Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

অনশনের মাঝে উদ্বেগ বাড়ল ডাক্তারি পরীক্ষায়! অচলাবস্থা কাটাতে বৈঠক চলুক, চায় নাগরিক সমাজ

বৃহস্পতিবার বেলার দিকে ধর্মতলার মঞ্চে গিয়ে অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী।

জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চ।

জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৪৪
Share
Save

১২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে অষ্টমীর রাতে। ধর্মতলায় এখনও আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সাত জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও সময় যত গড়াচ্ছে, ততই দুর্বলতা গ্রাস করছে। অন্তত দু’জনের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি খারাপ বলেও উঠে এসেছে দু’-দু’টি ডাক্তারি পরীক্ষায়। তা নিয়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার যাতে অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয়, সদর্থক ভূমিকা নেয়, সেই দাবিই তুলছে নাগরিক সমাজ।

বৃহস্পতিবার বেলার দিকে ধর্মতলার মঞ্চে গিয়ে অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী। তিনি জানিয়েছিলেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘ওর ইউরিনে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে। রিপোর্টটা আমরা দেখলাম, তাতে কিছুটা অ্যাসিডোসিস ডেভেলপ করা শুরু করেছে। ওরা এই মুহূর্তে দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু অনুভব করছে না। কিন্তু রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে ওদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে। সেটা হঠাৎ করে হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট সময় হয়তো আমরা পাব। আইসিইউ ছাড়া সেই চিকিৎসা করা মুশকিল। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, অনিকেতকে আইসিইউতে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখতে। অনিকেতের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

প্রসঙ্গত, অনিকেত আরজি কর হাসপাতালেই কর্মরত।

এর পরে রাতে অনশনমঞ্চে গিয়েছিলেন রাজ্য সরকার গঠিত চার চিকিৎসকের একটি দল। এসএসকেএম হাসপাতালের ওই চার চিকিৎসক— জেনারেল মেডিসিনের নীলাদ্রি সরকার, নিউরো মেডিসিনের অতনু বিশ্বাস, জেনারেল সার্জারির ডিকে সরকার এবং কার্ডিয়োলজি বিভাগের গৌরাঙ্গ সরকার অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে তাঁরা জানান, অনিকেতের পাশাপাশি অনশনকারী আর এক জুনিয়র চিকিৎসক স্নিগ্ধা হাজরারও শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি খারাপ। অনিকেত এবং স্নিগ্ধা দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার বলে তাঁরা জানিয়েছেন। নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘চার দিন পার হয়ে গিয়েছে। শারীরিক অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছে। ওঁদের এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। তবে অনশনকারীদের মধ্যে অনিকেত মাহাতো এবং স্নিগ্ধা হাজরাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ভাল হয়। ওরা নিজেরাও খেয়াল রাখছে। আমি বলব, সরকারের তরফে যদি শীঘ্র ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ভাল হবে।’’

এক দিকে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকা আরজি করের চিকিৎসক সৈকত, অন্য দিকে সরকার গঠিত চিকিৎসক দল— দু’পক্ষের তরফেই ডাক্তারি পরীক্ষার পর অনিকেত এবং স্নিগ্ধার শারীরিক অবস্থা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন আন্দোলনকারীরা। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের যাঁরা শরিক, যাঁরা প্রায় রোজ অনশনমঞ্চে যাচ্ছেন, মিছিলে হাঁটছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে, তাঁদের মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া সরকারের মেনে নেওয়া উচিত বলেই তাঁরা মনে করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে অনশনমঞ্চে থাকা সোমনাথ কর নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি ডাক্তার নই। কিন্তু ডাক্তারদের এই আন্দোলনে আমার সমর্থন রয়েছে। ওঁদের দাবিদাওয়া ন্যায্য। অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। ওঁদের কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নেবে! সরকারের উচিত এই মুহূর্তে কিছু করা। ওঁদের দাবি মেনে নিক সরকার।’’ বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না। ছেলেকে বললাম, নিয়ে চল। ছেলেমেয়েগুলোর এই অবস্থা সহ্য করতে পারছি না। সরকার কিছু করুক। এ ভাবে চলতে পারে না।’’

বুধবারই সরকার পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই দাবি তাঁদের। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকার নতুন কিছু বলছে না। শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়ে অনশন তুলে নেওয়ার কথা বলছে। যদিও অনশন যে এ ভাবে উঠবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অন‍্য দিকে, অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও। বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক জন সিনিয়র ডাক্তার ধর্মতলায় যান। অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের সন্তানসম। পশ্চিমবঙ্গের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যে অনুরোধ করছেন, আমরাও সেই অনুরোধ নিয়ে এসেছি। ওঁদের দাবি যথার্থ। সেগুলি ছিনিয়ে আনতে হবে। কিন্তু জীবন বাজি রেখে নয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের আর্জি, ওঁদের দাবিগুলির প্রতি আরও উদার, মানবিক হতে হবে।’’

বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ। হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি অনশনকারী সাত জুনিয়র ডাক্তারকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, অনশনকারীদের শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ। চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই ধর্মতলা ছেড়ে তাঁদের হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে চিঠি দিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বলা হয়েছে, ‘‘আপনারা গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় অনশন করছেন। জোর করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মঞ্চ বানিয়েছেন। আপনাদের সামনে যে বোর্ড রাখা হয়েছে, তা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আপনাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বুধবার আমরা আপনাদের অনুরোধ করেছিলাম, কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সের সাহায্য নিতে। কিন্তু আপনারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করেছি, আপনাদের জন্য একদল চিকিৎসক মোতায়েন করা হোক। আমাদের অনুরোধ, আপনারা এই জায়গা ছাড়ুন এবং চিকিৎসার সাহায্য গ্রহণ করুন। সমস্ত প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’’

R G Kar Hospital Dharmatala Kolkata Doctor Rape and Murder

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।