Advertisement
E-Paper

শুভেন্দুর জন্য ‘দ্বিতীয়’ নন্দীগ্রাম হচ্ছে হলদিয়া, বিধানসভা ভোটে মর্যাদার যুদ্ধের ইঙ্গিত কর্মীদের উদ্দেশে, জল্পনা দিব্যেন্দুকে নিয়ে

হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার পরে বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলায় শুভেন্দুর প্রথম কর্মিসভা ছিল।

Is Haldia going to be second Nandigram for Suvendu? Leader of Opposition hints at a ‘Prestige Battle’ in the Industrial Town in next election

(বাঁ দিক থেকে) দিব্যেন্দু অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, তাপসী মণ্ডল। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৪
Share
Save

হলদিয়া বিধানসভার প্রত্যেকটি মণ্ডলে ঘুরে ঘুরে ‘চা-চক্র’ করার কথা ঘোষণা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। জানালেন, সদ্য দলত্যাগী বিধায়ক তথা বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভানেত্রী তাপসী মণ্ডলের বিভিন্ন ‘কার্যকলাপে’র কথা সেই সব চা-চক্রে বিশদে তুলে ধরবেন।

হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার পরে বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলায় শুভেন্দুর প্রথম কর্মিসভা ছিল। সেই মঞ্চ থেকে শুভেন্দু হলদিয়া বিধানসভার বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়ার লড়াই যে শুভেন্দুর কাছে ‘মর্যাদার লড়াই’ তথা ‘দ্বিতীয়’ নন্দীগ্রাম হতে চলেছে, তা রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কথায় স্পষ্ট।

Is Haldia going to be second Nandigram for Suvendu? Leader of Opposition hints at a ‘Prestige Battle’ in the Industrial Town in next election

বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় শুভেন্দুর মঞ্চে দিব্যেন্দু (একেবারে বাঁ দিকে)। ছবি: ফেসবুক।

বৃহস্পতিবারের কর্মিসভায় গোটা তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকেই ডেকেছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু কর্মীদের ডাকার ক্ষেত্রে মূলত হলদিয়া বিধানসভাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সভাস্থলে বেশ কিছু কর্মী বসার চেয়ার পাননি। তাঁরা দাঁড়িয়েই ছিলেন। শুভেন্দু দাবি করেন, ওই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল ৪৮ ঘণ্টা আগে। তাই অনেকের কাছেই আমন্ত্রণ পৌঁছে দেওয়া যায়নি। সে কথা মাথায় রেখে ৯০০ চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ১২০০ থেকে ১৪০০ কর্মী চলে এসেছেন। সেই কর্মীদের ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েই তাপসী প্রসঙ্গে চলে যান তিনি। শুভেন্দু দাবি করেন, যে দিন মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষিত হয়েছিল, সে দিনই তাপসী তাঁকে ফোনে বার্তা পাঠিয়েছিলেন: ‘আজ থেকে বিজেপি ছেড়ে দিলাম।’ নিজে জেলা সভাপতিপদে থাকার সুবাদে তাপসী আগে যাঁকে মণ্ডল সভাপতি করেছিলেন, তাঁকে তাপসীর ‘কর্মচারী’ বলে সম্বোধন করেন শুভেন্দু।

তাপসীর সঙ্গে আরও এক জন সোমবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি শ্যামল মাইতি। শুভেন্দু বৃহস্পতিবার সেই শ্যামলকেও নিশানা করেছেন। শুভেন্দুর ইঙ্গিত, শ্যামল তমলুক লোকসভার টিকিট চেয়ে পাননি বলেই দল ছেড়েছেন। এর পরেই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, তাপসী এবং শ্যামলের সম্পর্কে এলাকার বাসিন্দাদের বিশদে জানানোর জন্য তিনি হলদিয়ার পাঁচটি মণ্ডলেই চা-চক্র করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচটা মণ্ডলে যখন চা-চক্রে যাব, তখন আপনাদের সেই গল্প বলব।’’

শুভেন্দুর ভাষণে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান স্পষ্ট শোনা গিয়েছে। নন্দীগ্রাম, হলদিয়া-সহ বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের সামনের সারির একাধিক নেতা-কর্মীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি। বিধায়ক তথা জেলা সভাপতির দলত্যাগে যাতে কর্মীরা মনোবল না হারান, সে বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু। কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, হলদিয়ার দলত্যাগী বিধায়ককে আগামী নির্বাচনে ‘জবাব’ দেওয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। কাকে সামনে রেখে দল হলদিয়ায় লড়বে, সে বিষয়ে শুভেন্দু কিছু বলেননি।

ওই কর্মিসভায় হাজির ছিলেন তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ তথা শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। শিশির-শুভেন্দুদের দলবদলের কিছু দিন পরে দিব্যেন্দুও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের কর্মসূচিতে তাঁকে তেমন ‘সক্রিয়’ ভাবে দেখা যেত না। বৃহস্পতিবারের কর্মিসভায় দিব্যেন্দু শুধু হাজিরই ছিলেন না, তাঁর উপস্থিতির কথা শুভেন্দু নিজেও ‘সসম্মানে’ উল্লেখ করেছেন। যার প্রেক্ষিতে হলদিয়ার ‘মর্যাদা যুদ্ধে’ দিব্যেন্দুকে তাপসীর বিপক্ষে দেখা যেতে পারে কি না, তা নিয়েও রাজ্য বিজেপির অন্দরে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সেই জল্পনা অর্থহীন। কারণ, হলদিয়া আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ফলে দিব্যেন্দু সেখান থেকে লড়তে পারবেন না।

নন্দীগ্রাম যেমন শুভেন্দুর নিজের নির্বাচনীকেন্দ্র, হলদিয়াও তেমন ভাবেই শুভেন্দুর রাজনৈতিক ‘খাসতালুক’। কারণ, প্রথমত হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামের পরস্পরের লাগোয়া। নদীর এ পার আর ও পার। দ্বিতীয়ত, শুভেন্দু (এবং পরে দিব্যেন্দুও) যে তমলুক লোকসভার সাংসদ ছিলেন, হলদিয়া বিধানসভা তারই অন্তর্গত। তৃতীয়ত, তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দু দীর্ঘ দিন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ-হেন হলদিয়ার বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান শুভেন্দুর নিজস্ব ‘দুর্গেই’ সরাসরি হানা বলে মনে করছেন অনেকে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়া ‘পুনরুদ্ধার’ করাকে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি।

তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, শুভেন্দু তা-ও কার্যত ঘোষণা করে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। মলয় সিংহকে পাশে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘জেলা সভাপতিপদে এক জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি মলয় সিংহ। আর কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। যদি মনোনয়নপত্রে ত্রুটি না থাকে, তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, মলয় সিংহের অভিভাবকত্বেই আমরা আগামী বিধানসভা নির্বাচন (তমলুক সাংগঠনিক জেলায়) লড়ব।’’

Haldia Tamluk Suvendu Adhikari Dibyendu Adhikari BJP TMC Tapasi Mondal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}