প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
অবসর নেওয়ার এক দিন আগে চাকরি থেকে আপনাকে বরখাস্ত করা হল। বিষয়টিকে কী ভাবে দেখছেন?
এই সিদ্ধান্ত আমার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। দু’বছর ধরেই এই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এর থেকে ভাল কিছু আমি এঁদের থেকে আশা করি না। তবে আমি যেহেতু কোনও দোষ করিনি, তাই আমার কোনও আক্ষেপ নেই। হাইকোর্টে অরুণাভ ঘোষ এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আমার এই মামলা লড়বেন। আইনের উপরে আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
কর্মসমিতি কেন এই সিদ্ধান্ত নিল বলে আপনার মনে হয়?
ব্যক্তিগত প্রতিশোধস্পৃহা রয়েছে এই সিদ্ধান্তে। যদি আমি সত্যিই ভুল করে থাকি, তা হলে তাঁরা কেন আগে সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বা কর্মসমিতির তৎকালীন অন্য সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কিংবা মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে জানাননি।
উপাচার্য হিসেবে আপনার বর্ধিত মেয়াদ যদি অবৈধ হয়, সেক্ষেত্রে কী কী হতে পারে?
আমার সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশ্বভারতীতে আচার্য পদের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্বভারতীতে সপ্তম বেতন কমিশন লাগু হয়েছিল আমার সময়ে। নতুন স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি বা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নিয়োগও আমার সময়ে। আমার মেয়াদ অবৈধ হলে এই সব ক’টি মেয়াদ বৃদ্ধি ও নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়াও সমস্ত বিভাগের প্রধান নির্বাচন, বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি হওয়া নানা কমিটি, সকলের মাইনে, নানা নির্মাণ, সমাবর্তন সবই বাতিল বলে গণ্য হওয়া উচিত।
বর্তমান সময়ে বিশ্বভারতী প্রশাসন যে ভাবে চলছে, প্রাক্তন প্রশাসক হিসেবে তাকে আপনি কী ভাবে দেখছেন?
সবাই বিশ্বভারতীকে যে ভাবে দেখে, আমি সে ভাবে দেখি না। আমি যখন প্রথম এখানে ছাত্রী হিসেবে এলাম, তখন উপাচার্য ছিলেন প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত। সেই সময় বা পরেও দেখেছি ছাত্রছাত্রীদের উপাচার্যেরা নিজের সন্তানের মতো ভালবাসেন, আগলে রাখেন। উপাচার্য অম্লান দত্ত প্রত্যেকদিন সকালে হাসপাতালে যেতেন। যে সব পড়ুয়া ভর্তি থাকতেন, তাঁদের কাছে গিয়ে শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতেন। সেই পরিবেশ এখন হারিয়ে গিয়েছে। এখন মুখে বলা হচ্ছে পরিবারের প্রধান। আর পিছনে শত্রুতা চলছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বড় গাছে ঝড় লাগে। সেটা তাকে সহ্য করতে হয় এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিষয়টিকে দেখতে হয়। সেই ক্ষমার জায়গাটা এখন চলে গিয়েছে।
বিশ্বভারতীর সঙ্গে জড়িতদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, বর্তমানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আপনার মত?
মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে নেই, তা বিশ্বভারতীর সার্কুলারেই স্পষ্ট। সমস্ত কর্মী, অধ্যাপক বা আধিকারিকদের চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও দু’বছর আগে যখন এই অভিযোগ উঠেছিল তখন থেকে আমি কিছুই বলতে পারিনি। কারণ, আমি বিশ্বভারতীর কর্মী ছিলাম এবং উপাচার্যের নির্দেশের অধীনে ছিলাম। আমরা বাইরে বলছি, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’ আর যে সত্যিই যে ভয়-শূন্য চিত্তে কথা বলতে যাবে, তাঁকেই তিনটি তদন্ত কমিটি বসিয়ে কণ্ঠরোধ করে দেব এই পরিস্থিতি চলতে পারে না, একে বদলাতেই হবে। প্রশাসনিক স্তরে অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু, তাকে ব্যক্তিগর স্তরে নিয়ে আসা অনুচিত।
মেলার মাঠ পাঁচিলে ঘেরা নিয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
বিশ্বভারতী চিঠি দিয়ে তো প্রশাসনকে জানিয়েই দিয়েছিল পৌষমেলা বা বসন্ত উৎসবের আয়োজন করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে পাঁচিলের কোনও প্রয়োজন নেই। এমনকি মেলা হলেও পাঁচিলের প্রয়োজন নেই। মেলায় প্রতিদিন লাখো লোকের সমাবেশ হয়। হঠাৎ যদি কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তা হলে পাঁচিল এবং কয়েকটি মাত্র দরজা থাকার জন্য আগুনের তুলনায় পদপিষ্ট হয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হবে। তা ছাড়াও পাঁচিল অনেকক্ষেত্রে আড়ালের কাজ করে, দুষ্কর্ম সহজ হয়ে যায়। পড়ুয়াদের উন্মুক্ত বিচরণকে আটকে দিলে প্রাণশক্তি বিপথেও চালিত হতে পারে।
জীবনের বড় সময়টা বিশ্বভারতীতে কাটিয়ে সীমানায় এসে এমন ব্যবহারে কী মনে হচ্ছে?
আমাকে বিশ্বভারতী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন থেকে নয়। ৫০ বছর একটা প্রতিষ্ঠানে থাকলে তার চরিত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায়। চাকরি জীবনের শেষ দিনে এসে এই সিদ্ধান্তে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। শান্তিনিকেতন মানে শুধু বিশ্বভারতী নয়। শান্তিনিকেতন একটা সংস্কৃতি। একটা সভ্যতা। যা দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির জন্য দিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকে আমাকে কেউ বরখাস্ত করতে পারবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy