Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Aadhaar Card

জেঠিমার আধার কার্ডে মিঠুনের আঙুলের ছাপ! আধার ছাড়াই টেটে বসার সুযোগ কোর্টের

গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্কুলে নিয়োগের কথা জানায় পর্ষদ। অনলাইন ফর্মে দেখা যায় প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক ভাবে আধার নম্বর ব্যবহার করতে হবে। আধার ছাড়া ফর্ম পূরণ করতে না পেরে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মিঠুন।

আধার কার্ড ছাড়াই চাকরিপ্রার্থীকে টেটে বসার সুযোগ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

আধার কার্ড ছাড়াই চাকরিপ্রার্থীকে টেটে বসার সুযোগ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ২১:২২
Share: Save:

জেঠিমার আধার কার্ডে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর আঙুলের ছাপ। ফলে নিজের আধার কার্ড তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ৬ বছর ধরে চেষ্টার পর আধার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করলেন মিঠুন দাস। আবেদনে তিনি জানান, আধার কার্ড না থাকার কারণে আসন্ন টেটে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে না। দ্রুত আধার কার্ড পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক উচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবার এই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, মিঠুন যাতে অফলাইনে আবেদন করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। এত দিনেও কেন সংশোধন করে আধার কার্ড করা হল না, ৮ দিনের মধ্যে আদালতে এসে তা জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আগামী ১৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার বাসিন্দা মিঠুন দাস তাঁর জেঠিমা অঞ্জলি দাসের সঙ্গে স্থানীয় কেন্দ্রে আধার তৈরি করতে যান। অন্য সবার মতো তাঁদেরও আঙুলের ছাপ, মুখমণ্ডলের এবং চোখের মণি (আইরিশ)-র ছবি নেওয়া হয়। কয়েক দিন পর জেঠিমা আধার কার্ড হাতে পেলেও, মিঠুনের আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁর কার্ডের আবেদনটি বাতিল করা হয়েছে। ফের নতুন করে আবেদন করতে হবে।

মিঠুনের দাবি, নতুন করে আধার কার্ড করতে গেলে সমস্যা তৈরি হয়। কিছুতেই তাঁর আবেদনটি নথিভুক্ত হচ্ছিল না। স্থানীয় আধার কেন্দ্র থেকে তাঁকে কলকাতার অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কয়েক মাস পর বেলদা থেকে আধার কার্ড করতে আসেন মিঠুন। কলকাতার আঞ্চলিক অফিস তাঁকে জানায়, ঝাড়খণ্ডের রাঁচী যেতে হবে। তাঁর আঙুলের ছাপ অন্য কোনও কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আবেদন গ্রাহ্য হচ্ছে না।

এর পর আধার কার্ড পেতে গত ৩১ মে মাসে রাঁচী যান মিঠুন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁর জেঠিমার আধার কার্ডে রয়েছে তাঁর আঙুলের ছাপ। অর্থাৎ, কার্ড তৈরি করার সময়ই গন্ডগোল হয়েছে। ফলে এক জনের তথ্য অন্য জনের কার্ডে চলে গিয়েছে। রাঁচীর আধার সেন্টার থেকে জানানো হয়, নিজের আধার কার্ড তৈরি করতে গেলে বাতিল করতে হবে জেঠিমার কার্ডটি। আবার এক ব্যক্তি এক কার্ড হওয়ার জন্য সে ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিল পদ্ধতি। এই সমস্যার মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে নিজের কার্ড বাতিল করতে সম্মত হন জেঠিমা। এর পরেও আধার কেন্দ্রে আবেদন করে নিজের কার্ড তৈরি করতে পারেননি মিঠুন।

দীর্ঘ দিন ধরে আধার কার্ড না থাকার কারণে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়েন মিঠুন। এই অবস্থায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্কুলে শিক্ষকের নিয়োগের কথা জানায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ জানায়, সমস্ত চাকরিপ্রার্থীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইন ফর্মে দেখা যায় প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক ভাবে আধার নম্বর ব্যবহার করতে হবে। ফর্ম পূরণ করতে না পেরে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মিঠুন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা। এই মামলায় যুক্ত করা হয় পর্ষদকেও। মামলকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো এই ধরনের সরকারি চাকরির পরীক্ষায় আধার বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়। অথচ পর্ষদ তা করেছে।’’

বিষয়টি জেনে দ্রুত মামলাটি শুনতে আগ্রহ দেখান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি নির্দেশ দেন, আধার কর্তৃপক্ষের ভুলের জন্য এ ভাবে কারও ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে না। টেটের জন্য অফলাইনেই আবেদন করবেন মিঠুন। এবং পর্ষদকে সেই আবেদন গ্রহণ করতে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও নির্দেশ, আধার কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নোটিস পাঠাবেন মামলকারীর আইনজীবী। ৬ বছরেও দেশের এক নাগরিক কেন আধার কার্ড পেলেন না তা আগামী শুনানির দিন তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Justice Abhijit Gangopadhyay aadhaar card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy