Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘দেখে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিল’

ছোট মেয়ে অর্থাৎ বারবাকপুরের গুলসোনা ওরফে রাজিয়া বিবি ওরফে রুমি শামিম। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার দায়ে যাকে গত শুক্রবার ছ’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

খাগড়াগড় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত গুলসোনা বিবির মা জাহিমা বেওয়া। নিজস্ব চিত্র

খাগড়াগড় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত গুলসোনা বিবির মা জাহিমা বেওয়া। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:০৯
Share: Save:

আফসোস-অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন জাহিমা বেওয়া আর মফিকুল গাজি। চোখের জলে ভেসে বার বার জানাচ্ছেন, তাঁরা একটু সচেতন হলে, আরও একটু খোঁজখবর নিলে বাড়ির ছোট মেয়ের জীবন এ ভাবে নষ্ট হওয়ার থেকে হয়তো বেঁচে যেত।

ছোট মেয়ে অর্থাৎ বারবাকপুরের গুলসোনা ওরফে রাজিয়া বিবি ওরফে রুমি শামিম। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার দায়ে যাকে গত শুক্রবার ছ’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। টেলিভিশনে সেই খবর শোনেন তার মা জাহিমা এবং একমাত্র ভাই মফিকুল। শনিবার নিজের বাড়িতে বসেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছে জাহিমা বলেন, “আমাদের ভুলেই মেয়েকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।” তাঁর কথায়, ‘‘২০০৭ সালে শাকিলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। শাকিলকে বিশ্বাস করা অনুচিত হয়েছে। ও বাংলাদেশের বুঝতে পারিনি। একটু খোঁজ নেওয়া উচিৎ ছিল ওর সম্পর্কে। আসলে দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে খুব অভাবের সংসার ছিল। রাজিয়া ছিল ছোট। বিয়ে ঠিক হয়ে যেতে আর দেরি করতে চাইনি। তাড়াহুড়োর ফল আজ ফল ভুগছি।’’

স্থানীয় মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শাকিলের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজিয়ার। পরিবারের লোক ও পাড়াপ্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই ঘরোয়া, শান্ত মেয়ে কেমন যেন বদলে গিয়েছিল।

শনিবার রাজিয়ার পিসি আনোয়ারা বেগম জানান, খুব কম বাপের বাড়ি আসত রাজিয়া। বিয়ের বছর তিনেক পরে এক বার এসেছিল। তার পর বিস্ফোরণের কয়েক দিন আগে রাজিয়া তার বড় ছেলে আব্দুল্লা ও মেয়ে নাহিদাকে বাপের বাড়ি দিয়ে যান। বলে যান, কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। তার ক’দিনের মধ্যেই সেই ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি ভাড়াবাড়িতে ঘটে বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই শাকিল-সহ দু’জন মারা যায়। এক জন মারাত্মক জখম। রাজিয়া এবং আলিমা বিবি নামে আর এক মহিলা ধরা পড়ে।

চোখের সামনে স্বামীকে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হতে দেখেও ঠাণ্ডা মাথায় ঘরের মেঝেয় রক্ত মুছে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল রাজিয়া। শুনে চমকে উঠেছিল বারবাকপুর। সেই ঘটনার এক বছর পরে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রাজিয়ার বাবা আজিজুল গাজির মৃত্যু হয়। রাজিয়ার ছেলে দশ বছরের আব্দুল্লা গাজি এখন দিদিমা জাহিমা বেওয়ার কাছে থাকে। আট বছরের মেয়ে নাহিদা থাকে নাজিরপুরে মাসি মেরিনা বিবির কাছে। ছোট মেয়ে সাদিয়া খাতুন মায়ের সঙ্গেই জেলে রয়েছে। সাজা ঘোষণার দিন পরিবারের কেউ আদালতে যাননি। রাজিয়ার একমাত্র ভাই মফিকুল গাজি বলেন, “শাকিলের সঙ্গে বিয়ে না হলে এত সব কিছু হত না। তবে আর এক বছর পরেই দিদি বাড়ি ফিরবে। বাচ্চারা তাদের মাকে কাছে পাবে। দিদিকে এখানেই রাখব।’’

ঘটনায় জড়িত উনিশ জনের সাজা ঘোষণার পরে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জহিরুল শেখের পরিবারের। পাঁচ বছর লুকিয়ে থাকার পর অগস্টের ১৩ তারিখ মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌর থেকে গ্রেফতার হয় থানারপাড়ার জহিরুল। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ নিয়ে বর্ধমান চলে গিয়েছিল সে। বারাকপুরের মেয়ে খানসা বিবিকে বিয়ে করে। দুটি ছেলেমেয়েও হয়। তারাও বর্ধমানেই ছিল। বিস্ফোরণের পর জাতীয় তদন্ত সংস্থা একাধিক বার খানসা বিবিকে জেরা করে। তাঁর কোনও সাজা হয়নি। তিনি ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকেন।

বাড়িতে সদ্য ধৃত জহিরুল শেখের বাবা জুয়াদ আলি ও মা ফাতেমা বিবি। নিজস্ব চিত্র

শনিবার সেখানেই জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলী শেখ বলেন, “তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, আমরা যেন জহিরুলকে আত্মসমর্পণ করতে বলি। কিন্তু ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ছেলে তখন ধরা দিলে এত দিনে ওর বিচার শেষ হয়ে যেত। এখন কী হবে কে জানে?” বাড়ির দাওয়ায় বসে জহিরুলের মা কেঁদে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ছেলেকে চোখে দেখতে পাইনি। সবাই বলে ও জঙ্গি। বুকটা হু হু করে আমার।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy