মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ধৃত দুই ছাত্র পরিষদ কর্মী (বাঁ দিকে)। শহরে সিপি-র মিছিল (ডান দিকে)। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ ও সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সবংয়ে ছাত্র খুনের মামলায় এ বার জেল হেফাজতের নির্দেশ হল ধৃত দুই ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মীর। পল্টু ওঝা এবং সুদীপ পাত্র দু’জনকেই মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সুতপা মল্লিক ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন আদালতে ফের পুলিশি তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, এফআইআর-এ যাদের নাম রয়েছে, পুলিশ তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আর যাঁদের নাম নেই, তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। ধৃতেরা পুলিশের কাছে যা বলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি তা দেখা দরকার বলেও জানান অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে সিপি সদস্য কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটিকে পুলিশ সিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বের জের বলে প্রমাণ করতে চাইছে এবং ধৃত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) কর্মীদের রেহাই দিতে চাইছে বলে গোড়া থেকেই অভিযোগ করছে কংগ্রেস। খুনের তদন্তে পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে আজ, সোমবার থেকে সবং কলেজের গেটে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও নিয়েছে কংগ্রেস। সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার তোপ, “পুলিশি বর্বরতা চলছে। সবংয়ের মাটিতে কংগ্রেসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। এর জবাব সবংয়ের মানুষ দেবেন।”
পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষে সিপি-র দুই কর্মী পল্টু এবং সুদীপকে রবিবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। পল্টুকে দু’দফায় হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। তিনি দশ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। সুদীপকে একদফা হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। তিনি পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। ধৃতদের জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী অলোক মণ্ডল বলেন, “এফআইআর- এ যাদের নাম রয়েছে, পুলিশ তাদের বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে। যাদের নাম নেই, তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। পুলিশ যে দাবি করছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এই মামলায় একজন শিক্ষক দু’বার গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আসলে পুলিশ তদন্তের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” তাঁর প্রশ্ন, “তদন্ত শেষের আগেই কী করে জেলার পুলিশ সুপার বলে দেন, এটা এক গোষ্ঠীর গোলমাল। এফআইআর-এ যাদের নাম রয়েছে, তাদের ফুটেজে দেখা যায়নি। একদমই দেখা যায়নি। কেন পুলিশ প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নির্দোষদের জড়িয়ে দিচ্ছে?” আদালতে অলোকবাবুর আবেদন, “এটা ৩০২ ধারার মামলা। আমি আদালতের সময় নষ্ট করব না। শুধু বলব, পুলিশি তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে আদালত জামিনের আবেদনটি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।”
পুলিশি তদন্ত নিয়ে সরব হন অভিযুক্তপক্ষের আর এক আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য। আদালতে তিনি বলেন, “তদন্ত শেষের আগেই সংবাদমাধ্যমে ওই বক্তব্য রাখার জন্য কেন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আইনি নোটিস পাঠানো হবে না?” তাঁর কথায়, “পল্টু ওঝাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনজীবী হিসেবে আমার উপস্থিত থাকার কথা। শনিবার সন্ধ্যায় আমার সামনে পুলিশ পল্টুর কাছে জানতে চাইল, বাবা-মায়ের নাম কী, ভাইবোন আছে কি না, কবে কলেজে ভর্তি হয়েছেব। আর আদালতে কাগজপত্র দিয়ে পুলিশ দাবি করছে, জিজ্ঞাসাবাদ করে পল্টুর কাছ থেকে অনেক তথ্য মিলেছে। ফুটেজ দেখে অনেককে চিনিয়ে দিয়েছে। নিজেও দোষ স্বীকার করেছে। কী চলছে এ সব?” হরিসাধনবাবুর প্রশ্ন, “সবং কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়) অধ্যক্ষের কাছে ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। অধ্যক্ষ সেই অভিযোগপত্র পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেন। কেন এখনও অধ্যক্ষের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হল না?” এ দিন ওই দুই সিপি কর্মীকে নতুন করে আর হেফাজতে চায়নি পুলিশ। জামিনের বিরোধিতা করে সরকারপক্ষের আইনজীবী অসীমবাবু বলেন, “৩০২ ধারার মামলা। এটা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়।” দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ধৃত দুই সিপি কর্মীকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম।
খুনের ঘটনায় ধৃত সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরে পুলিশ মানসিক অত্যাচার চালাচ্ছে বলেও দাবি অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী হরিসাধনবাবুর। তাঁর কথায়, “আমি শুনেছি, পুলিশ জোর করে ওঁকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলানোর চেষ্টা করছে।” সিপি পরিচালিত সবং কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেনকে গত শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। সৌমেনের অভিযোগের ভিত্তিতেই খুনের মামলাটি
শুরু হয়েছে।
এ দিকে আবার সবংয়ে ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী খুনে ধৃত সংগঠনেরই নেতা তথা সবং কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজসাক্ষী করার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। রবিবার বিকেলে সবংয়ের লুটুনিয়া গ্রামে সৌমেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা ও কাকার সঙ্গে দেখা করেন খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন ডেবরার সিআই সুপ্রিয় বসুও।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এ দিন সৌমেন কথা বলতে চান বলে তাঁর বাবা বিমল গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন ধরিয়ে দেয় পুলিশ। যদিও ফোনের ওপারে ছেলেরই কণ্ঠস্বর কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিমলবাবু। কিছুক্ষণ কথা চলার পরে পুলিশ ফোন রেখে দেয়। তাদের দাবি, তদন্তের স্বার্থে সৌমেন তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।
যদিও পুলিশ চলে যাওয়ার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সৌমেনের পরিবারের লোকজন। তাঁর মা অঞ্জু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না পুলিশ কেন এখানে আসছে।” সৌমেনের কাকা তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পুলিশ এসে বলেছে আমরা সৌমেনকে বুঝিয়ে বললে ওর ভাল হবে।’’
কিন্তু কী বোঝাতে বলা হচ্ছিল সৌমেনকে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তপনবাবু। তবে না প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌমেনের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, পুলিশ আসলে সৌমেনকে রাজসাক্ষী হতে বলেছে।
কংগ্রেসেরও অভিযোগ, পরিবারের উপরে অত্যাচার চালিয়ে সৌমেনকে রাজসাক্ষী করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাই এ দিন সকাল থেকে দু’বার কাকা তপনবাবুর সঙ্গে ফোনে সৌমেনকে দিয়ে কথা বলানো হয়েছে। কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “সৌমেনকে রাজসাক্ষী করতে ওঁর পরিবারের ওপরে অত্যাচার চালাচ্ছে পুলিশ। আসলে গোটা মামলাটা সাজাতে এসব করছে পুলিশ।” পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদেই আজ, সোমবার থেকে কলেজের সামনে অবস্থান চলবে বলে মানসবাবু জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy