Advertisement
০১ অক্টোবর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

১০ দফার সেই নির্দেশিকা ১০ দিন পরেও কার্যকর হয়নি! মুখ্যসচিবকে আবার ইমেল জুনিয়র ডাক্তারদের

আরজি করের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। এই আবহেই সরকার পক্ষের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ফের ইমেল জুনিয়র চিকিৎসকদের।

মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ফের ইমেল জুনিয়র চিকিৎসকদের। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:১০
Share: Save:

মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার পর হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল নবান্নের তরফে। কিন্তু ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সেগুলি পালন করা হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে মনোজকে আবার ইমেল করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার পাঠানো ওই ইমেলে আবার নতুন করে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা।

আরজি করের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। এই আবহেই সরকার পক্ষের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে এবং নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজের সঙ্গে। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতেও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছিল। ডাক্তারদের বিশ্রামকক্ষ, শৌচালয়, সিসি ক্যামেরা, অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণ কমিটি-সহ একাধিক দাবির কথা জানানো হয়েছিল শীর্ষ আদালতে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর মনোজের সঙ্গে নবান্নের বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা তুলে ধরেছিলেন তাঁদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিদাওয়া। তালিকায় ছিল এই দাবিগুলিও। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, আলোচনায় মৌখিক আশ্বাস পেয়েছিলেন তাঁরা। বস্তুত, ওই বৈঠকের পরেই হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছিল নবান্ন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে ১০ দফার নির্দেশিকা পাঠিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। তাতে বলা হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসানো হবে ‘প্যানিক বাটন’। অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণ কমিটি (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস্‌ কমিটি) এবং অন্য কমিটিগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে সচল রাখা হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় যাতে কোনও ভাবেই কোনও খামতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় ভাবে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করার কথাও বলেছিল।

প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হেল্পলাইন নম্বর দ্রুত চালু করার নির্দেশও দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যসচিব লেখেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী তথা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন রাখতে হবে। বিশেষ করে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা যাতে পর্যাপ্ত থাকে, সে দিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়। রাতে প্রতিটি হাসপাতালে স্থানীয় থানার পুলিশের টহলদারি দলও রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়গুলি নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে সিকিউরিটি অডিটও করা হবে। এর দায়িত্বে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস তথা প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।

পাশাপাশি মুখ্যসচিবের চিঠিতে বলা হয়, প্রতিটি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারদের জন্য পৃথক বিশ্রামঘর ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালে পানীয় জলের বন্দোবস্ত যাতে ঠিকঠাক থাকে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে কতগুলি শয্যা ফাঁকা রয়েছে, সেই সংক্রান্ত প্রতি মুহূর্তের তথ্য কেন্দ্রীয় ভাবে রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে এই সংক্রান্ত একটি ডিসপ্লে বোর্ড রাখতে হবে। কোনও রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভাবে একটি ‘রেফারেল সিস্টেম’ দ্রুত চালু করার কথাও বলা হয় চিঠিতে। একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।

৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, শুধু নির্দেশ দেওয়াই নয়, হাসপাতালের সুরক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নে নজিরবিহীন পদক্ষেপে দরপত্রেই কাজ শেষের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থ ব্যবহার করেই হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা-সহ পুরুষ এবং মহিলা চিকিৎসকদের জন্য পৃথক বিশ্রাম কক্ষ, শৌচাগার নির্মাণ ইত্যাদি কাজ হবে। বসানো হবে সিসি ক্যামেরাও। কিন্তু বাস্তবে সেই তৎপরতার আঁচ মেলেনি বলে জুনিয়ক ডাক্তারদের অভিযোগ।

কিন্তু মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে যে প্রতিশ্রুতিগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি পালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম ইমেলটি করা হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। তাতে সাত দফা দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা—

১. সরকারি হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ বা হুমকির সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে অনুসন্ধান কমিটি গঠন।

২. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারির স্নাতক পড়ুয়া এবং আবাসিক ডাক্তারদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন।

৩. মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা। আর তার জন্য দ্রত কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকার জন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া।

৪. ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের যে সকল সদস্যের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন। এবং এই কমিটি গঠনের কাজ আগামী সাতটি কর্মদিবসের মধ্যে করা।

৫. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্সিং এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স কিংবা নজরদারি কমিটি গঠন।

৬. কলেজ কাউন্সিল, অভ্যন্তরীণ কমিটি, রোগী কল্যাণ সমিতি, র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটিকে পরবর্তী সাতটি কর্মদিবসের মধ্যে সক্রিয় করে তোলা। একই সঙ্গে এই কমিটিগুলিতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব রাখা।

৭. ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুল’ অনুযায়ী চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্বচ্ছ এবং যথাযথ বদলি নীতি কার্যকর করা।

কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital Manoj Pant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE