বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানায় গেল দুই পক্ষই। রাতেই বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা যাঁরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে আটকে রেখেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। শুক্রবার সকালে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে এসএফআই। তাঁকে হেনস্থার কথা জানিয়ে শুক্রবার থানায় অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলও।
গতকালকের ঘটনা নিয়ে এ দিন একগুচ্ছ টুইট করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। তার মধ্যে একটি টুইটে এক যুবকের ছবি চিহ্নিত করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ছেলেটিই আমার উপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা ওকে খুঁজে বার করব। তার পর দেখব কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়া আমার উপর হামলার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে কী শাস্তি দেন।”
থানায় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে গতকালকের অগ্নিগর্ভ ক্যাম্পাসের রেশ এ দিন সকাল থেকেই দেখা যায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চার নম্বর গেটের কাছে গত সন্ধ্যার তাণ্ডবের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পোড়া ক্যারম বোর্ড, বই-খাতার পোড়া পাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ছাত্র সংসদের ঘরেও সেই তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট। দেওয়ালে সর্বত্র লাল রঙে লেখা এবিভিপি। বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে চারটের সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে ‘ধিক্কার মিছিল’ বার করবেন। সেই মিছিল যাবে গোলপার্ক অবধি। এর মধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে পরবর্তী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রস্তুতি। দফায় দফায় পড়ুয়ারা জেনারেল বডির বৈঠক করেন পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ঠিক করার জন্য।
আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, নিগ্রহ বাবুলকে, উদ্ধারে ছুটলেন রাজ্যপাল
অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে পাল্টা অবস্থানে বসেন এবিভিপির সদস্যরা। যাদবপুরে ‘গণতন্ত্র লুণ্ঠিত’ হয়েছে এই অভিযোগ তুলে তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বাবুলকে যাঁরা হেনস্থা করেছেন তাঁদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। ক্যাম্পাস থেকে ‘দেশদ্রোহী’, ‘মাওবাদী’ এবং ‘নকশাল’দের তাড়াতে হবে বলেও দাবি করেন তাঁরা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের এই ছাত্র শাখা আগামী সোমবার গোলপার্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ‘যাদবপুর অভিযান’-এর ডাক দিয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নয়া দাওয়াই, কর্পোরেট করে ছাড়ের ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর
ফলে অশান্তির রেশ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যাদবপুরের বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের যারা নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদের এক জন হিমন মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘এই আন্দোলন চলবে।” তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বাবুলকে বাধা দেওয়ার। তাঁর অভিযোগ, বাবুল যদি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করতেন তা হলে তাঁকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না। পড়ুয়াদের দাবি, বাবুলের সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে। একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি ওই রকম অশিষ্ট আচরণ করতে পারেন একজন উপাচার্যের সঙ্গে? ক্যাম্পাসের পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াতে গতকাল রাত থেকেই সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের একটা অংশ। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ‘‘আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ নিয়ে ঢোকার পর, তাঁর উপস্থিতিতে এবিভিপি তাণ্ডব চালায়। পুলিশ দর্শক হয়ে ছিল।” পড়ুয়াদের ওই অভিযোগকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রাক্তনীদের একটা বড় অংশ।
গতকাল যাদবপুরে যা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এ দিন দুপুরে রাজ্য বিজেপির সদর দফতর মুরলীধর সেন লেন থেকে একটি মিছিল বার হয়। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে ওই মিছিল ধর্মতলা পৌঁছয়। গতকাল যাদবপুরে বাবুলের সঙ্গে হেনস্থা হওয়া অগ্নিমিত্রা পলও ওই মিছিলে ছিলেন। এ দিন কিছুক্ষণের জন্য় অবরোধ করা হয় ডোরিনা ক্রসিং। বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে যে ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘গতকাল যা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্য়জনক। যে ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপর গুন্ডা, ক্রিমিনালরা হামলা চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা করছি। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে হেনস্থা করার পর যা হল সেটা কি ঠিক হল? আমি তাদের বলেছি, কম হয়ে গিয়েছে। আরও একটু মার দরকার ছিল।’’
ডোরিনা ক্রসিংয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ভাষণ দিতে গিয়ে রাজু বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘‘কালকে যারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপর হামলা করেছে তাদের সবাইকে আমরা চিনে নিয়েছি। কাউকে ছাড়ব না এবং সে কাজে যদি পুলিশ বাধা দেয় তা হলে পুলিশকেও ছাড়া হবে না।’’ তিনি যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডগোল হচ্ছে আর আপনি হাসপাতালে শুয়ে আছেন! আপনাকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে হবে না। হাসপাতালেই থাকুন। আপনার জন্য হাসপাতালে স্থায়ী বেডের ব্যবস্থা করে রাখছি।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারটি এফআইআর হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের আহ্বায়ক নিত্যানন্দ মিস্ত্রি অভিযোগ দায়ের করেছেন দেবরাজ কোলে, কাজরী মজুমদার, পিনাকি ঢোলে-সহ ২০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, ওই পড়ুয়ারা তাঁদের মারধর করেছেন। বাবুল সুপ্রিয় এবং অগ্নিমিত্রা পালের উপরও হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৩ (বেআইনি জমায়েত), ৩২৩ (মারধর) এবং ৩৫৪ (শ্লীলতাহানি) ধারায় মামলা দায়ের করেছে। পাল্টা আফসু-র সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ কোলে অজ্ঞাত পরিচয় এবিভিপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন রুম ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন। অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ অনুযায়ী ১৪৩, ৫০৬, ৫০৯, ৩২৩ এবং ৩৫৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছে। এই তিনটি মামলার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৮, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৪, ৩৩২, ৩৫৩, ১৮৬, ২৮৩, ৪৩৫, ৪২৭ ধারায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ও সরকারি কর্মীদের মারধর, কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy