গত কয়েক দিন ধরেই গোড়ালি ও লিগামেন্টের চোট নিয়ে শয্যাশায়ী। তাই দোকানে না গিয়ে শুক্রবারও বাড়িতে শুয়েই ছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎই বিকট আওয়াজ। বাড়িটা যেন থরথর করে কাঁপছে! ঘাড় ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে দেখি, পিছনে সিইএসসি-র ট্রান্সফর্মারে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। প্রথমে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেও খেয়াল হল, ঘরে ৯২ বছরের শ্বশুরমশাই রয়েছেন। পায়ের ব্যথা ভুলে তড়িঘড়ি ছুটলাম তাঁর কাছে। শ্বশুরমশাইয়ের দেখভাল করার লোক রিনা ঘরেই ছিল। তাঁকে দিয়েই নীচে পাঠিয়ে দিলাম বুড়ো মানুষটাকে।
রিনা শ্বশুরমশাইকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই প্রথমে স্বামীকে ফোন করে খবরটা জানালাম। তড়িঘড়ি বিদ্যুতের মেন সুইচ, ইনভার্টারের সুইচ বন্ধ করে গ্যাস সিলিন্ডারটাকে টানতে টানতে সরিয়ে নিয়ে গেলাম জানলার কাছ থেকে। ফের আর একটা বিস্ফোরণের শব্দ! ট্রান্সফর্মারের দিকের বারান্দায় তো স্প্লিট এসির মেশিনটা রয়েছে। সেখানে কিছু হয়নি তো? বারান্দার দরজাটা খুলতেই আগুনের তাতে শরীরটা যেন জ্বলে গেল। এসির মেশিনটাও জ্বলছে। দৌড়ে রান্নাঘরের কাছ থেকে দুটো জলের বোতল নিয়ে গিয়ে তাতে ঢেলে দিলাম।
তত ক্ষণে ফের উপরে উঠে এসেছে রিনা। ওকে বললাম, তুই গিয়ে জানলা-দেওয়ালে জল ঢালতে থাক। কারণ, ট্রান্সফর্মার ফাটার শব্দে জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যে আগুনের শিখা ক্রমশ জানলার দিকে এগিয়ে আসছে। তাপের চোটে জানলার ফ্রেমে আগুন ধরে গিয়েছে। ঘরের ভিতরেও যেন সেই হল্কা বইছে। বুঝতে পারছি, বেশিক্ষণ থাকলে বিপদ ঘটতে পারে। শেষ চেষ্টা করে দেখি, মধ্যবিত্তের সম্পত্তি বাঁচাতে পারি কি না! সেই জেদেই জল ঢালতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরেই কিছু লোক-পুলিশ-দমকল উঠে এল। তাঁরাই আমাকে জোর করে নীচে নিয়ে গেল।
সিঁড়ি বেয়ে নামার কিছুক্ষণের মধ্যে ফের স্বামীর ফোন। উদ্বিগ্ন গলা, ‘‘তুমি কোথায়?’’ উত্তর শুনে বলল, ‘‘ফ্ল্যাটে আমার প্রচণ্ড দরকারি কিছু কাগজ রয়েছে। সেগুলো বার করতে পেরেছ?’’ আশপাশ দেখে ফের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকতেই আবার কয়েক জন দমকলকর্মী এসে বার করে নিয়ে গেলেন। শেষমেশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকলাম।
আমার কার্যকলাপ শুনে পরিচিতরা সবাই বকাবকি করছে। বলছে, এমন ঝুঁকি নেওয়ার কী দরকার ছিল? আমি বলছি, বছর পনেরো আগে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফিরছিলাম। চার জন দুষ্কৃতী সেই টাকা ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল। আমি কিন্তু ওদের সঙ্গে লড়ে নিজের টাকা বাঁচিয়েছিলাম!
সে দিনও মনে ভয় ছিল না।
আজও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy