Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

Babul Supriyo BJP: রাজনীতি থেকে কি বিদায় নিচ্ছেন বাবুল, ক্রমশ জোরালো হচ্ছে ইঙ্গিত, বাড়ছে জল্পনা

বাবুলের রাজনীতিতে আগমন এবং উত্থান যেমন নাটকীয়, তেমনই নাটকীয় হতে পারে তাঁর ইচ্ছা-নিষ্ক্রমণ। রাজনীতি ছেড়ে দিলে তাঁকে সাংসদ পদও ছেড়ে দিতে হবে।

ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর বীতশ্রদ্ধা।

ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর বীতশ্রদ্ধা। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ১১:০৭
Share: Save:

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর কি রাজনীতিই ছেড়ে দিচ্ছেন বাবুল সুপ্রিয়? টানা সাত বছর সক্রিয় রাজনীতিতে (এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে) থাকার পর কি রাজনীতি থেকে পুরোপুরিই বিদায় নিতে চলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? গত কয়েকদিনে তাঁর ব্যবহারিক গতিপ্রকৃতি দেখে তেমনই মনে হচ্ছে। একের পর এক ফেসবুক পোস্টে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ তো বটেই, নিজের ‘টুইটার বায়ো’-তে যে ভাবে সামগ্রিক ভাবেই রাজনীতি থেকে নিজের দূরত্ব রচনা করেছেন বাবুল, তাতে তাঁর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ইঙ্গিত ক্রমশ জোরালো জল্পনায় পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশিই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর বীতশ্রদ্ধা।

বাবুলের রাজনীতিতে আগমন এবং উত্থান যেমন নাটকীয়, তেমনই নাটকীয় হতে পারে তাঁর ইচ্ছা-নিষ্ক্রমণ। রাজনীতি ছেড়ে দিলে আসানসোলের সাংসদকে তাঁর সাংসদের পদও ছেড়ে দিতে হবে। বাবুলের পরিচিত এবং হিতৈষীরা মনে করছেন, তেমন হলে সাংসদের পদ ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না তিনি। ঘটনাচক্রে, বাবুলের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সম্পর্কের টানাপড়েন দলের গণ্ডি ছেড়ে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর বাবুল যে ফেসবুকপোস্ট করেছিলেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন দিলীপ। বাবুল আবার ফেসবুকেই তার শ্লেষপূর্ণ জবাব দিয়ে বলেন, তাঁর ইস্তফার গুজবের প্রেক্ষিতে ফেসবুকে লেখা ‘হোয়েন দেয়ার ইজ স্মোক দেয়ার ইজ ফায়ার’ না বুঝেই মন্তব্য করে ফেলেছেন দিলীপ।

বাবুলের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কের টানাপড়েন দলের গণ্ডি ছেড়ে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।

বাবুলের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কের টানাপড়েন দলের গণ্ডি ছেড়ে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ

বাবুলের সঙ্গে বাদানুবাদের ফলে দিলীপ দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তরফে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে শো-কজ করাতে পারেন এ রকম একটি গুজব ছড়াচ্ছিল। যদিও বাবুল সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন কি না জানতে চাওয়ার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাবুল সাড়া দেননি। অগত্যা তাঁর এক হিতৈষীকে দিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ওই প্রশ্ন করানো হয়েছিল। সেই হিতৈষীর দাবি, তার জবাবে বাবুল বলেছেন, তিনি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে আপাতত তিনি কয়েকদিন রাজনীতি থেকে ছুটি নিচ্ছেন।

যা থেকে ওই শুভাকাঙ্ক্ষীর ব্যাখ্যা, রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নে বাবুল যেমন ‘হ্যাঁ’ বলেননি, তেমনই সরাসরি ‘না’-ও বলেননি।

ঘটনাচক্রে, মোদী মন্ত্রিসভার শেষ রদবদলে বাবুলকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পর মমতা প্রকাশ্যেই বাবুলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘ওরা (বাবুলের সঙ্গেই বাদ পড়েছেন অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী) আবার কী দোষ করল!’’ যা শুনে ঘনিষ্ঠদের কাছে সন্তোষ গোপন করেননি বাবুল। যেমন তিনি প্রীত হয়েছেন একদা আসানসোলে তাঁর ‘শত্রু’ অধুনা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির শংসা পেয়েও। জিতেন্দ্র বলেছেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় মন্ত্রী থেকেও কাজ করেছেন। মন্ত্রী না থাকলেও করবেন।’’

তার পরে তৃণমূলে এমন জল্পনাও ছড়িয়েছে যে, মমতা-বাবুল দূরত্ব কি ক্রমশ কমছে? যার পরিণতিতে ভবিষ্যতে বাবুলের পদ্মফুল থেকে জোড়াফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন রাজ্যে শাসকশিবিরের একাংশ।

নেপথ্যগায়ক বাবুলের জাতীয় রাজনীতিতে আগমনের নেপথ্যে ছিলেন রামদেব।

নেপথ্যগায়ক বাবুলের জাতীয় রাজনীতিতে আগমনের নেপথ্যে ছিলেন রামদেব। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ

অনেকটা আচমকাই বলিউডের নেপথ্যগায়ক বাবুলের আগমন হয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। এক উড়ানে পাশের আসনে যোগগুরু বাবা রামদেবকে দেখে তাঁকে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র টিকিট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বলিউডের গায়ক। অতঃপর আসানসোল কেন্দ্রে জয় এবং কেন্দ্রে মন্ত্রী। পাঁচ বছর কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার পর গত লোকসভা ভোটেও আসানসোল থেকে রেকর্ড ভোটে জেতেন বাবুল। ফলে তাঁকে নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে একাংশের বিবিধ অনুযোগ থাকলেও কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার মন্ত্রী করা হয় তাঁকে।

বিধানসভা ভোটে সাংসদ বাবুলকে টালিগঞ্জ আসন থেকে টিকিট দেয় বিজেপি। বাবুল শিবিরের দাবি, বাবুল একটি ‘কঠিন’ কেন্দ্র চেয়েছিলেন। বাবুলেরই আর্জি মেনে তাঁকে টালিগঞ্জ কেন্দ্রটি দেওয়া হয়। তবে তিনি হেরে যান তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাসের কাছে। ভোটের পরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বাবুল জিতবেন। বাবুল ঘনিষ্ঠদের দাবি, মোটর সাইকেল নিয়ে কেন্দ্রের অলিগলিতে প্রচার করায় অমিত শাহ সন্তুষ্টও হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবুল হেরে যান। তবে গণনা চলাকালীন গণনা কেন্দ্রে তৃণমূলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একাধিক ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন তিনি। যার মোদ্দা কথা, গণনা ঠিকঠাক হয়নি। তিনি হেরে যাওয়ায় দলের অন্দরে তাঁর বিরোধীরা যেমন ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠেন। তারই ফলে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা বাবুল-শিবিরের। তাদের অনুমান, সেই কারণেই রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে সরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যত জোরালো হচ্ছে তাঁর ইঙ্গিত, তত বাড়ছে তাঁর রাজনীতি-ত্যাগের জল্পনা।

তাঁর কেন্দ্র আসানসোলের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরে যাওয়ার দায় বাবুলের নয় বলে মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের বক্তব্য, সাতটির মধ্যে মাত্র তিনটি আসনে বাবুলের সুপারিশ করা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। তার মধ্যে দু’টি আসন আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটিতে বিজেপি জিতেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy