জিতেন্দ্রর বুধবারের ফেসবুক পোস্টের পর রাজ্য জুড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
আসানসোলে তৃণমূল ত্যাগ। কলকাতায় এসে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠক এবং ‘ঘর ওয়াপসি’। বলেছিলেন, ভুল করেছিলেন। দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন। তিনি তৃণমূলেই থাকছেন।
সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারিই বুধবার ফেসবুকে একটি ‘অর্থবহ’ পোস্ট করে বসেছেন। ইংরেজিতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতিতে কোনও ফুলস্টপ নেই। রয়েছে পরপর কমা, কোলন, সেমিকোলন’। অর্থাৎ, রাজনীতিতে কোনও পূর্ণচ্ছেদ নেই। রয়েছে একাধিক যতিচিহ্ন।
জিতেন্দ্রর ফেসবুক পোস্টের কাছাকাছি সময়েই শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপি-র একের পর এক নেতা এবং নেত্রীকে শো-কজ করা। যার প্রেক্ষিত জিতেন্দ্রর দলভুক্তি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এবং প্রকাশ্যে দলীয় লাইনের বিরুদ্ধে কথা বলা। শো-কজ শুরু হয়েছিল সায়ন্তন বসুকে দিয়ে। আপাতত সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম অগ্নিমিত্রা পাল। শোনা যাচ্ছে, আরও কয়েকজনকে শো-কজ করা হতে পারে। ওই শাস্তির বার্তা খুব স্পষ্ট— কেন্দ্রীয় বা রাজ্যনেতৃত্ব জিতেন্দ্রকে দলে নেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করেছিলেন। জিতেন্দ্র-বিরোধী মন্তব্য করে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া দলীয় নীতির পরিপন্থী। ঘটনাচক্রে, জিতেন্দ্রর বিষয়ে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তার পরেই তাঁর সুরে সুর মেলাতে থাকেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অন্য নেতারা। ফলস্বরূপ জিতেন্দ্রর সামনে বিজেপি-র দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: সায়ন্তনের পর অগ্নিমিত্রাকেও শো-কজ, কড়া বার্তা বিজেপি-র
আরও পড়ুন: বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শুভেন্দুকে মানুষ ক্ষমা করবে না: সৌগত
এর ফলে রাজ্যের বিবদমান প্রধান দু’টি শিবির তৃণমূল এবং বিজেপি-তে দু’ধরনের সমীকরণ তৈরি হয়। প্রথমত, বিজেপি-র দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘হতাশ এবং অনুতপ্ত’ জিতেন্দ্র তৃণমূলের দরজায় ফেরেন। ফলে তৃণমূল বলতে পারে, বিজেপি-র প্রতি বীতশ্রদ্ধ জিতেন্দ্র। বস্তুত, তারা বলতে পারে, যোগ দেওয়ার জন্য জিতেন্দ্র বিজেপি-কে ‘উপযুক্ত’ দল বলেই মনে করেন না। দ্বিতীয়ত, বিজেপি নেতারা বুঝতে পারেন, তৃণমূলের যে নেতা বা বিধায়করা তাঁদের দলে আসার বিষয়ে যোগাযোগ চালাচ্ছিলেন, জিতেন্দ্র-কাহিনি তাঁদের দ্বিধান্বিত করবে। ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটাই বানচাল হতে বসেছিল। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে আমার লড়াই করেছি এবং করছি— এটা সত্যি। কিন্তু মাঝেমধ্যে বড় যুদ্ধ জয়ের জন্য অনেক সময় ছোটখাট যুদ্ধ ছেড়ে দিতে হয়। সেটা আমাদের নেতাদের বুঝতে হবে।’’
এই যৌথ পরিসরেই বুধবার পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্রর পোস্ট। যা নিশ্চিত ভাবেই নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে, জিতেন্দ্র আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল ছেড়েছিলেন। কিন্তু এখনও ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ তৃণমূলে ফেরেননি। অর্থাৎ, তিনি এখন ‘দলহীন বিধায়ক’। বিধানসভার খাতায় অবশ্য তিনি এখনও তৃণমূলেরই বিধায়ক। তাঁর বুধবারের পোস্টের পর প্রত্যাশিত ভাবেই জিতেন্দ্রকে নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন সম্ভাবনা নিয়েও নাড়াচাড়া হচ্ছে যে, তিনি কি এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেবেন? তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিরূপ’ মন্তব্যের জন্য একের পর এক নেতা-নেত্রীকে শো-কজ কি আসলে জিতেন্দ্রকেই বার্তা?
সেই বার্তাই কি জিতেন্দ্রর পোস্টের অনুঘটক? বুধবারের পোস্টের পর রাজ্য জুড়ে জল্পনা তা নিয়েই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy