Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Job Protest

অভাবে শহরের ভাড়া বাড়ি ছাড়ছেন চাকরিপ্রার্থীরা

ঝড়-রোদ্দুর, অপমান-অবজ্ঞার পরেও রাতজাগা ধর্নামঞ্চে তাঁদের স্বরে কোনও ঘুম ছিল না। স্কুল শিক্ষকের চাকরির দাবিতে কয়েকশো প্রার্থীর সেই মাসের পর মাস জুড়ে চলা আন্দোলনে এখন যেন হালে পানি-হারা চেহরা।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:১৮
Share: Save:

একদা সমস্বরে তাঁরা বলতেন ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু...।’

ঝড়-রোদ্দুর, অপমান-অবজ্ঞার পরেও রাতজাগা ধর্নামঞ্চে তাঁদের স্বরে কোনও ঘুম ছিল না। স্কুল শিক্ষকের চাকরির দাবিতে কয়েকশো প্রার্থীর সেই মাসের পর মাস জুড়ে চলা আন্দোলনে এখন যেন হালে পানি-হারা চেহরা। আন্দোলনে অবিচল মানুষগুলো এখনও বলছেন বটে, ‘এ ধর্নার শেষ নিয়োগের চিঠিতে।’ তবু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চেনা মঞ্চটি কেমন যেন অচেনা হয়ে উঠছে শহর কলকাতার কাছে।

নির্বাচন মিটেছে। শাসক-বিরোধীর লড়াইয়ের পরে জয়-পরাজয়ের হিসেব শেষ। মঞ্চের ত্রিপল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে রেমালের দামাল ঝড়। কিন্তু পুলিশের রাঙা চোখের
সামনেও গান্ধী মূর্তির তলায় সেই মঞ্চ আঁকড়ে অকুতোভয় মানুষগুলো গেলেন কোথায়?

মাস কয়েক আগেও, নিয়োগের দাবিতে ধর্নায় নিত্য হাজিরা দিতে কলকাতায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন অনেকে। ‘‘আর টানতে পারছি না, ভাড়া বাড়ি তাই ছেড়েই দিতে হল,’’ এখন আক্ষেপ ফুটে ওঠে প্রতিবাদী কণ্ঠে। সঙ্গে অবশ্য যোগ করছেন, ‘‘জেলায় নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেও সপ্তাহে এক-দু’দিন ট্রেনে করে ধর্না মঞ্চে আসছি। সারা দিন থেকে রাতের শেষ ট্রেন ধরে ফিরে যাচ্ছি।’’

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম অভিষেক সেন। বলছেন, ‘‘বারুইপুরে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলাম। তিনটে ঘরে আমাদের ২৫ জনের ঠিকানা ছিল। এক সঙ্গে থাকতাম। ছেলেদের দু’টো ঘর আর মেয়েদের একটি।’’ নরেন্দ্রপুরে ২ হাজার টাকা ভাড়ায় এমনই একটি ঘরে থাকতেন ১৫ জন চাকরিপ্রার্থী। এখন সেই ভাড়া দেওয়ার সংস্থান আর নেই। ফিরে গিয়েছেন জেলার নিজের ঠিকানায়। হপ্তায় দু-এক দিন আসেন এখনও। রাতে অনেক সময় মৌলালি যুব কেন্দ্রে কিংবা কলেজ স্ট্রিটের এবিটিএ ভবনে রাতটুকু কাটিয়ে দেন কোনওক্রমে।

নবম-দশমের চাকরিপ্রার্থী কবীর বলছেন, ‘‘বারুইপুরের তিন কামরার ঘরে ২৫-৩০ জনের একসঙ্গে থাকা, কষ্ট ছিল ঠিকই কিন্তু আন্দোলন জিইয়ে রাখার তাগিদটাও সেই সঙ্ঘবদ্ধতা থেকেই পেতাম। কিন্তু বছরের পর ওই ভাড়া গোনার আর সামর্থ্য নেই দাদা।’’ তবে আন্দোলন থেকে যে সরে আসেননি, ভুলছেন না। সপ্তাহে অন্তত এক দিন তিনি মালদহ থেকে কলকাতায় আসেন। ধর্না মঞ্চে থাকেন।

কোচবিহারের কল্যাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘নরেন্দ্রপুরের ভাড়া বাড়িতে সকালে উঠে বাজার করা, তার পর যা হোক একটু মুখে দিয়েই ধর্না মঞ্চে চলে যেতাম। রাতে আবার ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসতাম। কী করব বলুন, এখন বাড়ি ফিরে এসে টিউশন পড়াই। সপ্তাহে এক দিন মঞ্চে যাই।’’

উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী অনিন্দ্য সরকার ঘর ভাড়া নেন উত্তর শহরতলির কৈখালিতে। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাউন্সেলিং শেষ। স্কুল নির্বাচনও হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ আর হচ্ছে না। এখন কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়ি ফিরে এসেছি। কয়েকটা টিউশন করে দিন চলে। আর হপ্তায় এক দিন যাই।’’

কলকাতা ছেড়ে এলেও স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখে জেলা-শহরে ‘কণ্ঠ’ ছাড়ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE