দশমীর সকালেই দক্ষিণ কলকাতার পুজোকর্তাটি ফোনে ধরলেন এক শিল্পীকে। বললেন, ‘‘আগামী বছর আমাদের পুজোর দায়িত্ব নাও। টাকার জন্য ভেবো না।’’
পুজো শুরুর আগেই শিল্পী বদলের সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছিলেন শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা। সেই মতো নতুন শিল্পীকে বায়নাও করে দিয়েছেন।
শহরের বেশির ভাগ বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপেই প্রতিমা রয়েছে। কিন্তু পুজোপর্ব মিটতেই আগামী বছরের জন্য ছক কষতে শুরু করেছেন পুজোকর্তারা। কেউ ইতিমধ্যেই নতুন শিল্পীকে বায়না করেছেন, কেউ বা আবার পুরনো শিল্পীকেই রেখে দিচ্ছেন। ভিড়ের চাপ একটু কমতেই শুরু হয়ে গিয়েছে পরের বারের থিম নিয়ে আলোচনা।
পুজো ময়দানের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এটাই পুজোর রীতি। গড়ের মাঠে যেমন খেলোয়াড় নিয়ে টানাপড়েন চলে ক্লাবে-ক্লাবে, তেমনই শিল্পী নিয়েও পুজোকর্তাদের লড়াই কম নয়। শহরের পুজোর সঙ্গে যুক্ত এক প্রবীণ মানুষের কথায়, ‘‘এক সময় তো খেলোয়াড় হাইজ্যাক করার মতো শিল্পীও হাইজ্যাক করা হত!’’ এখন সরাসরি সেই ‘হাইজ্যাক’ প্রথা নেই। তবে এমনও হয়েছে যে এক পুজো শিল্পীকে দিয়ে কাজ করানোর ব্যানার লাগানোর পরে কর্তাব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, ওই শিল্পী তাদের কাজ করবেন না। তাই দেরি না করে দশমীতেই শিল্পী ধরার কাজে লেগে পড়েছে পুজো কমিটিগুলি।
যেমন, দক্ষিণের একটি পুজোয় মহিলাশিল্পীর কাজ লোকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাই নবমীর রাতেই ওই মহিলা শিল্পীকে ‘বুক’ করে রেখেছেন। এ বার পুজোর শুরুতেই শিল্পী নিয়ে ফাঁপড়ে পড়েছিল উত্তর কলকাতার একটি ক্লাব। শেষে এক তরুণ শিল্পী ৮০ দিনের মধ্যে পুজোর কাজ শেষ করেছেন এবং প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। আগামী বছরে ওই শিল্পীকে রাখার তোড়জো়ড় শুরু করেছেন ক্লাবকর্তারা। তেমনই আবার শুরু হয়েছে দলবদলের পালা। হাতিবাগান এলাকার এক পুজো কমিটি দক্ষিণ কলকাতার এক প্রভাবশালী কাউন্সিলরের পুজোয় কাজ করা শিল্পীকে নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসার জন্য লড়ছে। হাতিবাগানের পুজোয় কাজ করা এক শিল্পীর সঙ্গে কথা চলছে দমদমের এক পুজোর। এ বার নামী-দামী সংস্থার পুরস্কার জেতা এক শিল্পীকে কে নেবেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। পুজো ময়দানের খবর, দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবে তাঁর কাজ প্রশংসা কুড়োলেও পরের বছর ওই পুজোয় তাঁকে না-ও দেখা যেতে পারে!
দলবদলে কোন শিল্পীর কতটা দর উঠবে তা বোঝার জন্য দশমীর সন্ধ্যার দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন অনেকে। কারণ, মহরমের জন্য শুক্রবার ও শনিবার বিসর্জন বন্ধ। তাই সন্ধ্যা হতেই লোকজন ভিড় করেছে বিভিন্ন মণ্ডপে। দশমীর সন্ধ্যায় লোকজন ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন উত্তর কলকাতার এক পুজোকমিটির সদস্যরা। ভিড় সামলাতে তড়িঘড়ি পাঠানো হল অল্পবয়সী কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবককে। তাঁদেরই এক জন স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, আজ একটু বসে বসে জিরোনো যাবে। তা-ও কপালে নেই!’’ এ বছর চতুর্থী থেকেই রাস্তায় জনজোয়ার চলে এসেছিল। ভিড়ের পাশাপাশি মণ্ডপের ভিতরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করেছিল ছবি তোলার ভিড়। কেউ তুলছিলেন নিজস্বী (সেলফি ), কেউ বা প্রতিমার ছবি-মণ্ডপের কারুকাজ। বহু মণ্ডপেই এই ছবি তোলার হ্যাপা সামলাতে গিয়ে নাকাল হয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যরা। কোথাও কোথাও ‘নো সেলফি জোন’ পোস্টারও লাগাতে হয়েছিল।
এ দিন অবশ্য ভিড়ের দাপট তুলনায় কম ছিল বলে মণ্ডপের ভিতরে অনেকটাই সময় পেয়েছেন ‘চিত্রগ্রাহক’-রা। যেমন বেহালার একটি পুজোমণ্ডপের ভিতরে নিশ্চিন্তে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে প্রতিমার ছবি তুলছিলেন বছর কুড়ি-বাইশের এক তরুণী। শেষে রীতিমতো তাড়া লাগালেন সঙ্গে থাকা মহিলা। দক্ষিণ কলকাতার এক মণ্ডপে আবার প্রতিমার সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছিলেন এক তরুণ। বললেন, ‘‘আগের দিন কয়েক জন বন্ধু এই মণ্ডপে ভিড়ের চোটে পকেট থেকে ক্যামেরাই বের করতে পারেনি।’’ উত্তর কলকাতার একটি পুজোমণ্ডপে প্রতিমার ছবি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছিলেন দীপা মিত্র। বললেন, ‘‘আমার এক বন্ধু পুণেতে রয়েছে। এ বছর ও পুজোয় শহরে আসতে পারেনি। তাই ভাল ভাল ছবি তুলে পাঠালাম।’’ অষ্টমী-নবমীর ভিড়ে এই সুযোগ পাননি ওই তরুণী। ভিড় কম থাকায় বাধাও দেয়নি পুজো কমিটিগুলি। পুজোর ক’দিন ছবি তোলা আটকাতে ব্যস্ত থাকা এক পুজোকর্তা দশমীর সন্ধ্যায় বললেন, ‘‘উৎসব তো শেষ। ভাঙা হাটে না হয় একটু ছবি-ই তুলল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy