Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
River

Jalpaiguri: আঁধারে নদী থেকে দেদার পাথর চুরি, ভাঙছে পাড়

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ০৭:৩১
Share: Save:

বর্ষার সময়ে নদীর ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি ভাবে ঘোষণা করে বন্ধ করা হয় পাথর-বালি তোলাও। তাই তার আগেই পাথর তুলে রেখে দিতে হয় কারও জমিতে। সেখান থেকেই চলে বিক্রি। আর এই জমির ‘দখলদারি’ নিয়েই চূড়ান্ত গোলমাল হয়ে গেল জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে।

অভিযোগ ওঠে, যাঁর জমিতে পাথর রাখা হয়েছে, তাঁর কাছে এই নিয়ে কিছু জানতেই চাওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বচসা, তার পরে চেল নদী লাগোয়া ওই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। প্রতিবাদে আদিবাসী সংগঠনের লোকজন তির-ধনুক নিয়ে পথ অবরোধও করে।

সাধারণত বালির সঙ্গে জুটি করে পাথর আসে। তাই নায়ক হয়ে যায় বালি, আর পাথর যেন ‘সুগ্রীব দোসর’। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় খাদান থেকে পাথর চুরি, অবৈধ খাদান থেকে পাথর তোলা যেমন রমরমিয়ে চলে, তেমনই উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীগুলির খাত থেকেও সমানে পাথর তোলা হয়। রাতের অন্ধকারে ট্র্যাক্টর নামিয়ে ডালা বোঝাই করে পাথর পাচার হয়। এমনকি, পাথরের খোঁজে স্পারের তারজালিও কেটে লুট চালায় নদী মাফিয়ারা। তার ফলে এক দিকে নদীর পাড় সহজেই ভেঙে যায়, অন্য দিকে নদীখাতের চেহারাও বদলে যায়। ফলে বন্যা থেকে শুরু করে নদীর গতিবদলও হওয়া অসম্ভব নয়। পরিবেশবিদেরা বলছেন, এই ঘটনা আপাত ভাবে নিরীহ মনে হলেও পরিবেশের উপরে এর কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী।

উত্তরের একটা বড় অংশ জুড়ে চলে এই পাথর তোলার চক্র। তিস্তা, ঘিস, চেল— এলাকার কোনও নদীই বাদ যায় না। রাতের অন্ধকারে চোরা পথে ট্র্যাক্টর নামিয়ে চলে এই ‘লুট’। পাথর বোঝাই গাড়ি চলে মূলত গজলডোবার পথ ধরে। তাতে সেই রাস্তা ৬ মাসেই সম্পূর্ণ বেহাল হয়ে পড়েছে। শুধু জলপাইগুড়ি জেলাই নয়, এই চক্র সমানভাবে সক্রিয় আলিপুরদুয়ারেও।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বেআইনি পাথর তোলা রুখতে সব সময়ই পদক্ষেপ করা হয়। যদিও বাসিন্দাদের কথায়, পাথর তোলার কাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এই কারবার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হয় না। আবার কখনও কখনও ব্যবস্থা নিতে গেলে প্রশাসনের উপরেও আক্রমণ নেমে আসে। মাস কয়েক আগে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে বেআইনি পাথর ও বালি তোলা রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাকে। তাঁর গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

দক্ষিণবঙ্গে পাথরের কারবার চরিত্রগত ভাবে উত্তরের জেলাগুলি থেকে আলাদা। মূলত বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানে ছড়িয়ে থাকা পাথর খাদানগুলিই এই কারবারের উৎস। যার অধিকাংশই অবৈধ। সবচেয়ে বেশি খাদান রয়েছে বীরভূমে। আইন বলছে, সরকারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লিজ় না নিলে ভূগর্ভস্থ কিছু তালা যাবে না। আবার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি লিজ় দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বীরভূমে এই আইনি জটিলতায় ‘কাগজে কলম’ বন্ধ রয়েছে জেলার পাঁচামি, শালবাদরা, নলহাটি, রামপুরহাট এবং মুরারইয়ের রাজগ্রামের পাথর শিল্পাঞ্চলের সিংহভাগ খাদান। প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, ২০০টির বেশি খাদানের মধ্যে বৈধ খাদানের সংখ্যা মোটে ৬।

অবৈধ হলে শুধু খাদানই নয়, বন্ধ থাকার কথা জেলায় দু’হাজারেরও বেশি পাথর ভাঙার কল বা ক্রাশারেরও। কিন্তু বাস্তব হল, কাগজে-কলমে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকলেও বাজারে পাথরের বিপুল চাহিদা এবং এলাকার মানুষের ‘রুজি-রুটির’ দোহাই দিয়ে খোলা রয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলই। যা কার্যত পুরোটাই অবৈধ। বেআইনি খাদান থেকে বালি বা পাথর তোলা, সেখান থেকে লরি করে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হয়। গোটা প্রক্রিয়াটার সঙ্গে পুলিশ এবং প্রশাসনের একটা অংশের জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন নয়। শাসকদলের একাংশের মদত বলেও অভিযোগ ওঠে।

পুরুলিয়ার মানবাজার মহকুমার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বরাবাজার ব্লক এলাকায় রমরমিয়ে অবৈধ পাথর খাদানের ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত পাথর কেটে ট্রাক-ডাম্পারে চাপিয়ে ক্রাশারে পাঠানো হত। শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকা এলাকার কিছু কারবারি খাদানগুলি চালাতেন। তাঁদের ‘নেটওয়ার্ক’ ছিল বেশ পোক্ত। বছর দু’য়েক আগে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযানের পরে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টায়। বেআইনি খাদানে ঢোকার বিভিন্ন রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। গত সাত-আট মাস ওই সব খাদান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

এটা অবশ্য সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। বাকি সব ক্ষেত্রেই প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে চলছে পাথর তোলার কাজ।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

River Chel River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy