Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্র-মিছিলে বিশিষ্টজন, কিছু নেতাও 

জোড়াসাঁকোয় মিছিল শেষে গাড়ির উপরে উঠে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন কয়েক জন।

পড়ুয়াদের সঙ্গে অনীক দত্ত, রূপঙ্কর।—ছবি এএফপি।

পড়ুয়াদের সঙ্গে অনীক দত্ত, রূপঙ্কর।—ছবি এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ দুষ্কৃতীদের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো দু’দিন পরেও কলকাতার রাজপথে গণ-বিক্ষোভের গর্জন অব্যাহত। ছাত্রছাত্রী, বিশিষ্টজন-আমজনতা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সম্মিলনে মঙ্গলবার তা হয়ে উঠল প্রতিবাদের ত্রিবেণী সঙ্গম।

মঙ্গলবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পার্ক সার্কাস থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিল করেন। বিকেলে গাঁধী-মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জেএনইউয়ের প্রাক্তনীরা। হাজরা মোড় থেকে নিজাম প্যালেস পর্যন্ত অন্য একটি মিছিল করেন যাদবপুর এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়ারা। বিকেলে কলেজ স্ট্রিট থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মিছিল করে জোড়াসাঁকো যায়। সেই মিছিল শুধু ছাত্র সংগঠনের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেনি। প্রবীণ চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার-সহ বহু বিশিষ্টজন তাতে যোগ দেন। প্রতিবাদী ছাত্রদের এগিয়ে দিয়ে নাগরিক মিছিলের পিছনে দলীয় পতাকা ছাড়াই পা মেলান বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্যামল চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, মনোজ ভট্টাচার্য, হাফিজ আলম সৈরানি, কার্তিক পালের মতো বাম নেতারা। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় বিশিষ্টজনেরাই বক্তৃতা দেন, রাজনৈতিক নেতারা মঞ্চে ওঠেননি।

সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস আজ, বুধবার যে-ভারত বন্‌ধের ডাক দিয়েছে, তার সমর্থনে দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটে সভা করে এসএফআই।

বিকেল সাড়ে ৪টেয় সমবেত মিছিল কলেজ স্কোয়ারে শুরু হয়ে বিবেকানন্দ রোড ধরে গিরিশ পার্ক হয়ে জোড়াসাঁকোয় পৌঁছয়। মিছিল জুড়ে ছিল মোদী-বিরোধী লম্বা লম্বা ফেস্টুন, ব্যানার ও জাতীয় পতাকা। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা, কল্যাণী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কেউ দিচ্ছিলেন আজাদির স্লোগান, কেউ বা হল্লা বোলের ডাক। কেউ কেউ গলা ছেড়ে গেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত, গণসঙ্গীত। আবার ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর সেই হাল্লা রাজার গান, ‘হীরক রাজার দেশ’ ছবির ‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়া’ গেয়েছেন এক দল পড়ুয়া। অনেকে গানের সঙ্গে গলা মেলাতে মেলাতে ছবিও এঁকেছেন রাস্তায়। অনেকে রাস্তায় গোল হয়ে বসে গেয়েছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের গান। কেউ বা করেছেন আবৃত্তি। সব গান, কবিতা এবং ছবিরই বিষয়বস্তু আজাদি বা স্বাধীনতা।

পড়ুয়াদের সঙ্গী হন চিত্রপরিচালক অনীক দত্ত, গায়ক অনুপম রায় ও রূপঙ্কর, অভিনেতা কৌশিক সেন, ঋদ্ধি, উষসী চক্রবর্তীরা। অনীকবাবু জানান, এই মিছিল মূলত ছাত্রদের। তাঁরা হাঁটবেন মিছিলের পিছনে। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের উপরে আঘাত এলে আমরা বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। তাই পথে নেমেছি।’’ রূপঙ্কর বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের দায়িত্ব নিয়েছে ছাত্রসমাজ। ওরাই পারে বদল আনতে।’’ অনুপমের কথা, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই বারবার ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। এই অসাংবিধানিক কাজ মেনে নেওয়া যায় না। তাই পথে নেমেছি।’’

মিছিলে হাঁটছিল লোরেটো ডে স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা দাসও। সে বলল, ‘‘আমি বড় হয়ে জেএনইউয়ে পড়তে চাই। জেএনইউয়ে হামলার খবর বাবা আমাকে জানিয়েছে। বাবা বলেছে, এটা আর একটা স্বাধীনতার লড়াই। তাই বাবার সঙ্গে চলে এসেছি।’’

জোড়াসাঁকোয় মিছিল শেষে গাড়ির উপরে উঠে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন কয়েক জন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জেএনইউয়ের হামলায় আহত এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষের বন্ধু কৃতী রায়। জেএনইউয়ে ঐশীর পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফি বৃদ্ধি রদের দাবিতে আন্দোলন করছেন তিনি। কৃতী জানান, হামলার দিন তিনি কলকাতায় ছিলেন। ওই দিন ঐশীর পাশে থাকতে না-পারায় তাঁর খুব আফসোস হচ্ছে। ‘‘ঐশীর উপরে আঘাত মানে আমাদের সবার উপরে আঘাত। তবে ঐশী হারতে জানে না। আমরাও হারব না। এই লড়াই জেতার লড়াই,’’ দৃঢ় সঙ্কল্প কৃতীর গলায়।

সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরে আঘাতের প্রতিবাদে বিবৃতে দিয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে নির্মম আঘাত হেনেছে দুষ্কৃতীরা। ‘এই হিংসা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা স্বৈরাচারের বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি,’ লিখেছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy