বেতন বড্ডই কম! কাজের চাপ মোটেও কম নয়। — ফাইল চিত্র।
সিভিক ভলান্টিয়ার। ‘পুলিশ’ তকমা উঠে গেলেও অনেকে এখনও ‘সিভিক পুলিশ’ বলেও ডাকেন। বস্তুত, পুলিশের সহায়তা করার জন্যই এই বাহিনীর জন্ম হয়েছিল বাংলায়। তখনও নামে ‘পুলিশ’ ছিল। পরে তা বদলে যায়। তবে পুলিশের সঙ্গে থাকতে থাকতে সিভিক ভলান্টিয়াররা যে অনেকে নিজেদের পুলিশের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করেন, তার নজিরও বাংলায় বড় কম নেই। আনিস খান হত্যাকাণ্ড তো অনেক বড় বিষয়, আরও বহু বিতর্কে জড়িয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নাম।
মঙ্গলবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ নিয়ে রাজ্য নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে আদালতে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে ‘নির্দেশিকা’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের আইজিকে এই বিষয়ে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে নির্দেশিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিতে হবে।
ফলে সম্প্রতি বাঁকুড়া পুলিশের উদ্যোগে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পাঠ দেওয়ার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের পর মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আবার শিরোনামে এই বাহিনী।
বাম জমানায় এ রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার ছিল না। তবে ২০০৮ সালে কলকাতায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরসভা ‘গ্রিন পুলিশ’ নামে একটি বাহিনী তৈরি করেছিল। যদিও বাহিনী তৈরির মূল উদ্যোগ শুরু হয় ২০১২ সালে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইট বলছে, পুলিশে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় ২০১৩ সালে রাজ্যে ৪০,০০০ পুলিশ এবং ১,৩০,০০০ হাজার ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই ওয়েবসাইটেই বলা রয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে এই বাহিনীতে মোট নিয়োগ হয়েছে ১,১৯,৯১৬ জন।
তবে এঁদের নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। বিরোধীরা রাজ্য সরকারের এই বাহিনীকে শাসক তৃণমূলের ‘ইউনিফর্ম পরা ক্যাডার’ বলেও অনেক সময় দাবি করেছেন। সেই সূত্রেই বাঁকুড়া জেলা পুলিশের উদ্যোগ নিয়েও বিতর্ক বেধেছিল। পরে অবশ্য রাজ্য শিক্ষা দফতর এবং পুলিশের পক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে নয়, তার চৌহদ্দির বাইরে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পড়াবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে পুলিশবাহিনীতেও আলোচনা শুরু হয়েছিল। মূল আপত্তি ছিল বাহিনীর নামে ‘পুলিশ’ শব্দটি নিয়ে। অন্য দিকে, নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে সেই সময় সরব হতে শুরু করেছিল সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ারদের সংগঠন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাহিনীর নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে দেয় রাজ্য সরকার। ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স’ শুধু ‘সিভিক ভলান্টিয়ার্স’ হয়ে যায়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাহিনী তৈরির সময়ে যা ভাবনা ছিল, তাতে পুলিশের ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। ছ’মাস অন্তর ওই চুক্তির পুনর্নবীকরণ হওয়ার কথা। এঁদের দায়িত্ব মূলত যানশাসন ও মেলা-পার্বণে ভিড় সামলানো। নবান্নের তরফে বলা হয়েছিল, জেলা স্তরে কমিটি তৈরি করে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স বাছাই করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক হলেই চলবে। প্রত্যেককে মাসে অন্তত ২০ দিন কাজ দিতেই হবে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল কাজ করলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার ভাল কাজ করলে তাঁকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও পদস্থ আধিকারিকদের ভাবতে বলেন। নবান্ন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অনেক কনস্টেবল পদ খালি রয়েছে। কারণ, অনেক কনস্টেবলের পদোন্নতি হয়েছে। আগামী দিনে আরও পদ খালি হবে। সেখানে ‘দক্ষ’ সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা যায় কি না, তা ভাবার জন্য তাঁর অধীনস্থ স্বরাষ্ট্র দফতরকে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সুযোগ তাঁরাই পাবেন যাঁদের নাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করবেন। এই দায়িত্ব মূলত থাকবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের উপরে। তিনি আবার সুপারিশের জন্য নির্ভর করবেন যে থানা এলাকায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করছেন, সেখানকার ওসি এবং এসডিপিও-র রিপোর্টের উপরে।
এখন রাজ্যে যে নিয়ম, তাতে ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বয়স হলেই সিভিক ভলান্টিয়ার পদের জন্য আবেদন করা যায়। সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে অষ্টম শ্রেণি পাশ। যে থানার অধীনে নিয়োগ হবে, সংশ্লিষ্ট সিভিক ভলান্টিয়ার সেখানকারই বাসিন্দা কি না, তা-ও দেখা হয়। তবে পাশাপাশিই বলে দেওয়া হয়, যাঁরা এই কাজ পাবেন, তাঁরা কোনও ভাবেই নিজেদের ‘স্থায়ী সরকারি কর্মী’ হিসাবে দাবি করতে পারবেন না। সিভিক ভলান্টিয়ার হতে গেলে দু’সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণও নিতে হয়। অনলাইন নয়, অফলাইনেই আবেদন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়।
এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের বেতন মাসে ৯ হাজার টাকা। নতুন নিয়মে মাসে ৩০ দিনই দৈনিক আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। সেই সময় কোনও কারণে বেড়ে গেলেও সে জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। বছরে ১৪টি ‘ক্যাজ়ুয়াল লিভ’ মেলে। অসুস্থতা এবং দুর্ঘটনাজনিত কারণে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিমার সুযোগসুবিধাও দেয় রাজ্য সরকার।
এই বাহিনীর সদস্যেরা ঠিক কী কী কাজ করেন, সেটাই ‘নির্দেশিকা’ আকারে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে হাইকোর্টে। সম্প্রতি এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে সরশুনা থানার বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার ওই যুবককে তুলে নিয়ে যান। সঙ্গে পুলিশও ছিল। তার পর থেকে আর ওই যুবককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পরেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। যুবকের পরিবারের আইনজীবী নিহত আনিস খানের প্রসঙ্গ তোলেন। সেখানেও সিভিক ভলান্টিয়ার যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেই মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy