ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরুর ব্যাপারে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের। কিন্তু রাজ্যের অন্য ঝিমিয়ে পড়া মেট্রো প্রকল্পগুলি কতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে রেলকর্তারা।
রেল বাজেটের আগে প্রতিটি রাজ্য কোন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে চায়, বা কী কী নতুন ট্রেন চায়— তার তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। সেই মতো ২০১৫ সালের রেল বাজেটে রাজ্যের তরফে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রেলকর্তারা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর অবস্থা এখন ঠিক কী রকম? রেল কর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে সেক্টর ৫ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কাজের সময়সীমা ছিল ২০১৩ সালের অগস্ট মাস। দ্বিতীয় পর্যায় শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত অংশে ২০১৪-র অক্টোবর। পরে আবার সময়সীমা ধার্য করে ঠিক হয়, প্রথম পর্যায় শেষ করা হবে ২০১৫-র ডিসেম্বরে। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৫০০ কোটি টাকায়। আবার রুট বদলানো হলে ব্যয় বাড়বে আরও ৩০ শতাংশ। ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। কিন্তু দেরির কারণে বাড়তি খরচের টাকা কে দেবে, তা নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি।
রেল সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্টের নকশা বদলের জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি টাকার বিষয়টি নিয়ে সোমবার দিল্লিতে অর্থ মন্ত্রকে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই জট খোলার ইঙ্গিত মিলেছে। রাজ্যের কাছ থেকে নতুন রুটের নকশা এবং অতিরিক্ত কত টাকা লাগবে, সে ব্যাপারে জানতে ডিপিআর চেয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “আমরা চাই সংঘাত এড়িয়ে রাজ্যের প্রকল্পগুলি দ্রুত শেষ করা হোক। রাজ্য সরকারের দেওয়া ইস্ট-ওয়েস্টের বিকল্প নকশার সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা পড়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হোক, সেটাই আমরা চাই।”
রাজ্যের জন্য এ বছর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি কী কী? রেল সূত্রের খবর, রাজ্যে রেলের প্রথম লক্ষ্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু করা। সঙ্গে রয়েছে জোকা-বিবাদী বাগ, নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর-বরাহনগর-ব্যারাকপুর এবং গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পগুলি। রেলের এক কর্তা বলেন, “এ রাজ্যে একগুচ্ছ প্রকল্পের মধ্যে যেগুলি আশু প্রয়োজন, সেগুলি তো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর তিনি সেগুলি নিয়ে ভাবিত নন।” বস্তুত, রেলকর্তাদের ইঙ্গিত, তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক সম্পর্কে জটিলতার জেরে রাজ্যে রেল প্রকল্পের কাজ অনেকটাই থমকে গিয়েছে।
ইস্ট-ওয়েস্টের মতোই হাল কবি সুভাষ-বিমানবন্দর মেট্রোর প্রকল্পের। সাড়ে ৩২ কিমির মধ্যে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ কিমির। বাকিটা জমি জটে আটকে। জোকা-বিবাদী বাগ প্রকল্পে ২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করা গিয়েছে মাত্র ৩২১ কোটি টাকা। ফলে ধরাই যায়, এই প্রকল্পেও বেশির ভাগ কাজই হয়নি। নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর-ব্যারাকপুর মেট্রো প্রকল্পে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বরের (প্রায় ২ কিমি) মধ্যে ৩৮৪ জন দখলদারকে তোলাই সম্ভব হয়নি। ফলে কাজ কার্যত বন্ধ। অথচ রাজনৈতিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যের উন্নয়নে রেল প্রকল্পগুলি চালু করতে চায়। কিন্তু রাজ্যে জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় বেশির ভাগ প্রকল্পই থমকে। এমনকী নতুন লাইন পাতার কাজও শুরু হচ্ছে না।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া জমি নীতিতে ক্ষতিপূরণে চাকরি দেওয়ার কোনও সংস্থান নেই। উল্টো দিকে, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা রয়েছে। বিরোধ বেধেছে এই নিয়েই। রেলের এক কর্তার বক্তব্য, “হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ১৮ কিমি নতুন লাইন পাতার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হতেই ৩ হাজার লোক ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকার পাশাপাশি চাকরির দাবি জানিয়েছেন।”
এই পরিস্থিতিতে এ বার রেল বাজেটে রাজ্যের কপালে কী রয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। বাজেটের আগে অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না রেলকর্তারা। জবাবে মিলেছে শুধুই মুচকি হাসি।
হাইকোর্টের প্রস্তাব
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা হাইকোর্ট চায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হোক ২ এপ্রিল থেকে। আর প্রকল্পটি নির্ধারিত রুটেই হবে, না বিকল্প রুটে হবে, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক ১৫ অগস্টের মধ্যে।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি সৌমিত্র পাল এ দিন প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থাকে প্রস্তাব দেন, ২ এপ্রিলের মধ্যে হাওড়া ময়দান থেকে যন্ত্রের সাহায্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু করতে। পরে প্রয়োজনে ওই যন্ত্র মাটির উপরে তুলে আনতে হলে তা লালদিঘির কাছে ঠিক কোন জায়গায় রাখতে হবে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন তা জানিয়ে দেবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। ঠিকাদার সংস্থাটি এ দিন আদালতে জানায়, কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের কাছে তাদের কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। বিচারপতির প্রস্তাব, ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই টাকা মেটানো হোক। এ দিন ওই মামলার শুনানি শেষ হয়। আজ, বৃহস্পতিবার বিচারপতির চূড়ান্ত রায় দেওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy