কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। ফাইল চিত্র।
অবশেষে কি আত্মসমর্পণ করলেন কেএলও প্রধান তথা জঙ্গি নেতা জীবন সিংহ? শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সেন্ট্রাল আইবি) একটি সূত্র দাবি করেছে, জীবন সদলবল আসাম রাইফেলসের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি প্রকাশিত না হওয়ায়, ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রের দাবি, জীবনেরা গত কয়েক দিন নাগাল্যান্ডের মন জেলার অন্য পারে মায়ানমারের শিবির গোটাচ্ছিলেন। তাঁরা ভারতে ফিরতে তৈরি— এই বার্তা আসাম রাইফেলসকে পাঠানোর পরে, বৃহস্পতিবার আসাম রাইফেলসের দল মন জেলায় যায়। ভারত-মায়ানমারের সীমান্ত সমঝোতা অনুযায়ী, দুই দেশের মানুষই সীমান্তের ও-পারে ১৬ কিলোমিটার যাতায়াত করতে পারেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রের দাবি, ওই এলাকায় জীবনকে আত্মসমর্পণ করানো হয়। এমনকি, শুক্রবার রাতে তাঁকে অসমে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সূত্রটি। জীবন যে এর মধ্যে দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছিলেন তা মেনেছেন তাঁর বোন সুমিত্রা বর্মণও। তিনি বলেন, “দশ-বারো দিন আগে, অন্যের ফোনের মাধ্যমে দাদার সঙ্গে কথা হয়। দাদা সে দিন জানিয়েছিলেন, দ্রুত ফিরে আসবেন।’’ একই সঙ্গে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘কিন্তু দাদা যে এ দিন দেশে ফিরেছেন, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নই।”
সংশয় রয়েছে জীবনের দাবিদাওয়া কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়েও। নব্বইয়ের দশকে পৃথক কামতাপুরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন জীবন। ১৯৯৫ সালে কেএলও-র জন্ম। সার্বভৌম কামতাপুরের দাবিতে এর পরে হাতে একে-৪৭, একে-৫৬-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নেন জীবন ও তাঁর সঙ্গীরা। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার পর্যন্ত এলাকা ছিল তাঁদের মূল বিচরণক্ষেত্র। কেএলও গঠনের পরেও জীবন গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালে অসম পুলিশ কেএলও-র বাকি নেতাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানোর জন্য জীবনকে ছেড়ে দেয়। জীবন ফের জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি তখন কখনও বাংলাদেশে, কখনও ভুটানে শিবির করে থাকতেন। ২০০৩ সালে ভুটানের শিবিরে সেনাবাহিনীর অভিযানের পরে একে একে জীবনের বোন সুমিত্রা, ভগ্নীপতি ধনঞ্জয় বর্মণ, সহ-সভাপতি হর্ষবর্ধন, সেনাধ্যক্ষ টম অধিকারী কৈলাশ কোচের মতো কেএলও-র শীর্ষ নেতারা আত্মসমর্পণ করেন। জীবন তখন মায়ানমারে পালিয়ে যান বলে দাবি।
সূত্রের দাবি, সম্প্রতি উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি এবং অন্যান্য অসুস্থতা তো আছেই, তা ছাড়া জীবনের পাশে এখন আর প্রথম সারির কেউ নেই। এই পরিস্থিতিতে গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ইচ্ছেয় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার মধ্যস্থতায় জীবনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। গত ১৫ অগস্টও জীবনের আত্মসমর্পণ করে দিল্লি যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। সম্প্রতি জীবন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেন, ১৯৪৯ সালের একত্রীকরণ চুক্তির ভিত্তিতে পৃথক কামতাপুর রাজ্য দিতে রাজি হয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাই আত্মসমর্পণ করছেন জীবন।
কিন্তু বাস্তব এবং বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ বলছেন পৃথক কামতাপুর রাজ্যে পথে বিস্তর বাধা রয়েছে। এই রাজ্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অসমকে ভাগ করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ ভাগের বিষয়টি আপাতত তাঁদের মাথায় নেই। এই নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কোনও প্রচারে যেতেও মানা করা হয়েছে। অসম বিভাজনের কথাও মানতে চাননি হিমন্ত।
এই পরিস্থিতিতে ঠিক কোন শর্তে জীবন আত্মসমর্পণ করতে পারেন, তা নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy