বিতর্কিত তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি। যাঁর ব্যালটপেপার খাওয়া নিয়ে শোরগোল রাজ্য জুড়ে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
হারছিলেন ৪ ভোটে। তখনই উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার ভুরকুণ্ডা গ্রামের ৩১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি নাকি এক গোছা ব্যালট পেপার টেবিল থেকে তুলে গিলে ফেলেন! এমনই অভিযোগ করেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে-নামা সিপিএম প্রার্থী। এর পরে ওই বুথের ভোটগণনাও স্থগিত হয়ে রয়েছে। কিন্তু সমাজমাধ্যমে মহাদেবকে নিয়ে মিমের শেষ নেই। কেউ বলছেন ‘মহাদেব ব্যালট’, কেউ লিখছেন ‘সর্বভূক তৃণমূল’। কেউ দেখাচ্ছেন রেস্তোরাঁয় গিয়ে অর্ডার দিচ্ছেন, ‘‘ফোর ফ্রায়েড ব্যালট্স উইথ এক্সট্রা চিজ়!’’
ওই অভিযোগে ওঠার পর থেকেই একটু আড়ালে চলে গিয়েছিলেন মহাদেব। বাড়িতে, পাড়ায় সর্বত্র তাঁকে নিয়ে আলোচনা। এরই মধ্যে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলেন তৃণমূলের ‘একনিষ্ঠ’ কর্মী।
প্রশ্ন: আপনি কী খেতে ভালবাসেন?
মহাদেব: আচমকা এই প্রশ্ন কেন? গরিব মানুষ আবার কী খাবে! ডাল-ভাত-তরকারি সবই খাই। মাছ-মাংস পেলে তাও।
প্রশ্ন: না, আপনার সবচেয়ে প্রিয় খাবার কী?
মহাদেব: বুঝেছি। রটনা নিয়ে বলতে চাইছেন তো! আমি সবচেয়ে ভালবাসি চা। যে যখন দেয় খেয়ে নিই।
প্রশ্ন: তা বলে ব্যালটপেপার! খেয়েও নিলেন?
মহাদেব: এটা কেমন জানেন তো? কেউ বলল কাকে কান নিয়ে গিয়েছে! অমনি কাকের পিছনে ছোটা। কেউ প্রমাণ করতে পারবে আমি ব্যালট পেপার খেয়েছি?
প্রশ্ন: আমার তো প্রশ্ন ছিল, ব্যালটপেপার কেমন খেতে? কী করে গেলা যায়?
মহাদেব: শুনুন বলছি। আমি অত বোকা নই। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন আমি জিতছিলাম। তাই ব্যালট নষ্ট করার কোনও মানেই হয় না। আর যদি বলাও হয়, এক বার ভেবে দেখুন তো! ব্যালটপেপার কখনও খাওয়া যায়? ওতে তো ভোটের কালি রয়েছে। তাতে অ্যাসিড থাকে। খেয়ে ফেললে আমি কি বাঁচতাম?
প্রশ্ন: সিপিএম প্রার্থী তো বলেছেন, আপনি ব্যালটপেপার খেয়েছেন। আপনার দলেরও অনেকে বলছেন যে, তিন-চারটে খেয়ে থাকতে পারেন।
মহাদেব: সিপিএম তো হেরে যাচ্ছিল বলে বলেছে। আর দলের কে, কী বলছেন আমি জানি না। তবে আমি জানি আমি খাইনি। আর যদি বিশ্বাস না হয়, তবে আমার পেটের এক্স-রে করা হোক। দেখা যাক না পেটে কী রয়েছে!
প্রশ্ন: আপনি জোর দিয়ে বলছেন ঠিকই। কিন্তু আপনি ব্যালটপেপার খেয়ে নিয়েছেন, এই অভিযোগ ওঠার পরে গণনা স্থগিত রয়েছে আপনার বুথের। সবটাই কি অসত্য?
মহাদেব: আমিও প্রশ্ন করছি। যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁদের আমি ২০টা দশ টাকার নোট দিচ্ছি। জলও দিচ্ছি। খেয়ে দেখান তো কেউ একটা! তার পরে আমি কথা বলব।
প্রশ্ন: আপনার বাড়িতে কে কে রয়েছেন?
মহাদেব: আমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। সবাই আলাদা আলাদা থাকি। মা-বাবা মারা গিয়েছেন। আমি স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে থাকি।
প্রশ্ন: সন্তানেরা কত বড়?
মহাদেব: বড়টা ছেলে। বারো ক্লাসে পড়ে। আর মেয়ে ক্লাস ফাইভ।
প্রশ্ন: ওদের বন্ধুবান্ধবেরাও তো নিশ্চয়ই আপনার সম্পর্কে কিছু বলছে। সমাজমাধ্যমেও ওরা ব্যঙ্গবিদ্রূপ দেখছে। কিছু বলছে না?
মহাদেব: কেন বলবে? বাকিদের থেকে তো ওরা নিজের বাবাকে বেশি চেনে। আমার একটা মুদিখানার দোকান রয়েছে। এ ছাড়া মাছও বিক্রি করি। বাকি সময়টা মানুষের সঙ্গে থাকি। রাজনীতি করি। ছেলেমেয়েরা বলছে, যে যাই বলুক বাবা, তুমি তোমার কাজ করে যাও।
প্রশ্ন: রাজনীতি কবে থেকে করছেন?
মহাদেব: ছাত্রজীবন থেকেই। তখন কংগ্রেস। মা চোখে দেখতে পেতেন না ভাল। আমি তো মায়ের ভোট দিতে যেতাম! ক্লাস নাইন অবধি গ্রামের স্কুলে পড়েছি। তার পর তৃণমূলের শুরু থেকেই রাজনীতি করি। বাবা চাষবাস করতেন। বরাবরই আমরা গরিব। এখনও টিনের ঘরে থাকি। এক দিন এসে দেখে যান না! আমার ৩৮ বছর বয়স হয়ে গেল। কেউ কোনও দুর্নীতির অভিযোগও করতে পারবে না। যা আয় করি তারও অনেকটাই দলের জন্য, গরিবদের জন্য খরচ করি।
প্রশ্ন: কিন্তু সত্যি-মিথ্যা প্রমাণসাপেক্ষ হলেও আপনার তো একটা নতুন পরিচয় হয়ে গেল। ব্যালটপেপার খাওয়া মহাদেব। কষ্ট হচ্ছে না?
মহাদেব: কষ্টের কী আছে? অভিযোগ মানেই তো সত্যি নয়! প্রমাণ হোক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও তো কত অভিযোগ! কিন্তু আমাদের নেতা সম্পর্কে কি কোনও কিছু কেউ প্রমাণ করতে পেরেছে? পারেনি। আমারটাও পারবে না। কারণ, আমি খাইনি।
প্রশ্ন: পঞ্চায়েত সদস্য হতে চেয়েছিলেন। সেটা কি আর সম্ভব হবে?
মহাদেব: সে আমি জানি না। যখন গণনা শেষ হয়েছে, তখন আমি ২৬ ভোটে জিতছিলাম। অসত্য অভিযোগ তোলা হল। এখন যা হওয়ার হবে। তবে আমি চাই, অভিযোগ করলেই হবে না। প্রমাণ দেওয়া হোক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy