ঠাকুরনগরে শান্তনুর বাড়িতে কৈলাস।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর দু’দিনের বঙ্গসফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এখনও পর্যন্ত পরিকল্পনা যা, তাতে ওই সফরে বনগাঁ লোকসভা এলাকায় সভা করবেন অমিত। তার আগে সম্প্রতি দল সম্পর্কে খানিক ‘বেসুরো’ বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে কথা বললেন রাজ্যে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। শনিবার ঠাকুরনগরে শান্তুনুর বাড়িতে যান কৈলাস। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, আলোচনা শেষে শান্তনুর ‘মানভঞ্জন’ করতে পেরেছেন কৈলাস। যাতে অমিতের সভা সফল করতে ‘সক্রিয়’ ভূমিকায় দেখা যায় ঠাকুরবাড়ির এই প্রতিনিধিকে।
ঠাকুরনগর বা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র মানেই মতুয়া ভোট। বরাবর তৃণমূলের সঙ্গে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা গত লোকসভা নির্বাচনে দু’হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিলেন বিজেপি-কে। তাঁদের ভোটে জিতেই সংসদে যান ঠাকুর পরিবারের সদস্য শান্তনু। কিন্তু সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রয়োগে বিলম্ব নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। রাস উৎসবের সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ নিয়ে মতুয়া সমাজের ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন শান্তনু। এমনও বলেন যে, ‘‘নাগরিকত্বের জন্য কেন বার বার আমাদের ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে? কেন বার বার আন্দোলন করতে হচ্ছে? কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি— সকলের কাছে আমরা ভিক্ষা চেয়েছি। অধিকার কেউ দেবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’’
শনিবার শান্তনু ও কৈলাসের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।
শান্তনুর ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল মূলত রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি মন্তব্য ঘিরে। গোপালনগরে বিজেপির এক সভায় দিলীপ জানিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তারই প্রেক্ষিতে শান্তুনু পরে বলেন, ‘‘কোনও এক নেতার কাছে শুনলাম, এক বছর পরে নাকি সোসাইটিতে নাগরিক আইন চালু হবে। এত দেরি হলে আমাদের আর তার দরকার নেই। পরবর্তীকালে এমনিই আমরা নাগরিকত্ব পাব।’’ একই সঙ্গে শান্তনু জানান, আগামিদিনে মতুয়া সমাজ কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তার সঙ্গেই থাকবেন। মতুয়াদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে রাজনীতির কথা ভাববেন না।
শান্তনুর ক্ষোভপ্রকাশের পরে তা নিয়ে রাজনীতিতে নামে তৃণমূলও। গত ১০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁয়া জনসভা করেন। তার আগেই তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শান্তনুকে তৃণমূলের মঞ্চে আসার আহ্বান জানান। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘শান্তনু যদি মতুয়াদের জন্য কাজ করতে চান, তা হলে হাত মেলাতে আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। তবে আমাদের প্ল্যাটফর্মে এসে ওঁকে কাজ করতে হবে। বিজেপির প্ল্যাটফর্মে থেকে নয়।’’
আরও পড়ুন: নতুন কৃষি আইনে বাড়বে বেসরকারি বিনিয়োগ, বললেন নরেন্দ্র মোদী
মমতার সভা থেকে মতুয়াদের খুশি হওয়ার মতো নানা ঘোষণার পরেও শান্তনুর বক্তব্য অস্বস্তির কারণ হয় বিজেপি-র। বনগাঁর সভা থেকে মমতা মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শান্তনু প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি ঘোষণা একটি ভাল পদক্ষেপ।’’
শান্তনু ক্ষুব্ধ হলে তা বিজেপি-র কাছে শুধু বনগাঁ কেন্দ্র নিয়েই উদ্বেগ নয়। ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা রয়েছে। তা ছাড়াও রয়েছে রানাঘাট লোকসভা এলাকা। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রেও নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি তৃণমূলকে হারিয়েছিল। ওই এলাকার ভোটে মতুয়াদের প্রভাব যথেষ্ট। এ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভাল সংখ্যায় মতুয়া সমাজের মানুষ রয়েছেন। তাঁরা সকলেই ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাই শান্তনুর ক্ষোভ প্রশমন বিজেপি-র কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই কারণেই অমিত শাহের সফরের আগে শনিবার সকালে কৈলাস যান ঠাকুরবাড়িতে। বিজেপি সূত্রে খবর, শান্তনু ও কৈলাসের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। মতুয়াপ্রধান এলাকাগুলিতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাদের প্রার্থী করা যেতে পারে, তা নিয়ে শান্তনুর দাবিদাওয়াও শোনেন কৈলাস। বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে জানুয়ারি থেকেই নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ শুরু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সফরে এসে অমিত শাহও কিছু বলতে পারেন বলে আলোচনা হয়েছে।
কৈলাসের পাশে বসে শান্তনু বলেন, ‘‘আমাদের উপরে চাপ আছে। আমরা মতুয়াদের বোঝাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর উপরে আমাদের আস্থা আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসে ঘোষণা করলে আমরাও দায়মুক্ত হতে পারি।’’ কৈলাসের কাছে নাগরিকত্ব আইন আরও সরল করার দাবি জানিয়ে শান্তনু তাঁকে মনে করিয়ে দেন, মতুয়াদের এই দাবি সামনে রেখেই তাঁর রাজনীতিতে আসা এবং ভোটে দাঁড়ানো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy