ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএসের সব কার্যালয় বন্ধ করার নির্দেশের পরে তাদের লগ্নিকারীদের টাকা ফেরানোর পথে আরও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। ওই সংস্থার কত সম্পত্তি রয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট অবিলম্বে তার খতিয়ান পেশের নির্দেশ দিয়েছে।
শুধু সম্পত্তির হিসেব নয়, বাজারে এমপিএসের দেনা কত, কত লোক ওই সংস্থায় মোট কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, বিস্তারিত ভাবে তা জানিয়ে ১৩ মে-র মধ্যে হলফনামা পেশ করতে বলা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের আরও নির্দেশ, হলফনামায় জানাতে হবে, এমপিএসের অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ঠিক কত। সংস্থা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ধার নিয়ে থাকলে তার পরিমাণই বা কত।
এমএমপিএসের লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে উদ্যোগী হয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিনের নির্দেশ সেই উদ্যোগেরই প্রথম ধাপ বলে মনে করছেন হাইকোর্টের আইনজীবী এবং আমানতকারীদের বড় একটি অংশ।
সেবি-র নিষেধ সত্ত্বেও এমপিএস বাজার থেকে টাকা তুলছে বলে সম্প্রতি হাইকোর্টে অভিযোগ জানান ওই সংস্থার কিছু লগ্নিকারী। বাজার থেকে টাকা তোলার রসিদও জমা পড়ে আদালতে। তার ভিত্তিতে বিচারপতি সৌমিত্র পাল মাসখানেক আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দেন, রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমপিএসের সব কার্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে লেক টাউন, ঝাড়গ্রাম-সহ রাজ্যের সর্বত্র এমসিএসের অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় এমপিএসের সহযোগী তিনটি সংস্থার বিভিন্ন অফিসও।
এমপিএসের আইনজীবী কিশোর দত্ত এ দিন আদালতে জানান, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত যে-সব তথ্য জানানোর নির্দেশ দিচ্ছে, পুলিশ সংস্থার সব অফিস বন্ধ করে দেওয়ায় তা জানা সম্ভব নয়। ওই আইনজীবী আদালতে আবেদন জানান, দিন কয়েকের জন্য কয়েক ঘণ্টা অফিস খুলে ওই তথ্য সংস্থার কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে জোগাড় করার নির্দেশ দেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতি এ দিন সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেন, এমপিএসের অফিসে হাজির থেকে ওই সব তথ্য পেতে সাহায্য করতে হবে। তবে ওই দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অনুমতি ছাড়া এমপিএসের কর্মীরা কোনও নথি বাইরে বার করতে পারবেন না।
এমপিএসের সহযোগী তিনটি সংস্থার পক্ষ থেকে এ দিন আদালতে জানানো হয়, হাইকোর্ট ওই সংস্থাগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়নি। তা সত্ত্বেও পুলিশ সেগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে মিনারেল ওয়াটার, জ্যাম, জেলি, আচার তৈরির কারখানায় যে-সব উৎপাদিত পণ্য রয়েছে, সেগুলি বিক্রি করা যাচ্ছে না। সহযোগী সংস্থার পক্ষে আইনজীবী জয়দীপ কর আদালতে আবেদন জানান, সেই সব পণ্য বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হোক। ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, ঝাড়গ্রামে এমপিএসের সহযোগী সংস্থার অফিস ও গুদামে কত পণ্য মজুত রয়েছে, তার দাম কত, হিসেব করে আদালতে জমা দিতে হবে। সহযোগী সংস্থাগুলি ওই উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারে। তবে বিক্রি করে যে-টাকা মিলবে, তার ৯০ শতাংশ হাইকোর্টের অফিসারের কাছে জমা রাখতে হবে।
এমপিএসের সহযোগী সংস্থার আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী জানান, সংস্থার অফিসারেরা আগামী শনিবার ঝাড়গ্রামের কারখানায় গিয়ে মজুত পণ্যের হিসেব নেবেন।
কলকাতার নগর দায়রা আদালতে এ দিনই রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর জামিনের আবেদন ফের খারিজ হয়ে যায়। গৌতমকে এ দিন ওই আদালতে হাজির করানো হয়। ১৯ মে পর্যন্ত তাঁকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক গোপালচন্দ্র কর্মকার।
প্রতারণার মামলায় ধৃত লগ্নি সংস্থা আইকোরের দুই ডিরেক্টর স্বপন রায় ও কবীর হুসেনকে ১৫ মে পর্যন্ত সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে ব্যারাকপুর আদালত। ধৃতদের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা আদালতে বলেন, ‘‘গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে সিআইডি আইকোর সংক্রান্ত কোনও তদন্ত করতে পারবে না। কারণ, ওই নির্দেশে আইকোর নিয়ে যাবতীয় তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সিবিআই-কে। অতএব সিআইডি হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।’’ এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘সিআইডি কোনও বেআইনি কাজ করেনি।’’ তার পরেই ধৃতদের সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আইকোরের মালিক অনুকূল মাইতিকে আগেই গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy