Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

Babul Supriyo: যদি জানতেম... ‘প্রপার নাউন‍’ বাবুলের বিনিদ্র রাত ফেসবুক পোস্টে, বদল টুইটার বায়োতেও

একের পর এক পোস্ট করেছেন বাবুল। কোনওটায় দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ, কোনওটায় সত্যিকারের ‘প্রপার নাউন’ বুঝিয়ে ব্যাখ্যা।

মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর থেকেই পর পর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বাবুল।

মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর থেকেই পর পর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বাবুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ১৬:৫০
Share: Save:

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় নেটমাধ্যমে প্রবল সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ফেসবুক থেকে টুইটারে তার সাক্ষর ছড়িয়ে রয়েছে। বুধবার মন্ত্রিসভার রদবদলের পর থেকে বাবুল শুধু আসানসোলের সাংসদ। তার পরেই তিনি ওই ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তার পর থেকে তিনি পর পর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পাশাপাশি, বদলে দিয়েছেন তাঁর টুইটার ‘বায়ো’।

বদলে-দেওয়া টুইটার ‘বায়ো’-তে বাবুল লিখেছেন, তিনি আদৌ ভালবেসে রাজনীতিক নন। তিনি ‘সিঙ্গার বাই হার্ট’। ‘প্রাক্তন ব্যাঙ্কার’। ‘ভারত সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী’। লিখেছেন, তিনি যা ভালবাসেন, তাতে তাঁর হৃদয় এবং মস্তিষ্ক দুটোই দেন। অর্থাৎ, তিনি ভালবেসে গায়ক। কিন্তু ‘ভালবেসে’ রাজনীতিক নন। রাজনীতিতে আছেন কাজ করার জন্য। রাজনীতিকে হৃদয় দিয়ে ভালবেসে নয়। বরং, তাঁর ভালবাসা গাড়ি, বাইক এবং পোষ্য নিয়ে।

শনিবার সকালে ফেসবুকে বাবুল লিখেছেন, ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে... গানটি কিন্তু ছোট থেকেই ভাল গাই।’ সঙ্গে নিজের গাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে গানটি পোস্ট করেছেন, সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ— ‘তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে।’

শুক্রবার মধ্য রাতে, শনিবার ভোর রাতে, সকালে এবং দুপুরে ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট করেছেন বাবুল। কোনওটায় তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন, কোনওটায় সত্যিকারের ‘প্রপার নাউন’ বুঝিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আবার কোনওটায় মন্ত্রিত্বে থাকার সময় তিনি কী কী করেছেন, তার উল্লেখ। সেই সঙ্গে গায়ক বাবুলের ‘যদি জানতেম...’ অ্যালবামের একটি গানও পোস্ট করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী।

বুধ-সন্ধ্যায় মোদী মন্ত্রিসভার রদবদলের অব্যবহিত আগে বাবুল ফেসবুকেই জানিয়েছিলেন, তাঁকে ইস্তফা দিতে বলা (আস্কড টু রিজাইন) হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে বুধবার রাতেই বাবুলকে নিশানা করেন দিলীপ। তিনি বলেন, মোদী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ-যাওয়া ১২ মন্ত্রীর একজনও বিষয়টি নিয়ে নেটমাধ্যমে বাবুলের মতো মন্তব্য করেননি। খড়্গপুরে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘তাঁকে (বাবুল) যদি স্যাক (বরখাস্ত) করা হত, তা হলে কি ভাল হত? পদ্ধতি মেনে হয়েছে। আপনি পদ ছেড়ে দিন। অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আপনাকে অন্য কাজে লাগানো হবে। সবাই তাই করেন। ১২ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। কেউ তো এমন লেখেননি! কাজের প্রতি আস্থা রাখা উচিত। পার্টির কাজ করছি, বিধায়ক সাংসদ যা হয়েছি, তা পার্টির জন্য।’’

তার পরেও বাবুল ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট করেছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি খবরের উল্লেখ করে সরাসরি দিলীপকে উদ্দেশ্য করে বাবুল লেখেন, ‘রাজ্য সভাপতি হিসেবে মনের আনন্দে দিলীপদা অনেক কিছুই বলেন|’ সেখানেই না থেমে বাবুল লেখেন, ‘উনি রাজ্য সভাপতি— সবার শ্রদ্ধার পাত্র! আমিও আন্তরিক শ্রদ্ধা জানালাম প্রিয় দিলীপদাকে।’ যে প্রসঙ্গে দিলীপ শনিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “দলের পক্ষ থেকে সবটাই পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। যাঁদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, তাঁদেরই সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের কিছু গন্ডগোল আছে।”

বাবুলের বদলে-দেওয়া টুইটার ‘বায়ো’।

বাবুলের বদলে-দেওয়া টুইটার ‘বায়ো’।

রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে বাবুল-দিলীপ সম্পর্ক যে কত ‘মধুর’, তা কারও অজানা নেই। দিলীপ-শিবিরের লোকজন বাবুলকে পছন্দ করেন, এমন বললে অসত্য বলা হয়। বিধানসভা ভোটের সময় প্রচারেও দু’পক্ষের মধ্যে টেনশনের চোরাস্রোত দলের লোকজনের চোখে পড়েছে। উপরন্তু বাবুল-শিবিরের লোকজন জানাচ্ছেন, তিনি অনেক বেশি ‘স্বচ্ছন্দ’ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। প্রকাশ্যেও দু’জনের ঘনিষ্ঠতা ছিল দেখার মতো। আবার দিলীপ-শুভেন্দু সম্পর্ক নিয়েও রাজ্য বিজেপি-তে বিভিন্ন জল্পনা রয়েছে। বাবুল বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ায় এবং তার পর তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় আরও ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠেছে দিলীপ-শিবির।

শনিবার দিলীপের ঘনিষ্ঠ এক নেতা যেমন বলেছেন, “উনি বিনোদন জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসেই মন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। সাত বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী থাকার একটা গরিমাও আছে। অনেক লোকলস্কর সঙ্গে পাওয়া এখন হতাশা থেকে এ সব করছেন।’’ দিলীপ-শিবিরের নেতারা এমনকি, বাবুলের সঙ্গে সৌমিত্র খাঁ-কে একই বন্ধনীতে রেখে দু’জনকে ‘স্বার্থ-সর্বস্ব’ বলে আক্রমণও করছেন। বস্তুত, বাবুল ও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র সম্পর্কে প্রকাশ্যেই তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দিলীপ নিজেও। শনিবারই তিনি বলেছেন, “আমরা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। কাজে লাগেনি। দলের স্বার্থের থেকে যখন ব্যক্তিগত স্বার্থ বড় হয়, তখনই সমস্যা তৈরি হয়। দল যাঁদের উপর ভর করে এগিয়েছিল তাঁরা সঙ্গে আছেন। সে ভাবেই দল এগোবে।”

বাবুল বরাবরই নেটমাধ্যমে সক্রিয়। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলো নিয়েও নিয়মিত পোস্ট করেন। ‘ফুটবলামোদী’ বাবুল রাত জেগে ফুটবল দেখেন। টেনিসও বাদ যায় না। রাতেই সে সব নিয়ে ফেসবুকে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাতে বিতর্ক তৈরি হয়। তাতে বাবুল নিজেও অংশও নেন। জবাব দিতে গিয়ে কখনও কখনও নেটিজেনদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ান। সম্প্রতি খেলা নিয়ে বাবুলের একটি ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে এক ব্যক্তি বাবুলকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। তার জবাব দিতে গিয়ে নিজেকে ‘প্রপার নাউন’ বলে দাবি করেন বাবুল। এর পরে বিতর্ক অনেক দূর গড়ায়। ‘প্রপার নাউন’ নিয়ে বাবুলকে ট্রোল্‌ড’ হতে হয়।

নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য তখন বাবুল।

নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য তখন বাবুল।

শনিবার ভোর রাতে সেই বিষয়েও ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন বাবুল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘একজন মানুষ তার নিজের একটি নাম আছে বলে নিজেকে ব্যাকরণগত ভাবে প্রপার নাউন ভাবতেই পারে। কিন্তু মানুষের মতো মানুষ হতে পারে না— সত্যিকারের প্রপার নাউন হতে পারে না!’ সেই সঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি ‘সুপ্রিয় বড়াল’ থেকে প্রপার নাউন ‘বাবুল সুপ্রিয়’ হয়েছেন।

বাবুল লিখেছেন, ‘আমার প্রপার নাউন উক্তিটি নিয়ে অনেক কথা শুনছি। কিন্তু অনেকে বুঝেও আমার সারকাজ্মটা বোঝেননি। টম-ডিক-হ্যারি যেমন কয়েকটি নাম, তেমনই রাম-শ্যাম-যদু-মধুও একগুচ্ছ নাম। অর্থাৎ প্রপার নাউন। কিন্তু এক্ষেত্রে এই সব নামগুলিকে অর্থাৎ প্রপার নাউনগুলিকে নাউন হিসেবে (নাউন হল যে কোনও কিছুরই নাম) হিসেবে রেফার করা হয়েছে। সুপ্রিয় বড়ালও একটি নাম। আ প্রপার নাউন। কিন্তু সেটা প্রপার নাউন শুধুমাত্র চেনা মানুষ, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধবদের নিজের জগতের সকলের কাছে। ফর দ্য আউটসাইড ডগ ইট ডগ ওয়ার্ল্ড (বাইরের জগতের কাছে) ইট ওয়াজ অ্যান্ড স্টিল দ্য নেম অব এনিথিং। অনেকেই জানে না সুপ্রিয় বড়ালই আমার আসল নাম |’

তার পরেই বাবুলের ব্যাখ্যা, ‘জীবনের স্ট্রাগলিং ফেজের মধ্য দিয়ে ট্রাভেল করার কষ্ট, অপমান থেকেই এই উপলব্ধিটা আসে যে, স্পেশাল কিছু অ্যাচিভ করার আগে অবধি অনেক মানুষ আপনাকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না !!উই রিমেইন আ নো ওয়ান টিল ইউ বিকাম আ সামওয়ান অ্যান্ড মেক আ নেম ফর ইয়োরসেল্ফ ইন দ্য আউটসাইড ওয়ার্ল্ড অ্যামগংস্ট পিপ্‌ল আউটসাইড ইয়োর ওন ওয়ার্ল্ড।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে অকথ্য ভাষায় যিনি গালাগালি করছিলেন, তাঁকে আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে নিজের পরিচিত সার্কলের বাইরে অন্তত কিছু মানুষের মধ্যে, নিজের যে কোনও রকম ছোট-বড় কাজের জন্য ভালোবাসা, স্নেহ ও স্বীকৃতি পাওয়ার আগে অবধি আমরা সবাই কিন্তু নাউনই। নাউন ইজ দ্য নেম অব এনিথিং। যেমন টম-ডিক-হ্যারি অর রাম-শ্যাম-যদু-মধু প্রপার নাউন হয়েও জগতের কাছে অ্যাকচুয়ালি নাউনই!! দ্যাট্স স্যাড বাট ট্রু ইন দ্য পলিটিক্যাল সেন্স অব দ্য টার্ম!!’

এর পর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও আক্রমণাত্মক, ‘কাজেই অন্য কারও মা-বাবাকে টেনে এনে নোংরা ভাষায় একটি পাবলিক প্ল্যাটফর্ম বা ওপেন ফোরামে গালাগালি করলে একজন মানুষ তার নিজের একটি নাম আছে বলে নিজেকে গ্রামাটিক্যালি প্রপার নাউন ভাবতেই পারে কিন্তু মানুষের মতো মানুষ হতে পারে না। প্রপার প্রপার নাউন হতে পারে না !! নাথিং মোর নাথিং লেস!!’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy