এনআইএ-র দাবি, বেলডাঙায় শাকিলের এই দোকানেই আড়ালে নকশা তৈরি হত নাশকতার। নিজস্ব চিত্র
সরু লম্বাটে লোহার সিঁড়ি। তার পর ফিতের মতো এক ফালি বারান্দা। পর পর দোকান। সেই নিঃশব্দ বারান্দার প্রথম দোকানের ম্লান সাইনবোর্ডটা শুক্রবার দুপুরে দপ করে জ্বলে উঠল যেন— ‘বোরখা ঘর’।
খাগড়াগড় কান্ডের সুতোয় জড়িয়ে যাওয়া জনা তিরিশ অভিযুক্তের সঙ্গে ‘বোরখা ঘর’-ও হয়ে উঠেছিল একটা জ্যান্ত নাম!
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনআইএ-র চোখ পড়েছিল যাদের উপরে সেই তালিকায় প্রথম দিকেই ছিল বেলডাঙার শাকিল আহমেদ আর নাসিরুল্লা। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে আর পাঁচটা গ্রামীণ মানুষের আটপৌরে সংসার পেতেছিল শাকিল। বেলডাঙার ফরাজিপাড়ায় তার এক চিলতে ভাড়া বাড়ি আর বড়ুয়ামোড়ের ওই দোকান। তদন্তকারীদের দাবি, আদ্যন্ত ভুয়ো পরিচয় দিয়ে শাকিল ব্যবসা ফেঁদেছিল বেলডাঙায়। দিন কয়েকের মধ্যেই সেখানে পা পড়েছিল আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা নাসিরুল্লার। তদন্তকারীদের খাতায় যার সাবেক নাম ‘হাতকাটা নাসিরুল্লা’। বিস্ফোরণের পাঁচ বছর পরেও যার খোঁজ পায়নি এনআইএ। আর শাকিল, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
এনআইএ-র দাবি, ওই ‘বোরখা ঘরে’-ই সার দিয়ে টাঙানো বোরখা আর শালোয়ার-কামিজের আড়ালে তৈরি হয়েছিল বিস্ফোরণের ব্লু প্রিন্ট। এনআইএ-র এক অফিসার বলছেন, ‘‘যে দোকানের সামনে ঝোলানো থাকত কালো কাপড়, আর ভেতরে বোরখা তৈরির আড়ালে নকশা তৈরি হত নাশকতার।’’ আপাতত সে দোকান সিল করে দিয়ে গিয়েছে এনআইএ।
বিস্ফোরণের পরে ‘বোরখা ঘর’ নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হতেই বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ের ওই এক ফালি দোকানটা হাঁ করে দেখতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তা দিয়ে ছুটন্ত বাসও খানিক থমকে যেত দোকানের সামনে, জানলা দিয়ে ঝুঁকে পড়ে ‘বোরখা ঘর’ জরিপ করতের যাত্রীরা।
বেলডাঙার ফরাজিপাড়ায় ছোট্ট একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন শাকিল। বৌ-বাচ্চা নিয়ে দিব্যি ছিল তার আটপৌরে সংসার। তবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে মারা যাওয়ার পরে ফরাজিপাড়ায় তার ঘরে পড়েছিল তালা। এনআইএ-র জেরায় জেরবার হয়ে পড়েছিলেন ফরাজি পাড়ায় শাকিলের বাড়িওয়ালা। শেষতক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দু’বছর আগে মারা যান তিনি। আইনুলের ভাই আসলাম বলছেন, ‘‘দাদা গোয়েন্দাদের সামনে গিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করেছেন ঠিকই। কিন্তু বড্ড চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। বুকের ব্যামো ধরল। বিনা দোষে মারাই গেলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy