মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি কৈলাস বিজয়বর্গীয়র।
রাজ্য নেতারা আগেই আক্রমণ শুরু করেছিলেন। এ বার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তীব্র করতে শুরু করল আক্রমণের সুর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি লিখলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করা, রেশন দুর্নীতি, রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাত তৈরি করা, বিজেপি সাংসদদের ঘরে আটকে রাখা, প্রতিহিংসার রাজনীতি করা-সহ একগুচ্ছ অভিযোগে মমতার বিরুদ্ধে বুধবার তোপ দেগেছেন কৈলাস। সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও সাংবাদিক সম্মেলন করে একই অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র পার্থ ভৌমিকও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারে কাছে পৌঁছতে পারছেন না বলে বিজেপি নেতারা ঈর্ষান্বিত, দাবি পার্থের।
কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন ছ’পৃষ্ঠার খোলা চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। তিনি প্রথমেই লিখেছেন, ‘‘এই চিঠি লিখছি গভীর বেদনা নিয়ে। এক দিকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ করোনাভাইরাস অতিমারিতে ভুগছেন। অন্য দিকে আপনি নোংরা রাজনীতি করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়ার ঢঙে কৈলাস লিখেছেন, ‘‘মমতাদিদি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বা ভারতের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতের মানসিকতা নেওয়ার সময় এটা নয়। বিজেপি সাংসদ ও নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার সময় নয় এটা।’’
নোভেল করোনাভাইরাসে কত জন আক্রান্ত, কত জনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে, সে সব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের দাবি। এ রাজ্যে কোভিড-১৯ টেস্টিং-ও খুব কম হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কৈলাস অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনেছেন। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন কৈলাস। শুধুমাত্র মহারাষ্ট্র ছাড়া বাকি রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের হার পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কম বলে দাবি করেছেন কৈলাস। আর মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, সে রাজ্যে ১ লক্ষের বেশি টেস্টিং হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া ঝাড়খন্ড, অসম এবং ওড়িশাতেও পরিস্থিতি এ রাজ্যের চেয়ে অনেক ভাল বলে দাবি কৈলাসের।
আরও পড়ুন: রাজ্যে সক্রিয় আক্রান্ত ৫৫০, বাড়েনি মৃতের সংখ্যা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির অভিযোগও এ দিনের চিঠিতে তুলেছেন কৈলাস। হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় মঙ্গলবার পুলিশের উপরে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তা উল্লেখ করেছেন কৈলাস। রেশন থেকে খাদ্যসামগ্রী তৃণমূলের নেতারা লুঠ করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ত্রাণ ঠিক মতো না মেলার জেরেই হুগলি, ডোমজুড়, বাদুড়িয়ায় গোলমাল হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
চিঠির শেষে বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘‘আমি আপনার কাছে আবেদন করছি, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়া বন্ধ করুন। দয়া করে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজর দিন। এই অতিমারির বিরুদ্ধে আপনি যদি সঠিক মানসিকতা নিয়ে লড়েন, আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেব।’’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও এ দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রায় একই সুরে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তথ্য গোপন, রেশন দুর্নীতি, তোষণের রাজনীতি, বিজেপি সাংসদদের ঘরে আটকে রাখা-সহ যে অভিযোগগুলো কৈলাস তুলেছেন, দিলীপও সেই কথাগুলো এ দিন বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছেন, কিন্তু বাস্তবে কোনওটারই রূপায়ণ ঘটাচ্ছেন না বলে দিলীপের দাবি।
আরও পড়ুন: গ্রিন জোনে কী কী খুলবে সোমবার থেকে, জেনে নিন
তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা বিধায়ক পার্থ ভৌমিক পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের জীবন বিপন্ন করে লড়ছেন, আর ওরা রাজনীতি করছে। কী আর বলব, ঈশ্বর ওদের মার্জনা করুন। ওরা আসলে বাংলার মানুষের মৃতদেহ চাইছে।’’ পার্থ এ দিন বিজেপির সঙ্গে রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় দলকেও আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ঘরে বসে শুধু বিবৃতি দিচ্ছে, রাস্তায় কেউ নেই। রাজ্যপাল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় দল, সবাই রাজনীতি করছেন।’’ পার্থ ভৌমিকের কথায়, ‘‘মানুষের কাছ থেকে ওরা অনেক দূরে সরে গিয়েছে। করোনা আর সাধারণ মানুষের মাঝে এখন শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছতে পারছে না। তাই ঈর্ষায় এ সব করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy