সুনসান: আমজাদ শেখের বাড়ি। শুক্রবার কীর্ণাহারে। নিজস্ব চিত্র
ভরসা রয়েছে আল্লার উপরে— খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে রায় ঘোষণার পরে এমনই বলছেন ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজলের মা মমতাজ বেগম। চোখের জল বাঁধ না মানলেও, বিশ্বাস হারাতে নারাজ তিনি। শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের রায় শোনার পরে তিনি বলছেন, ‘‘আমার ছেলে নির্দোষ। আল্লার বিচারে ও এক দিন বেকসুর খালাস পাবেই।’’ এখন থেকেই ছেলের ঘরে ফেরার দিন গুণছেন আমজাদের শয্যাশায়ী বাবা সুকুর শেখও।
‘‘সাজায় কেউ খুশি হয়?’’— সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে এ কথা বলে কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকলেন সুকুর শেখ। তার পরে বললেন, ‘‘তবু হাজতে পড়ে থেকে জীবনটা শেষ করার থেকে এই ভাল! কয়েক বছর পরে হলেও ছেলেটা আমার ঘরে ফিরবে ভেবে খুব হালকা লাগছে।’’
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে শুক্রবার আট বছরের সাজা ঘোষণা হয়েছে আমজাদের। সন্ধ্যার দিকে সেই খবর শুনেই কীর্ণাহারের বাড়িতে ছেলের নানান পরীক্ষার রেজাল্ট বের করে বসেছিলেন সুকুর। তাঁর পাশে তখন আমজাদের স্ত্রী নাদিরা আর তাঁদের বছর ছয়েকের মেয়ে আফিয়া। নাদিরা বলেন, ‘‘বাবার হাত-পা আর চলে না। নানা রোগে ভুগছেন। নিজের মুদি দোকানটাও এখন আর
খুলতে পারেন না। তবু আজ ছেলের জন্য সকাল থেকে শান্ত হয়ে বসতে পারেননি।’’ সুকুর জানান, আমজাদ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল। পরীক্ষায় প্রতি বারই ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছে। ইংরেজি নিয়ে পড়ে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিতেও যোগ দিয়েছিল। তার মধ্যেই ওই বিস্ফোরণে বদলে যায় সব কিছু।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জঙ্গিদের বিস্ফোরক-সহ রাসায়নিক সরবরাহের অভিযোগ ছিল কীর্ণাহার কাজী মার্কেটের অন্যতম মালিক সুকুর শেখের ছেলে আমজাদের বিরুদ্ধে। আদালতে তার স্বামী দোষ কবুল করে নিলেও নাদিরার দাবি, ‘‘ও বিস্ফোরণে জড়িত ছিল না। ওর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিস্ফোরণের উপকরণ কেনা হয়েছিল।’’ নাদিরা এ কথা বললেও এনআইএ আমজাদের মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১০ লক্ষ টাকা। ২০১৪ সালে আমজাদ
তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়ে। এনআইএ দাবি করেছিল, তারা আমজাদকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সুকুর শেখ দাবি করেন, তিনি-ই এনআইএ আধিকারিকদের হাতে ছেলেকে তুলে দিয়েছেন।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা যায়, কীর্ণাহার সংলগ্ন নিমড়া, কাফেরপুরের মতো গ্রামের কয়েক জনের নামও জড়িয়েছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে। ওই কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদ্দিনের নেতা কওসরের শ্বশুরবাড়ি নিমড়া গ্রামে। সেই সূত্রে ওই গ্রামে কওসরের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কওসরের শ্যালক কদর কাজী ওরফে কদর শেখের সঙ্গেও বিস্ফোরণের যোগসূত্র মেলে। কদরের সঙ্গে আমজাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত আব্দুল করিমের বাড়ি কাফেরপুর গ্রামে। এক সময় ওই গ্রামে বাড়ি ছিল সুকুর সেখেরও। করিমের বাবা, আনাজ বিক্রেতা জামসেদ শেখ তাঁর নিকট আত্মীয়। সেই সূত্রে করিমের সঙ্গেও আমজাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, খাগড়াগড় কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তথা জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের ‘বর্ধমান মডিউল’-এর প্রধান সাজিদের সূত্রে আমজাদ জঙ্গি কার্যকলাপে নাম লেখায়। আমজাদ বাংলাদেশের ‘জেএমবি’-র সদস্য। বর্ধমানের শিমুলিয়া এবং মুর্শিদাবাদের মুকিমনগর মাদ্রাসায় জেএমবি-র প্রশিক্ষক কম্যান্ডারদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। এ
রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জেএমবি জঙ্গিদের সে রাসায়নিক ও বিস্ফোরক সরবরাহ করত।
সুকুর শেখের দুই মেয়ে, এক ছেলে। আমজাদ কলকাতার শেক্সপিয়র সরণিতে একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থায় কাজ করত। সেই সূত্রে বিস্ফোরক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সংগ্রহ করা তার পক্ষে সহজ ছিল। বিভিন্ন ভাবে ওই সব রাসায়নিক সংগ্রহ করে সে বেলডাঙা, খাগড়াগড়ে সরবরাহ করত। আমজাদ নিজেও আইইডি তৈরিতে দক্ষ বলে দাবি ছিল তদন্তকারী সংস্থার। তার আক্রা-সন্তোষপুরের ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দারা আইইডি তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক কেনার রসিদ পেয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy