Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

খাগড়াগড় কাণ্ডে সাজা গুলসোনার

সাধারণ নয় বলেই তো বিস্ফোরণে স্বামী মারা গেলেও তার চোখে এক ফোঁটা জল দেখেনি কেউ। সাধারণ নয় বলেই ঘরের মেঝেয় রক্ত মুছে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সে ঢুকতে  বাধা দিয়েছিল পুলিশকে।

স্বামীর শেষকৃত্যে সে দিন আনা হয়েছিল খাগড়াগড় কাণ্ডে যুক্ত গুলসোনা ওরফে রাজিয়া বিবি। ফাইল চিত্র

স্বামীর শেষকৃত্যে সে দিন আনা হয়েছিল খাগড়াগড় কাণ্ডে যুক্ত গুলসোনা ওরফে রাজিয়া বিবি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
করিমপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৫
Share: Save:

পাঁচটা বছর কেটে গিয়েছে। শান্ত, ভদ্র যে মেয়েটিকে কাপড় ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে দেখেছিল বারবাকপুর গ্রাম, সে যে ‘সাধারণ মেয়ে’ নয়, তা গ্রামবাসী কবেই জেনে গিয়েছে।

সাধারণ নয় বলেই তো বিস্ফোরণে স্বামী মারা গেলেও তার চোখে এক ফোঁটা জল দেখেনি কেউ। সাধারণ নয় বলেই ঘরের মেঝেয় রক্ত মুছে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল পুলিশকে।

সাধারণ মেয়ে নয় বলেই তো টানা জেরার সময়ে তদন্তকারীদের বারবার সে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করে গিয়েছে। কোলের বাচ্চাকে চিমটি কেটে কাঁদিয়ে দুধ খাওয়ানোর অছিলা করে জেরা বন্ধ করিয়েছে। কিন্তু সেই বাচ্চাই যখন অস্থির হয়ে কান্নাকাটি জুড়ে তখন ‘জিহাদি’র ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে এক ‘সাধারণ’ মা।

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার দায়ে বারবাকপুরের সেই গুলসোনা ওরফে রাজিয়া বিবি ওরফে রুমি শামিমকে ছ’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তার মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর অবশ্য পেরিয়েই গিয়েছে।

রাজিয়ার স্বামী শাকিল আহমেদ যখন প্রথম গ্রামে আসে, তাকেও ভারী সুবোধ বলে মনে হয়েছিল গ্রামবাসীর। সাইকেলে চেপে মেয়েদের পোশাক বিক্রি করতে গ্রামে আসত সে। কেউ জানত না যে সে আসলে বাংলাদেশি জঙ্গি এবং নাশকতার ছক কষছে। গোপনে তৈরি করছে বিস্ফোরক, দিশি কার্তুজ, গ্রেনেড। সে যখন রাজিয়ার বাবা আজিজুল গাজির কাছে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তিনি রাজি হয়ে যান। বোঝেননি, কী বিপদ ডাকছেন। ২০০৭ সালে রাজিয়া আর শাকিলের বিয়ে হয়। তিন দিন গ্রামে কাটিয়ে তারা চলে যায়।

এর পরে দীর্ঘদিন আর তাদের দেখা মেলেনি। তিন বছর পরে এক বার ফিরে এসে আজিজুলকে তারা অনুরোধ করে, যাতে শাকিলকে ছেলে বলে দেখিয়ে বারবাকপুরের ঠিকানায় ভোটার কার্ড জোগাড় করে দেন। তাঁর ছোট মেয়ে রাজিয়ার যে তত দিনে মগজ ধোলাই হয়ে গিয়েছে, বৃদ্ধ বোঝেননি। তিনি ভোটার কার্ড করিয়ে দেন। তার পরে তারা চলে যায়, আর আসেনি। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি ভাড়াবাড়িতে ঘটে বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই শাকিল-সহ দু’জন মারা যায়। এক জন মারাত্মক জখম। রাজিয়া এবং আলিমা বিবি নামে আর এক মহিলা ধরা পড়ে। বারবাকপুর চমকে ওঠে!

এর পরে বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র অফিসারেরা আজিজুলের বাড়িতে এসেছেন। বাড়ির লোকেদের জেরাও করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

বছর চারেক হয়ে গেল আজিজুল গাজি মারা গিয়েছেন। মামলা কোন পথে চলেছে, বাড়ির লোকজন খবর রাখেননি। এ দিন যখন কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সাজা শোনানো হয়, বাড়ির কেউ সেখানে যানওনি।

পড়শির টিভিতে রায় শুনে সন্ধ্যায় রাজিয়ার মা জাহিমা বেওয়া বলেন, “দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল আমাদের। রাজিয়া ছিল ছোট। শাকিল বাংলাদেশি হয়েও নাম ভাঁড়িয়ে ওকে বিয়ে করেছিল। কয়েক বার কলকাতায় আমি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। তদন্তের সময়ে আমরা যেটুকু জানতাম, সব বলেছি। এখন খুব একা, কষ্টে দিন কাটে।’’

তাঁদের সেই শান্ত, ভদ্র, কখনও চোখ তুলে কছা বলা মেয়েটা যে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত তা অবশ্য জাহিমা এখনও মানতে পারেন না। তিনি বিড়বিড় করেন, ‘‘জামাই যুক্ত থাকলেও মেয়ে আমার দোষী নয়। সে যে কী ভাবে এ ঘটনায় জড়িয়ে গেল, বুঝতে পারলাম না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Khagragarh Blast Imprisonment Gulsona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy