Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ভিড়ে হেঁটে আদালতে, অজ্ঞাতবাস ছেড়েও মুখ বন্ধ রাজীবের

‘এত দিন কোথায় ছিলেন’ গোছের যাবতীয় প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে আবার হুশ করে অন্তর্হিত হলেন গোয়েন্দা-প্রধান।

রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।

রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

বোধন না-হতেই দেবী-দর্শন শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। বেশ কিছু দিনের লুকোচুরির পরে পঞ্চমীতে দর্শন পাওয়া গেল রাজীব কুমারেরও। হাল্কা আকাশনীল জামা আর ধূসর রঙের প্যান্ট। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কয়েক মিনিটের জন্য দেখা দিলেন রাজ্যের গোয়েন্দা-প্রধান। বেশ ধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

‘এত দিন কোথায় ছিলেন’ গোছের যাবতীয় প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে আবার হুশ করে অন্তর্হিত হলেন গোয়েন্দা-প্রধান। তবে পুলিশ শিবির জানাচ্ছে, এ বার ইতিউতি দর্শন মিলতে পারে রাজীবের। যে-কারণে অজ্ঞাতবাসে চলে গিয়েছিলেন, সেই সম্ভাব্য গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আগাম জামিন পেয়ে গিয়েছেন তিনি।

প্রায় এক মাস পরে এ দিন বেশ কিছুটা দূর থেকে হেঁটে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হন রাজীব। সঙ্গে আইজি (সিআইডি) বিশাল গর্গ এবং কয়েক জন আইনজীবী। ছড়িয়েছিটিয়ে সাদা পোশাকে জন পাঁচেক দেহরক্ষী।

রাজীবের আগমনের মিনিট দশেক আগে আদালতে আসেন বিচারক। এজলাসে ঢোকার পরেই আইনজীবীরা সই করার জন্য জামানতনামা এগিয়ে দেন রাজীবের দিকে। কিন্তু সই করার আগেই তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান বিচারক। পকেট থেকে পরিচয়পত্র বার করে দেখান গোয়েন্দা-প্রধান। তা পরীক্ষার পরেই জামানতনামায় সই করার নির্দেশ দেন বিচারক।

১০ মিনিটের মধ্যেই আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন রাজীব। তাঁর পাশে ছুটতে থাকে সংবাদমাধ্যম। আছড়ে পড়তে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। কিন্তু একটিও কথা বলেননি তিনি। আইনজীবীদের সেরেস্তার ভিতর দিয়ে বেশ কিছুটা হেঁটে নিজের গাড়িতে ওঠেন। তবে এ দিন ভবানী ভবনে সিআইডি-র দফতরে যেতে দেখা যায়নি তাঁকে।

গোয়েন্দা-প্রধান এ দিনও নিজেকে আড়ালে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। অনেকটা দূর থেকে ভিড়ে মিশে হেঁটে ঢোকেন এজলাসে। কৌঁসুলিরা আগেই এজলাসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাই আদালতে ঢোকার সময় কেউ টের পায়নি। কিন্তু এজলাস থেকে বেরিয়ে আসার পরে এক চিত্রসাংবাদিকের নজরে পড়ে যান রাজীব। যে-রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তা বদল করে আইনজীবীদের সেরেস্তার ভিতর দিয়ে অতঃপর হনহনিয়ে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। পাশের রাস্তা দিয়ে ছুটতে শুরু করেন তাঁর দেহরক্ষীরা। কিছুটা হাঁটার পরেই নিজের সাদা গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ায়। গাড়িতে উঠে পড়েন রাজীব।

গোয়েন্দা-প্রধানকে প্রকাশ্যে শেষ দেখা গিয়েছিল ৩০ অগস্ট। সে-দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিবিআই জানতে পারে, রাজীব ভবানী ভবনে শেষ গিয়েছিলেন ১২ সেপ্টেম্বর। ১৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী দত্ত তাঁর গ্রেফতারের উপর থেকে রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পরেই আত্মগোপন করেন গোয়েন্দা-প্রধান।

কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে তল্লাশি অভিযানে নামে সিবিআই। কিন্তু রাজীবের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আলিপুর আদালত তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টে রাজীবের হয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা। রাজীবের কৌঁসুলি গোপাল হালদার ও দেবাশিস রায় এ দিন বলেন, ‘‘হাইকোর্ট আমাদের মক্কেলের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে। নিম্ন আদালতে জামানতনামায় স্বাক্ষর করতে হত। তা ছাড়া জামিনের শর্ত অনুযায়ী এক লক্ষ টাকার দু’জন জামিনদারের নথি জমা দেওয়ার ছিল। এ দিন সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy