কেমপা হোন্নাইয়া
বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চে বসতে যেতেই মহিলা হাঁ-হাঁ করে উঠেছিলেন— ‘‘আরে, দেখছেন না, বেঞ্চে নোংরা!’’
কেমপা বলেছিলেন, ‘‘আমি তো দেখতে পাই না।’’ দু’চোখে রোদচশমা দেখে বাইরে থেকে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। বেঞ্চ সাফ করে মহিলা হাত ধরে বসিয়ে দেন কেমপা-কে। হাত বাড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি অচিন্ত্যা।’’
সে-দিন বাসস্ট্যান্ডে বসেই জমে ওঠে আলাপ। অচিন্ত্যা বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। বদলে যায় কেমপার জীবন। এমনই এক বন্ধুর বড় প্রয়োজন ছিল। সেই বন্ধু পরে তাঁর সংসারের হাল ধরেন। অচিন্ত্যা-কেমপার এখন দুই ছেলে।
অচিন্ত্যার সাহায্য নিয়ে আইএএস পাশ করে বঙ্গ প্রশাসনে যোগ দিয়েছেন কেমপা। এই রাজ্যে আগে কোনও দৃষ্টিহীন আইএএস অফিসারের কথা প্রশাসনের কেউ মনে করতে পারছেন না। কেমপার ব্যাচের আরও এক জন দৃষ্টিহীন আইএএস অফিসার প্রাঞ্জল পাটিল যোগ দিয়েছেন কেরলে। ২০০৬ সালে প্রথম দৃষ্টিহীন আইএএস হিসেবে অবশ্য মধ্যপ্রদেশে যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণগোপাল তিওয়ারি।
কর্নাটকের টুমকুর জেলায় চৌরানাকুপ্পে গ্রামে হোন্নাইয়া ও মুনিয়াম্মার ছোট ছেলে কেমপা হোন্নাইয়া। সুস্থ-সবল ছেলের চোখের সামনে আচমকাই নেমে আসে অন্ধকার। কেমপা তখন ক্লাস থ্রি। চিকিৎসা করিয়ে কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দৃষ্টি ফিরবে না। তত দিনে গাছ থেকে পড়ে দুই পা অবশ হয়ে গিয়েছে কেমপার দাদার। কেমপাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মহীশূরে দৃষ্টিহীনদের স্কুলে। সেখান থেকে জুনিয়র কলেজ। কন্নড় সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। আর তখনই বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয়ে যায় অচিন্ত্যার সঙ্গে।
২০০৯ সালে কলেজে পড়াতে শুরু করেছিলেন। কেমপার কথায়, ‘‘বলতে পারেন, জেদ করে বিয়ে করে অচিন্ত্যা। আমি বুঝিয়েছিলাম, দৃষ্টিহীন মানুষকে বিয়ে করলে জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। ও শোনেনি। গ্রামে গিয়ে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছে। ২০০৯ সালে আমাদের বিয়ে হয়।’’
২০০৯, ২০১১ এবং ২০১৩— তিন বার কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসে পাশ করতে পারেননি কেমপা। ২০১৩ সালে কর্নাটক রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পান। কিন্তু মামলার জেরে যোগ দিতে পারেননি। আইএএস হবেন বলে জেদ চেপে যায়। পাশ করেন ২০১৬ সালে।
এত বড় চাকরি! কী করে এত সব ম্যানেজ করবেন? ‘‘আমার দৃষ্টি না-থাক, ‘ভিশন’ আছে, অন্তর্দৃষ্টি আছে,’’ বললেন প্রত্যয়ী আইএএস অফিসার।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy