রেড পান্ডার সংরক্ষণে প্রস্তাব বিজ্ঞানীদের।
বিলুপ্তপ্রায় রেড পান্ডাকে বাঁচাতে সীমান্তে যৌথ নজরদারির প্রস্তাব দিল জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জেডএসআই)। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে বিজ্ঞানীদের এই প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে। সঙ্গে জেডএসআই-এর বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত এলাকার সীমানা বাড়ানোরও সুপারিশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট অনচলে রেড পান্ডার বাসস্থান কমছে। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা। তাদের সংখ্যাও কমে গিয়েছে গত কয়েক দশকে। জমির ব্যবহারের ধরন বদলানোর ফলে এবং মানুষের কার্যকলাপের জন্যই মূলত এদের বেঁচে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ুতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ফলে, বা স্থান পরিবর্তন ও প্রাণীগুলির অন্যত্র চলে যাওয়ায় প্রাণীসংখ্যায় তারতম্য ঘটিয়েছে দ্রুত হারে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় রেড পান্ডা পাওয়া যায়। ওই সব এলাকায় নেপাল, ভুটান ও চিনের সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের দু’দিকে সাধারণ বাসিন্দা, আমলা, জীববিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মিলিত ভাবে নজরদারি চালালে লুপ্তপ্রায় রেড পান্ডার অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। জেডএসআই-এর সেন্টার ফর ডিএনএ ট্যাক্সোনমি-র বিজ্ঞানী মুকেশ ঠাকুর বলেছেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘা অঞ্চলে বসবাসকারী রেড পান্ডা অবশ্যই বিশেষ নজর দাবি করে। এই চত্বরে মোট কত সংখ্যক রেড পান্ডা এখনও টিকে রয়েছে, তার কোনও নির্দিষ্ট হিসেব কারও হাতে নেই।’’তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগের যে রিপোর্ট রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যানে ৩২টি এবং দার্জিলিঙের নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে ৩৪টি রেড পান্ডা রয়েছে। এর বাইরে কত সংখ্যক রেড পান্ডা রয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই।’’
বিজ্ঞানীদের প্রস্তাব অনুযায়ী, সীমান্তের দু’দিকে সংরক্ষিত এলাকার পরিধি বাড়াতে হবে। সংরক্ষিত এলাকার বাইরে বাফার জোন চিহ্নিত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, চোরাশিকার, তাপমাত্রার খামখেয়ালি পরিবর্তন সহ নানা কারণে রেড পান্ডা প্রজাতি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এখনই কিছু ব্যবস্থা না নিলে এই প্রজাতির প্রাণী ক্রমেই বিলুপ্তির পথে চলে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত এলাকায় রেড পান্ডাদের প্রজনন প্রকল্প চালু হয়। ২০০৩-এর মধ্যে সেখানে রেড পান্ডার সংখ্যা দাঁড়ায় ২২। কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া দুটি স্ত্রী পান্ডাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আরও দুটি স্ত্রী পান্ডাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ২০০৪-এ। এ ছাড়াও, চারটি পান্ডাকে ২০১৯-এর অক্টোবরে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। এই সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাতীয় উদ্যানে রেড পান্ডার সংখ্যা বাড়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে, বসবাসের উপযোগী স্থান হিসেবে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং উদ্ভিজ্জ-খাদ্য সরাসরি যুক্ত রেড পান্ডাদের খাদ্যাভ্যাস, বেঁচে থাকা এবং প্রজননের জন্য। বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার উপর বিশেষ করে নির্ভর করে বাঁশ গাছের বৃদ্ধি। রেড পান্ডারা যেহেতু আচ্ছাদনে থাকতে পছন্দ করে, তারা মধ্য ও পূর্ব হিমালয়ের নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশের ঘন বাঁশবনকেই পছন্দ করে বেশি। সেই জন্য বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং খাদ্য থেকে চেনা যায় রেড পান্ডার বাসভূমি। এমন পরিবেশেই তাদের বাঁচিয়ে রাখার পক্ষপাতী বিজ্ঞানীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy