কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের এই উদ্যোগে খুব খুশি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল। ফাইল ছবি
সেই কবে শেষ হয়ে গিয়েছে গরমের ছুটি! স্কুলও খুলে গিয়েছে। অথচ নবম শ্রেণির একটি মেয়ে স্কুলে আসছিল না। ব্যাপারটা নজরে পড়ে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যাদের।
মেয়েটি কেন স্কুলে আসছে না, সেই বিষয়ে খোঁজখবর করে ওই কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা জানতে পারে, তাদের বান্ধবী বিয়ের জন্য বাড়িছাড়া। বিয়ের জন্য বাড়ির তাগাদার জন্যও বটে, আবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ের জন্য নিজের তাগিদের কারণেও বাড়ি ছেড়েছে সে। কিন্তু বিয়ের বয়সই যে হয়নি তার! শেষ পর্যন্ত স্কুলের ওই কন্যাশ্রী ক্লাবের উদ্যোগেই আটকানো গিয়েছে তার বাল্য বিবাহ।
কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের এই উদ্যোগে খুব খুশি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় বাল্য বিবাহের ঘটনা নতুন নয়। এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছে। ওদের তৎপরতা, গোসাবার জয়েন্ট বিডিও-র তত্ত্বাবধান এবং ছোট মোল্লাখালি কোস্টাল থানার আধিকারিকদের হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাল্য বিবাহ রোখা গিয়েছে।’’ মনে করা হচ্ছে, এটি স্কুল খোলারই সুফল। স্কুল খোলার পরেই ছাত্রীদের এই ধরনের অনুপস্থিতি নজরে পড়ছে অনেকের।
প্রণয়বাবু জানান, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েদের নিয়ে তৈরি তাঁদের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যারা সারা বছর নানা কাজে যুক্ত থাকে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার কথা বোঝায় পড়ুয়াদের। স্কুলে ওই মেয়েটির টানা অনুপস্থিতি দেখে তারা সটান পৌঁছে গিয়েছিল তার বাড়িতে।
কন্যাশ্রী ক্লাবের তানিয়া গায়েন, পল্লবী সরকারেরা জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তারা জানতে পারে, সে ওই গ্রামেই এক বন্ধুর বাড়িতে চলে গিয়েছে। ওই বন্ধুকেই বিয়ে করবে বলে মনস্থ করেছে সে। তানিয়ারা ওই বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখে, তখনও বিয়ে হয়নি। দু’জনকে বুঝিয়ে মোল্লাখালি কোস্টাল থানায় নিয়ে যায় তারা। ওই ছাত্রী তানিয়াদের জানায়, বাড়ি থেকে তার বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু যাকে ভালবাসে, তাকেই সে বিয়ে করতে চায়। তাই সে-কথা পরিবারে জানিয়ে দিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে।
প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘মেয়েটিকে কোস্টাল থানা থেকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায় কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা। শুধু ওই ছাত্রীকে নয়, তার বাড়ির লোকজনকেও বোঝানো হয় যে, এখন কোনও অবস্থাতেই মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না। বাড়ির লোকেরাও তা বুঝতে পেরেছেন।’’
প্রধান শিক্ষক জানান, সোমবার মেয়েটিকে স্কুলে ফিরতে দেখে সকলে খুব খুশি। ছাত্রীটি বলেছে, সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। এখন সে নিয়মিত স্কুল করবে। গোসাবার জয়েন্ট বিডিও বিধান মৃধা বলেন, ‘‘মেয়েটি ও ছেলেটিকে মোল্লাখালি কোস্টাল থানায় নিয়ে আসার পরে দু’জনকে দিয়েই এই মর্মে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয় যে, বিয়ের বয়স হওয়ার আগে পর্যন্ত তারা বিয়ে করবে না। এই ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মেয়েরা হোমে থেকেও পড়াশোনা করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয়নি। ওই স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের তৎরপরতা খুবই প্রশংসনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy