Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Violence

Kolkata Police: বুকে বুট-পরা পা তুলে দেওয়ার সেই ভিডিয়ো দেখিয়েই পুলিশের প্রশিক্ষণে সংযমের পাঠ

সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ-সহ বাহিনীর প্রতিটি স্তরে আচরণগত প্রশিক্ষণের সময় ওই অমানবিক ঘটনার ভিডিয়ো দেখানো হবে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। ফাইল চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১৫
Share: Save:

মানুষের জন্যই পুলিশ। মানুষজনের সঙ্গে পুলিশের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তার দীর্ঘ প্রশিক্ষণ-পাঠ আছে। তবে কেমন আচরণ আদৌ উচিত নয়, বাহিনীর সদস্যদের লোকব্যবহার শেখানোর সেই পাঠ্যসূচিতে তাঁরা এ বার বুকে আইনরক্ষকের বুট-পরা পা তুলে মাটিতে চেপে ধরার বৃত্তান্ত যুক্ত করছেন বলে জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র।

সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ-সহ বাহিনীর প্রতিটি স্তরে আচরণগত প্রশিক্ষণের সময় ওই অমানবিক ঘটনার ভিডিয়ো দেখানো হবে। বলা হবে, ঠিক কোন ধরনের আচরণ পরিত্যাজ্য। বলা হবে, ঠিক কোন ধরনের ব্যবহার পুলিশের ভাবমূর্তি এক লহমায় ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। বলা হবে, কোন ধরনের দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত নয় কলকাতা।

রবীন্দ্র সদনের অদূরে এক্সাইড মোড়ে পকেটমার সন্দেহে এক যুবককে মাটিতে ফেলে তাঁর বুকে বুট-পরা পা তুলে মারছেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার, এমন একটি ভিডিয়ো রবিবার সন্ধ্যায় ভাইরাল হয়। রাতেই তন্ময় বিশ্বাস নামে সেই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বরখাস্ত করেন কমিশনার স্বয়ং। ডেকে পাঠান সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্র্যাফিক অফিসারদের। সিপি সোমবার বলেন, ‘‘এটা ভেবে অবাক লাগছে যে, আমরা গত এক বছর ধরে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। ওয়ার্কশপও হচ্ছে। সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে উচ্চ পদের অফিসার—প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে সকলকেই। প্রতিটি শিবিরে মানুষের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার, সদাচরণ, মানবিক মানসিকতার কথা বলা হয়। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা কী করে ঘটল, সেটাই ভাবাচ্ছে।’’ প্রশিক্ষণ চলবে। সেখানে পুলিশের ভাল কাজের সঙ্গে খারাপ কাজও দেখানো হবে। রবিবারের ঘটনাটি খারাপ কাজের তালিকায় ঢুকেছে। এর পরের প্রশিক্ষণে সেই ভিডিয়ো দেখিয়ে সংযত হতে বলা হবে।

রবিবারের ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) অরিজিৎ সিংহকে নতুন করে প্রশিক্ষণের সূচি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। এত কালের প্রশিক্ষণের পরেও কেন এমন কাণ্ড ঘটল, কমিশনার তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন শহরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবাশিস বড়ালকে। এক্সাইড মোড় এলাকায় রবিবার কর্মরত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-কে এ দিন তলব করেন সিপি। এমন ঘটনার যাতে কোনও রকম পুনরাবৃত্তি না-হয়, সেটা দেখতে বলা হয়েছে তাঁদের।

সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘থানার পুলিশের বিরুদ্ধেও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আসে। সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে গেলে নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হন বলেও অভিযোগ আছে। আমরা থানার ‘ফ্রন্ট অফিস বিহেভিয়ার’ নামে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করেছি। থানায় ঢুকলে সবার আগে আপনার দেখা হবে সেন্ট্রির সঙ্গে। কার্যত তিনিই থানার প্রথম ব্যক্তি, যাঁকে মানুষ প্রথম দেখতে পান। তার পরে থাকেন টেবিলে বসা ডিউটি অফিসার। এঁদের আচার-ব্যবহার ঠিক কী রকম হওয়া উচিত, সেই বিষয়েও আমরা প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালার আয়োজন করেছি।’’

সেই প্রশিক্ষণ আদৌ কাজ করছে কি না, তা দেখার জন্য আচম্বিতে সাধারণের ছদ্মবেশে পুলিশকর্তাদের পরিচিত ব্যক্তিরা যাচ্ছেন শহরের বিভিন্ন থানায়। কেউ যাচ্ছেন মোবাইল চুরি যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে, কেউ বা যাচ্ছেন মোটরবাইক চুরির নালিশ জানাতে। তা ছাড়াও পারিবারিক কলহ এবং অন্যান্য অভিযোগ তো আছেই। সংশ্লিষ্ট থানা কেমন ব্যবহার করছে, সেই পরিচিত ব্যক্তি ফিরে এসে তার রিপোর্ট দিচ্ছেন পুলিশকর্তাদের। তার ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে অ্যানিমেশন পাঠ্যক্রম। সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ক্রাইম মিটিংয়ে সেই অ্যানিমেশন দেখিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানাকে। দেখা গিয়েছে, থানায় বড়বাবু বা অফিসার ইনচার্জ না-থাকলে খারাপ ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়ে যায়।’’

এত প্রশিক্ষণ, এত কর্মশালার পরেও এমন ঘটনা ঘটছে কেন?

সিপি-র জবাব, ‘‘হয়তো যা করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তবে প্রশিক্ষণে লাভও হচ্ছে। অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের এক-একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য ভাল ভাল কাজ এক লহমায় অর্থহীন হয়ে যায়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE