মরত। বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে মা, কাকা ও ঠাকুরমার সঙ্গে থাকতেন আশুতোষ। মধ্য কলকাতার একটি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তাপসবাবু বলেন, ‘‘এক মহিলার চিৎকার শুনে বেরিয়ে দেখি, এই ঘটনা। প্রথমে আমি ছেলেটিকে গেট থেকে তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। তার পরে স্থানীয় ছেলেদের ডাকি। লালবাজারেও ফোন করে ঘটনাটি জানাই।’’
তাপসবাবু জানান, স্থানীয় যুবকেরা এসে কোনওমতে আশুতোষকে উদ্ধার করেন। পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা না করেই চাদরে মুড়ে আশুতোষকে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লোহার ফলা এমন ভাবে পেট ও বুকের মাঝে গেঁথে গিয়েছিল যে, উদ্ধার করার সময়ে সেটি গেট থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসে। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, লোহার বাকি ফলাগুলিতেও রক্তের দাগ লেগে আছে। আবাসনের সামনে তখনও স্থানীয়দের ভিড়। উদ্ধারকারীদের অভিযোগ, এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার পরেও আবাসনের কেউ যুবককে উদ্ধার করতে আসেননি। সন্ধ্যাতেও তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি।
কী ভাবে ওই যুবক প়ড়ে গেলেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বেলেঘাটা থানা। আশুতোষদের ফ্ল্যাটের বারান্দায় কোমর পর্যন্ত রেলিং আছে। এ দিন সন্ধ্যায় আশুতোষদের ফ্ল্যাটে তাঁর অসুস্থ শয্যাশায়ী ঠাকুমা ছিলেন। তিনি কথা বলতে পারেননি। বাকি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আশুতোষ শান্ত স্বভাবের ছিলেন। পরিবারেও কোনও অশান্তি ছিল না। বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোটও মেলেনি বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের একাংশের মতে, দুর্ঘটনাবশত পড়ে গেলে বারান্দা ও গেটের মাঝে কোথাও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। উপর থেকে পড়ার সময়ে দেহ শূন্যে পাক খেয়ে ঘুরে যায়। এ ক্ষেত্রে সেটাও হয়নি। এক পুলিশকর্তা অবশ্য এ-ও বলছেন, ‘‘অনেক সময়েই কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে। তাই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy