বালিগঞ্জ জিআরপি থানা থেকে মেটিয়াবুরুজ থানার দূরত্ব বড়জোর ২০ কিমি। অথচ এইটুকু পথ পেরিয়ে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পৌঁছতে লেগে গেল ২৪ দিন।
মেটিয়াবুরুজ থেকে নিখোঁজ এক যুবকের মোবাইলের কল লিস্ট দেখে শেষ যোগাযোগকারীর খোঁজ পেয়ে জানা যায়, ওই যুবক আসলে খুন হয়েছেন। যে দিন ওই যুবক নিখোঁজ হন, সে দিনই তারাতলা এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, পুলিশ ও রেল পুলিশের সমন্বয়ের অভাবে দু’জন যে একই ব্যক্তি, তা জানা যায়নি। তা জানা যায়, নিখোঁজের ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তি গ্রেফতারের পরে। ফলে মৃতের পরিবারের কাছে খবর পৌঁছতে ২৪ দিন লেগে যায়। রবিবার, পরিজনেরা মৃতদেহটি শনাক্ত করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ এপ্রিল থেকে মেটিয়াবুরুজ থানার বাদামতলার বাসিন্দা লোহার ছাঁট ব্যবসায়ী মহম্মদ রাজ নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর পরিবার সে দিনই মেটিয়াবুরুজ থানায় গিয়ে অপহরণ ও নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। আর ওই রাতেই বেসব্রিজ ও তারাতলার মাঝে একটি জায়গা থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে বালিগঞ্জ জিআরপি। কিন্তু জিআরপি বা মেটিয়াবুরুজ থানা কেউ-ই জানতে পারেনি যে মৃত ওই যুবক এবং মেটিয়াবুরুজ থেকে নিখোঁজ হওয়া যুবক আদপে একই। পুলিশের দাবি, রাজের মোবাইল থেকে শেষ যোগাযোগকারী কাল্লু খারোয়ারের নাম পাওয়া যায়। তাকে গ্রেফতার করার পরে জানা যায়, কাল্লু রাজকে মাঝেরহাট স্টেশনের কাছে ট্রেনের সামনে ঠেলে দিয়েছিল। পুলিশের দাবি, ত্রিকোণ প্রেমের জেরে এই ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ এপ্রিল মহম্মদ রাজের পরিজনেরা মেটিয়াবুরুজ থানায় গিয়ে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তাঁরা জানান, ওই দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাজ আর ফেরেননি। ততক্ষণে বালিগঞ্জ রেল পুলিশ বেসব্রিজ এবং মাঝেরহাট স্টেশনের মাঝে রেললাইন থেকে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে। বালিগঞ্জ রেল পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবকের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগ, মৃতদেহটির বিষয়ে তারা কোনও খোঁজ নেয়নি। মেটিয়াবুরুজ থানাও নিখোঁজ যুবকের কোনও হদিস পায়নি। এর পরেই তদন্তভার যায় বন্দর বিভাগের বিশেষ গোয়েন্দা দল এসএসপিডির কাছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এসএসপিডির গোয়েন্দারা রাজের মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখে জানতে পারে, ১৬ এপ্রিল তাঁর মোবাইলে শেষ ফোনটি আসে কাল্লু নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। সে রাজের এলাকারই বাসিন্দা। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাল্লুর খোঁজ মেলেনি। পুলিশ জানতে পারে, কাল্লু উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে রয়েছে। শনিবার কলকাতা পুলিশের একটি গোয়েন্দা দল উত্তরপ্রদেশ থেকে কাল্লুকে ধরে কলকাতায় নিয়ে আসে।
গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, জেরায় কাল্লু খুনের কথা স্বীকার করেছে। তার দাবি, ১৬ এপ্রিল সে ও রাজ তারাতলার একটি জায়গায় মদ্যপান করে। তার পরে দু’জনে বেসব্রিজ পৌঁছে লাইন ধরে মাঝেরহাটের দিকে হাঁটতে থাকে। তখনই একটি ট্রেন আসতে দেখে কাল্লু তার সামনে রাজকে ঠেলে দিয়ে পালায়। তদন্তকারীরা বালিগঞ্জ জিআরপি থানায় যোগাযোগ করলে জানা যায়, ১৬ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ মিলেছে। রবিবার রাজের পরিজনেরা বালিগঞ্জ জিআরপিতে গিয়ে তাঁর জামাকাপড় ও ছবি দেখে শনাক্ত করেন।
সমন্বয় না থাকার অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ বা রেলপুলিশের কর্তারা কিছু বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy