নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয় উত্তর দিনাজপুর। প্রতীকী ছবি।
উত্তর দিনাজপুরের মৃত নাবালিকার ফেসবুক পোস্ট খুঁজছে পুলিশ।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখার পরে পুলিশের দাবি, ওই নাবালিকা আত্মহত্যাই করেছে। বলা হচ্ছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সেই ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও পুলিশের সেই দাবি মানতে নারাজ নাবালিকার পরিবার। পরিবারের দাবি, নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে তাকে। সেই অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করছে।
এই পরিস্থিতিতে সেই নাবালিকার ফেসবুক পোস্টকে পুলিশের তরফে হাতিয়ার করার কথা ভাবা হচ্ছে। নাবালিকার মৃত্যুর পরে প্রাথমিক তদন্তে নেমে জেলা পুলিশ কথা বলেছে নাবালিকার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও। পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, তখনই উঠে এসেছে ওই ফেসবুক পোস্টের কথা, যা নাবালিকা নিজেই করেছিল, এবং যে-পোস্ট পড়ে তার বন্ধুদের মনে হয়েছিল, তার ভিতরে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পরে নিজের সেই পোস্ট ওই নাবালিকা মুছে ফেলেছিল বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে কবে তা মোছা হয়, সে সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। কর্তাদের কথায়, সেই পোস্ট পুনরুদ্ধার করাটা জরুরি, তার প্রক্রিয়াও শুরু করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, যদি সত্যিই দেখা যায় যে, নাবালিকার সেই ফেসবুক পোস্ট থেকে আত্মহত্যার প্রবণতার কথা জানা যাচ্ছে, তা হলে আইনের চোখে সেটাও প্রামাণ্য নথি হতে পারে।
এই নিয়ে নাবালিকার সহপাঠী এক কিশোরী অবশ্য বলে, “ওর ফেসবুকে আমি কিছু দেখিনি। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয় উত্তর দিনাজপুর। ভাঙচুর করে আগুন জ্বালানো হয় কালিয়াগঞ্জ থানায়। একটি ভিডিয়োয় কোণঠাসা হয়ে মার খেতে দেখা যায় পুলিশকে। এর পরে সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে রাধিকাপুরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। পুলিশকর্তাদের মতে, বুধবার রাতে যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল, তা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা। তবে, গুলি ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবে চালানো হয়নি বলেই দাবি করছেন তাঁরা। এক কর্তার দাবি, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শূন্যে গুলি চালানোই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু ধাক্কাধাক্কির মধ্যে বন্দুকের নিশানা ঘুরে যায় এবং গুলি মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের বুকে লাগে বলে জেলা পুলিশের দাবি।
পুলিশের এই দাবি কিন্তু মানতে নারাজ মৃত্যুঞ্জয়ের দাদা মৃণালকান্তি বর্মণ। তিনি এ দিন রায়গঞ্জে বিজেপি কার্যালয়ে গিয়ে সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে, পরে কালিয়াগঞ্জ থানার ওই এএসআই, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মৃণালকান্তি বলেন, ‘‘বিষ্ণু বর্মণকে না পেয়ে তাঁর জামাইকে পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা করে। তাঁকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন মৃত্যুঞ্জয়। তখন মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি করে খুন করেন মোয়াজ্জেম।” এ দিকে, সেই রাত থেকে রাধিকাপুরে গোলমালের সময়ে মাথায় বাঁশের আঘাত লেগে মোয়াজ্জেম রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সিসিইউ-তে ভর্তি। তাঁকে কলকাতায় ‘রেফার’ করার কথা চলছে।
ঘটনাপ্রবাহ দেখে পুলিশ কর্তাদের আরও দাবি, কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুন লাগানোর পিছনে স্পষ্ট পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে। আর সেটা করা হয়েছে রাজনৈতিক ভাবেই। নির্দিষ্ট ভাবে সে দিন থানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই সেখানে জনতাকে জড়ো করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টে পেশ করা নথিতে সে কথাই জানানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। এর পরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হলে? এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘আমরা সমস্ত নথিপত্র তাদের হাতে তুলে দেব। অনুরোধ করব, নাবালিকার ফেসবুক পুনরুদ্ধার করতে।’’ পুলিশ গত দু’দিনে থানায় হামলার ঘটনায় আরও ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ১৩ জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত এবং বাকি ছ’জনের ১০ দিন পুলিশি হেফাজত হয়েছে। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট ৫২ জনকে ধরা হল।
(সহ-প্রতিবেদন: গৌর আচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy