ঠিক যেন অভিবাসন দফতর।
ভারত থেকে বিদেশে যেতে বা বিদেশ থেকে ভারতে ঢুকতে হলে সেটা পেরোতেই হবে। কারা যাচ্ছেন-আসছেন, সব তথ্য সেখানে জমা হবে।
ইন্টারনেটের জগতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আনাগোনায় নজর রাখতে ভারতে এমনই এক ‘দফতর’ গড়ার পক্ষে সওয়াল করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। যা আদতে হবে এ দেশের মাটিতে থাকা একটি সার্ভার (পরিভাষায়, গেটওয়ে সার্ভার)। গোয়েন্দারা চাইছেন, ইন্টারনেটে বিদেশে যত বার্তা-তথ্য চালাচালি হচ্ছে, সব যেন বাধ্যতামূলক ভাবে ওই সার্ভার মারফত আসে-যায়। এতে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকুজি-কুলুজি চাইলেই পাওয়া যাবে। নচেৎ সমস্যা হবে বিস্তর।
যেমন হয়েছিল ২০১২-র অগস্টে, আফতাব আনসারির বেলায়। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আমেরিকান তথ্যকেন্দ্রে হামলায় যাজ্জীবনের আসামিটি কলকাতার জেলে বন্দি অবস্থাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তবু তাঁরা সপ্তাহ তিনেক কিছুই করতে পারেননি। কারণ, সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাটির নোডাল অফিস আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাদের থেকে সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পাওয়া যায়নি। হায়দরাবাদে সংস্থাটির প্রোগ্রামিং অফিসে উজিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার গোয়েন্দারা। তাতেও লাভ হয়নি।
এমন কিছু অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটেই সার্ভারের প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়েছে। আইএস-বিপদ মোকাবিলার উপায় খুঁজতে শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বৈঠকে বসেছিল বারোটি রাজ্যের সঙ্গে। অন্যতম রণকৌশল হিসেবে বৈদ্যুতিন নজরদারি জোরদার করার প্রসঙ্গ সেখানেই উঠে আসে। আইবি’র দাবি, ভারতের অন্তত জনা দশেক যুবক এই মুহূর্তে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। এবং তাদের প্রায় সকলের মগজধোলাই হয়েছে ইন্টারনেটের সোশ্যাল মিডিয়া মারফত।
এমতাবস্থায় আইএস-প্রভাব রুখতে নেট-প্রচারে একটা চৌকিদার বসাতে চাইছেন গোয়েন্দারা। গেটওয়ে সার্ভার যে কাজটা করতে পারে। লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএএফ)-সূত্রের খবর: নেট-দুনিয়ার কার্যকলাপ বিস্তারিত ভাবে জানা যায় বিভিন্ন সংস্থার সার্ভার থেকে। মুশকিল হল, সেগুলো সব রয়েছে বিদেশে, বিশেষত আমেরিকা ও কানাডায়। তাই কোনও সন্দেহজনক কথোপকথন বা আলোচনা নজরে এলেও তার কুশীলব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সময় মতো হাতে আসবে কিনা, সেটা সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থার মর্জির উপরে নির্ভরশীল। কারণ, ভারতীয় ভূখণ্ডের আইন মানতে তারা বাধ্য নয়।
এই ‘রিয়েল টাইম শেয়ারিং অফ ইনফর্মেশন’ বা তৎক্ষণাৎ তথ্য পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গোয়েন্দাদের তরফে বলা হয়েছে, এ দেশে থাকা কোনও গেটওয়ে সার্ভার মারফত নেট-বার্তা আদান-প্রদান বাধ্যতামূলক হলে সমস্যা অনেকটা মিটতে পারে।
গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: এ দেশে ইন্টারনেটে নজরদারির পথ প্রথম দেখায় মুম্বই পুলিশ। ফেসবুক, ট্যুইটার, ইউটিউব-সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যে সব কথাবার্তা বা তথ্য লেনাদেনা হচ্ছে, তার উপরে চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখতে মুম্বই পুলিশ ‘সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব’ বসায় ২০১৩-র মার্চে। পরে দেশের অন্য কয়েকটি শহরে তা চালু হয়েছে। এ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেও সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব চালু হওয়ার কথা। কিন্তু এতে পুরো প্রয়োজন মিটছে না। কেন?
এনআইএ-র এক কর্তার ব্যাখ্যা: সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাবের সাহায্যে ইন্টারনেটে বিপজ্জনক জঙ্গি কার্যকলাপ বা জঙ্গি ভাবধারার প্রসার চিহ্নিত করা হয়তো সম্ভব হবে। তবে তার কাণ্ডারীদের খোঁজ না-ও পাওয়া যেতে পারে। এ জন্যই দেশে গেটওয়ে সার্ভার একান্ত দরকার।
উদাহরণ হিসেবে ফের উঠে আসছে আফতাব-প্রসঙ্গ। এনআইএ-সূত্রের খবর: আফতাব ২০১১-র অগস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুললেও তা ধরা পড়েছিল এক বছর বাদে। সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব থাকলে হয়তো আগেই জানা যেত। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্ট মারফত আফতাব কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে, তাদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে, আফতাব নিজে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল নাকি তার হয়ে অন্য কেউ— এ সব তথ্য ল্যাব দিতে পারত না। এ ক্ষেত্রে বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হতো। বস্তুত ঘটনার তদন্তকারী এসটিফের এক অফিসার বলেন, ‘‘সংস্থাটির অফিস থেকে তখন আমাদের জানানো হয়, কারও শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা না-থাকায় এখনই তথ্য জোগানো তারা জরুরি মনে করছে না।’’
সেই তথ্য হাতে পেতে প্রায় এক মাস গড়িয়ে গিয়েছিল। ‘‘তার মধ্যে আফতাব ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জঙ্গি হামলার ছক কষলেও আমরা জানতে পারতাম না!’’— বলছেন এসটিএফ-আধিকারিকটি।
এমতাবস্থায় দেশে গেটওয়ে সার্ভার বসলে সুরক্ষা-বলয় মজবুত হবে বলে গোয়েন্দাদের আশা। যদিও সোশ্যাল মিডিয়াগুলি তার মারফত তথ্য চালাচালিতে রাজি হবে কি না, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে। ‘‘তবে প্রথম পদক্ষেপটা অন্তত হোক। আলোচনার রাস্তা তো খোলাই আছে।’’— মন্তব্য এক গোয়েন্দা-কর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy