Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কেন ভুগবে চলে যাও, বললেন কাশ্মীরিরাই 

গ্রামের ১২ জন যুবক কাশ্মীরের কুলগামে আপেল বাগানে দিনমজুরি করতে গিয়েছিলেন। ফিরতে পেরেছেন মাত্র ৫ জন। বাকিরা কুলগামেরই অন্য একটি বাগানে কাজ করেন।

জম্মুতে র‌্যাফ।—ছবি এপি।

জম্মুতে র‌্যাফ।—ছবি এপি।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

বাড়ি ফেরার পরেও ঘুমের মধ্যে চমকে উঠছেন জাকির, মেহেবুব, ফিরোজ, শামিমরা। ভারী বুটের শব্দ। সুনসান রাস্তায় আচমকা সেনা জিপের রাস্তা আটকে দাঁড়ানো। ঘুমের মধ্যে বারবার ফিরে আসছে সব। কুলগাম থেকে উত্তর দিনাজপুরের ঘরধাপ্পা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেও কাশ্মীর যেন পিছু ছাড়ছে না শামিমদের।

গ্রামের ১২ জন যুবক কাশ্মীরের কুলগামে আপেল বাগানে দিনমজুরি করতে গিয়েছিলেন। ফিরতে পেরেছেন মাত্র ৫ জন। বাকিরা কুলগামেরই অন্য একটি বাগানে কাজ করেন। শামিম বলেন, ‘‘ওদের হাতে যথেষ্ট টাকাও নেই। কী ভাবে কী জুটছে, জানি না।’’ ঘরধাপ্পায় তাই ইদের দিনেও অনেক বাড়িতে রান্না চাপেনি। কাশ্মীরে আটকে রয়েছেন কাশিম। তাঁর স্ত্রী নাদিরা বলেন, ‘‘আট দিন স্বামীর খবর পাইনি। এখানে কী করে উৎসব করব!’’

তবে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন বলেই বিশ্বাস জাকির, শামিমদের। শামিমরা জানাচ্ছেন, ১ অগস্ট থেকে আচমকা পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। সেনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয় উপত্যকা। ৪ অগস্ট থেকে দোকানপাট, গাড়ি চলাচল সবই যেন এক রকম বন্ধ হয়ে গেল। যেটুকু চাল-ডাল ছিল, তাই দিয়ে রান্না হত। তার পর ইন্টারনেট বন্ধ হল। দু’দিন পরে ফোনও বন্ধ। পাঁচ বছর ধরে কাশ্মীরে কাজ করছেন জাকির। দু’বেলা খাবার আর দৈনিক পাঁচশো টাকা মজুরি। তাঁর কথায়, ‘‘ভালই ছিলাম। মাঝে মধ্যে সামান্য গোলমাল হত। কিন্তু এ বার যা হল, তা কখনও দেখিনি।’’ জাকির বলেন, ‘‘কাশ্মীরিদের কয়েক জনই বললেন, আমাদের যা হওয়ার হবে, তোমরা কেন গোলমালে পড়বে। তোমরা চলে যাও।’’ তাঁরাই একটি ছোট গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন।

সেই গাড়িতে ৮ অগস্ট গভীর রাতে বাগান ছাড়েন জাকিররা। জম্মু পৌঁছন পরের ভোরে। গোটা রাস্তায় বারবার সেনা জওয়ানেরা রাস্তা আটকেছেন। জোরালো আলোয় তল্লাশি হয়েছে। জাকির বলেন, ‘‘একের পর এক প্রশ্ন। জওয়ানদের হাতে চকচক করছে আগ্নেয়াস্ত্র। ভয় দেখায়নি। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছিলাম।’’ সেই ভয় কাটে জম্মু থেকে দিল্লিতে পৌঁছনোর পরে। সেখান থেকে ট্রেনে কিসানগঞ্জে পৌঁছেছেন সোমবার সকালে। কিন্তু কাশ্মীর এখনও তাঁদের সঙ্গ ছাড়েনি।

প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্য সরকার সবাইকে ফেরাতে উদ্যোগী হচ্ছে। সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে ঘরধাপ্পা। অনেকেই বলছেন, ‘‘সবাই ফিরুক, তখন সবাই মিলে আনন্দ করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE