বন্ধ কলকাতা বিমানবন্দর। ফাঁকা টারম্যাকে দাঁড়িয়ে বিমান। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।
দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে ইন্ডিগোর উড়ান কলকাতার মাটি ছেড়ে উড়ে যাওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হল কলকাতা বিমানবন্দর। রবিবার, ছুটির দিনে আকাশে তখন কালো মেঘ।
ঠিক চার দিন কম চার বছর আগে (২০২০-র ২০ মে) আমপানের কারণে প্রায় ২০ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দর। তার ঠিক সাত মাস আগে (২০১৯-এর ৯ নভেম্বর) বুলবুলের কারণে ১৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল কলকাতা থেকে সমস্ত উড়ানের ওঠানামা। তবে, দু’বারই ঝড় ও বৃষ্টির দাপট বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে স্তিমিত হয়ে যায়। তাই, দু’বারই প্রশ্ন উঠেছিল কেন এত যাত্রীর অসুবিধা করে তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হল বিমানবন্দর?
সেই অমোঘ প্রশ্ন উঠেছে এই রবিবারও। দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ যখন বিমানবন্দর বন্ধের ঘোষণা করা হয়, উড়ানসংস্থার কর্তাদের একাংশের দাবি, তখনও তো নিশ্চিন্তে উড়ান চালানো যেত। এমনকি রবিবাসরীয় বিকেলে শহরের যে আবহাওয়া ছিল তাতেও উড়ান ওঠানামায় অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। তা হলেও কেন তাড়াহুড়ো করে এত যাত্রীর অসুবিধা করা হল?
সূর্য পালিতের কথাই ধরা যাক। ভূবনেশ্বরের এই যুবক কর্মসূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে আগরতলা থাকেন। ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। শনিবার রাতে ট্রেনে কলকাতায় এসে রবিবার সন্ধ্যার উড়ানে আগরতলা যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দর বন্ধের খবর পেয়ে সটান হাজির হন সেখানে। বলেন, “কলকাতায় আত্মীয়-বন্ধু কেউ নেই। বিমানবন্দরেই স্ত্রীকে নিয়ে রবিবার রাত কাটিয়ে দেব। আশপাশের ক্যান্টিন থেকে খাবার জুটে যাচ্ছে। সোমবার সকাল পৌনে দশটার উড়ানে জায়গা করে দিয়েছে উড়ানসংস্থা।”
সূর্যের মতো অনেক যাত্রীই রবিবারের রাত থাকেন বিমানবন্দরের ম্যানেজারের ঘরের সামনের লাউঞ্জে। সেই সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের হিরণ বিশ্বাসের। ঘুরতে এসেছিলেন কলকাতায়। রবিবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের উড়ানে ঢাকা ফেরার কথা ছিল। দুপুর ১টায় বিমানবন্দর পৌঁছে জানতে পারেন, সব বন্ধ। খবরের কাগজ ও টিভিতে দেখেননি যে বিমানবন্দর বন্ধ— এ প্রশ্নের উত্তরে হিরণ বলেন, “বেড়াতে এসে কি টিভি দেখব না খবরের কাগজ পড়ব? আবহাওয়া তো খারাপ কিছু ছিল না। তা হলে কেন উড়ান ছাড়া হল না? আমাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারের উড়ানে। এখন আপনাদের শহরে সস্তার হোটেল খুঁজে হবে।”
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টাভির যুক্তি, “এটা তো আমাদের একার সিদ্ধান্ত নয়। বৈঠকে আবহাওয়া দফতর যা বলেছে, তার ভিত্তিতে উড়ানসংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করে দুপুর ১২টা থেকে বিমানবন্দর বন্ধ করা হয়েছে।” কিন্তু, দুপুরে তো অবলীলায় উড়ান চালানো যেত। অধিকর্তার দাবি, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বিমানবন্দরে হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৬৫ কিলোমিটার)। উড়ান ওঠানামায় অসুবিধা হত।’’
রবিবার সবমিলিয়ে কলকাতা প্রায় ৩৯৪টি উড়ান বাতিল হয়েছে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। যার জেরে সারা দেশের উড়ানসূচি বদলাতে হয়েছে উড়ানসংস্থাগুলিকে। কর্তৃপক্ষ জানান, রবিবার সকালে বারানসী থেকে কলকাতায় শেষ উড়ান নামে সকাল ১১টা ৯ মিনিটে। তার আগে রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪০ উড়ান শহরে নেমেছে আর ৩৯টি উড়ান শহর ছেড়ে উড়ে গিয়েছে। তারপর থেকে খাঁ খাঁ বিমানবন্দর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy