ছবি: সংগৃহীত।
‘বাঙ্গালীর ইতিহাস-আদিপর্ব’ বইয়ের ভূমিকায় ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় লিখেছিলেন, ‘‘নূতন নূতন উপাদান প্রায়শ আবিষ্কৃত হইতেছে। আমি শুধু কাঠামো রচনার প্রয়াস করিয়াছি, ভবিষ্যৎ বাঙালী ঐতিহাসিকরা ইহাতে রক্তমাংস যোজনা করিবেন, এই আশা ও বিশ্বাসে...।’’
অনেকটা সেই দিক-নির্দেশ বেয়েই যেন এ বার ফেসবুক গ্রুপ থেকে ইতিহাসচর্চার উপাদান খুঁজে নিতে চাইছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুশা)’ প্রকল্পের অনুদানে যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগে কলকাতার পুরনো চিঠি সংগ্রহ করা এবং জনতার বয়ানে কলকাতার কথা ধরে রাখার কাজ চলছে। এই দু’টি প্রকল্পের কাজে শামিল হতে ইতিহাস বিভাগ চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ নামে লক্ষাধিক সদস্যসম্বলিত ফেসবুক গ্রুপকে।
যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগের তরফে প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এমন গ্রুপে অনেককে একসঙ্গে পাওয়া যায়। তাই মাঠে নেমে উপাদান সংগ্রহ যেমন চলছে, তেমনই ফেসবুক গ্রুপ থেকেও সাধারণ মানুষের নগরচিন্তার গড়নকে চিনে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা নিজেরাও গ্রুপে আলোচনা শুরু করছি। সেই আলোচনার সূত্র ধরে উঠে আসছে অনেক উপাদান। নানা বিষয়ে গ্রুপের সদস্যের উৎসাহ, তাঁদের নীরবতা, তাঁদের অভিজ্ঞতা, সব কিছুকেই অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের চোখ দিয়ে পড়তে চাইছি।’’
সেই চিঠি।
প্রচলিত উপাদানের বাইরে ইতিহাসের খোঁজ করার চেষ্টা অবশ্য নেট-দুনিয়ায় দেখা গিয়েছে আগেও। দেশভাগের নানা গল্প, ছবি সাধারণ মানুষের থেকে সংগ্রহ করে অনলাইনে তৈরি হয়েছে পার্টিশন আর্কাইভ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সমাজমাধ্যমের নানা মঞ্চে ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা ছবি, ভিডিয়ো সংরক্ষণের কাজ হচ্ছে স্বাধীন গবেষক, ইতিহাস অনুরাগীদের উদ্যোগে। তারই এমন ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি’কে কী ভাবে দেখছেন ওঁরা? গ্রুপটির অন্যতম অ্যাডমিন, শিক্ষিকা স্বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়ের উত্তর, ‘‘ভুয়ো খবরের যুগে সমাজমাধ্যমকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে যে অনেক গঠনমূলক কাজও করা যায়, এটা তারই একটা প্রমাণ। পাঁচ বছর ধরে এই গ্রুপে অনেক মানুষ নিজেদের মতামত জানান, আলোচনা করেন মন দিয়ে। এটা সেই নিরলস ভালবাসা, যোগদানের স্বীকৃতি। আমরা এই কাজে যোগ দিতে পেরে গর্বিত।’’
সুদেষ্ণা বলছেন, ‘‘যাঁরা এমন গ্রুপে নিজেদের বয়ান জানান, তাঁদের আর্থসামাজিক অবস্থানও তাঁদের বয়ানের চেহারা, চরিত্র নির্মাণ করে। নাগরিক সমাজের, মননের একটা চেহারা তা থেকে পাওয়া যায়। সেই সব তথ্য, তথ্যের পাঠ ইতিহাস নির্মাণে সাহায্য করবে বলেই আমাদের আশা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy