মেদিনীপুর আদালতে টিএমসিপি কর্মীরা। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সবং কলেজে ছাত্রসংঘর্ষে নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। আদালতে এমনই দাবি করলেন অভিযুক্ত পল্টু ওঝার আইনজীবী অলোক মণ্ডল।
মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে শুনানির সময় অলোকবাবু বলেন, “পুলিশ তদন্তের অভিমুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছে। তদন্ত শেষের আগেই জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তা বলে দিলেন, এটা এক গোষ্ঠীর গোলমাল। আসলে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নির্দোষদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এটা করছে পুলিশ।” পুলিশ প্রকৃত দোষীদের বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে বলেও দাবি অলোকবাবুর।
এ দিন আদালত অবশ্য পল্টুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। পল্টুর চারদিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে বুধবার পল্টুকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। কেন পল্টু ওঝাকে ফের হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে, তা তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিৎ মণ্ডলের কাছে জানতে চান সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডল। তদন্তকারী অফিসার জানান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যে গাড়ি সিজ করা হয়েছে। যে গাড়িতে করে কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ধৃতকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ মিলতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে পল্টুকে আটদিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হয়েছিল। আদালত ধৃতকে চারদিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে পাঠায়।
শেখ মুন্না-সহ ধৃত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তিন কর্মীও জেল হেফাজতে ছিলেন। ১৪ দিনের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে এ দিন তাঁদেরও মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। পল্টুর জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী অলোক মণ্ডল। শেখ মুন্নাদের জামিনের আবেদন জানান অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী। শেখ মুন্না-সহ ওই তিন টিএমসিপি কর্মীর ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।
টিএমসিপির তিন কর্মীর হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে এদিন মৃণালবাবু বলেন, “সবং কলেজে সিপি-টিএমসিপি’র গোলমাল হয়েছে। সিপির একজন মারা গিয়েছে। সিসিটিভি-র ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এখানে নিরপেক্ষ কারা হবে? কলেজের শিক্ষক- শিক্ষাকর্মীরা নিরপেক্ষ। কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। কোর্ট দেখতে পারেন।”
এ দিন আদালতে প্রায় মিনিট কুড়ি ধরে শুনানি চলে। বস্তুত, সবংয়ের ঘটনার পরে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি ছিল, ‘নিজেদের (ছাত্র পরিষদের) মধ্যে গোলমালের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝিয়ে দেন, ঘটনার দায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নয়। ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।
এক ধাপ এগিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ দাবি করেন, ‘‘যে ছ’জনের নামে (ছ’জনই টিএমসিপি- র) অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়নি। ওই ছ’জনকে লাঠি হাতে দেখা যায়নি। একদমই দেখা যায়নি।’’ এখানেই বৈপরীত্য খুঁজে পান বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, পুলিশ সুপারের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তদন্ত অন্য পথে পরিচালিত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। এ দিন পুলিশ সুপারের ওই বক্তব্যের বিষয়টিও আদালতে জানান অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অলোক মণ্ডল। তাঁর দাবি, পুলিশ সুপারের এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তদন্ত কোন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে। সরকারপক্ষের আইনজীবী দীপক সাহা জামিনের বিরোধিতা করে জানান, এটা খুনের মামলা। তদন্ত এখনও চলছে। এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ কোর্ট লক-আপে আনা হয় টিএমসিপি- র শেখ মুন্না, সানোয়ার আলি, অসীম মাইতি এবং সিপি- র পল্টু ওঝাকে। চারজনই দীর্ঘক্ষণ মেঝেতে বসেছিলেন। শুনানির সময় তাঁরা উঠে দাঁড়ান। লক- আপের সামনের দিকে চলে আসেন। কেন এখনও সবং কলেজের অধ্যক্ষ কানাইলাল পড়িয়ার গোপন জবানবন্দি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি, এ দিন সেই প্রশ্নও করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অলোকবাবু।
বস্তুত, টিএমসিপি-র তিন কর্মীর প্রথম পর্যায়ের পুলিশ হেফাজতের পরে নতুন করে তাঁদের আর হেফাজতে চায়নি পুলিশ। বরং সরকারপক্ষের আইনজীবী সেই সময় দাবি করেছিলেন, পুলিশি তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ধৃত তিনজনই পুলিশকে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করেছেন। ফলে, চারদিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে ধৃতদের চোদ্দোদিনের জেল হেফাজত হয়েছিল। পল্টু ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এ দিন তাঁকে ফের আটদিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। সিপি- র দাবি, এখানেও বৈপরীত্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অভিযুক্ত টিএমসিপি কর্মীদের বাঁচাতে পুলিশ অতি-তৎপর। পুলিশের ভূমিকা দেখে মনেই হচ্ছে না যে সবং কলেজে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy